ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চামড়া কেনা নিয়ে বিপাকে দিনাজপুরের ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

চামড়া কেনা নিয়ে বিপাকে দিনাজপুরের ব্যবসায়ীরা

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ কোরবানির পশুর চামড়া কেনা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন উত্তরবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম দিনাজপুরের চামড়া বাজারের ব্যবসায়ীরা। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবারে চামড়ার যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি মূল্যে চামড়া কিনতে হচ্ছে। আর চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ পর্যন্ত গত বছরে প্রায় ১৫ কোটি টাকা বকেয়া পরিশোধ করেনি ট্যানারি মালিকরা। যাতে চামড়া কিনতে পুঁজির অভাবের পাশাপাশি নিরুৎসাহিত হচ্ছেন তারা। এতে চামড়া শিল্প ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার একটি বিশাল অংশ আসে চামড়া খাত থেকে। আর প্রতি বছর সিংহভাগ চামড়া সংগৃহীত হয় কোরবানিতে। তাই কোনভাবেই যাতে এ শিল্প ধ্বংসের দিকে না যায় সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। দেশের উত্তরবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার বাজার দিনাজপুরের রামনগর। এখানে দিনাজপুরের রামনগরের চামড়া বাজারে দিনাজপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও নীলফামারী জেলার চামড়া বেচাকেনা হয়। প্রায় দুই শতাধিক ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা চামড়া কিনে ট্যানারি মালিকদের কাছে সরবরাহ করেন। প্রতি বছর এখান থেকে প্রায় ৭০-৭৫ হাজার পিচ গরু ও ৪০-৫০ হাজার পিচ ছাগলের চামড়া বেচাকেনা হয়। যার মধ্যে শুধু কোরবানির সময়েই এ বাজারে প্রায় ৪০ হাজার পিচ গরুর চামড়া ও ২৫ হাজার পিচ ছাগলের চামড়া বেচাকেনা হয়। চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে যেসব চামড়া এই বাজারে আসে, গরুর চামড়া ৭০ টাকা ফুট, খাসির চামড়া ১৪ টাকা ফুট দরে কিনেছেন। চলতি বছরে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস এ্যান্ড ফুটওয়ার এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন লবণযুক্ত গরুর চামড়া ঢাকায় ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ টাকা এবং খাসির চামড়া ২০ টাকা ফুট নির্ধারণ করেছেন। তাদের অভিযোগ, এবার যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা লবণযুক্ত নয়, বরং লবণ ছাড়াই তার চেয়ে বেশি দামে চামড়া কিনতে হয়। পাশাপাশি জেলার প্রায় ২০০ জন চামড়া ব্যবসায়ী ও ফড়িয়া ঢাকা ও নাটোরের চামড়া আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের কাছে গত বছরের কোরবানির চামড়া বাবদ ১৫ কোটি টাকা পাবেন। কিন্তু গত ১ বছরে পাওনার মাত্র ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পরিশোধ করা হয়েছে। পুরোপুরি পাওনা টাকা বুঝে না পাওয়ায় কোরবানির চামড়া কেনার ব্যাপারে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ফড়িয়াদের মাঝে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী সফিকুল ইসলাম ও সেলিম জানান, যেভাবে চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে গত বছরের তুলনায় প্রতি চামড়ার মূল্য প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এরপরও বেশি মূল্যে চামড়া ক্রয় করে লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন তারা। এবারে চামড়ার যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে তারা সন্তুষ্ট নন। তাদের দাবি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীদের মতামত ও বিশ্ববাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই যাতে চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়। যেসব ব্যবসায়ী চামড়া ক্রয় করে ট্যানারিগুলোতে পাঠায় তাদের মধ্যে একজন সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, গত বছরের চামড়া ব্যবসায়ীদের প্রায় ১৫ কোটি টাকা বয়েকা রয়েছে। তার নিজেরও রয়েছে প্রায় ৪০ লাখ টাকার মতো বকেয়া। তিনি জানান, তার পাওনার মাত্র ২৫ শতাংশ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এ টাকা দিয়ে যতটুকু চামড়া ক্রয় করা যায় ততটুকুই ক্রয় করবেন। বাড়তি পুঁজি খাটিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়তে চান না তিনি। চামড়া ব্যবসায়ী তৈয়ব আলী অভিযোগ করে বলেন, আড়তদারদের এহেন আচরণের জন্য চামড়া শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়েছে। আবার মৌসুমী ব্যবসায়ীদের উৎপাতে সমস্যায় পড়েছেন তারা। দিনাজপুর চামড়া ব্যবসায়ী মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আখতার আজিজ জানান, চলতি বছর চামড়ার যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে তার চেয়ে চামড়ার মূল্য অনেক বেশি।
×