স্টাফ রিপোর্টার ॥ রবিবার শরতের সন্ধ্যায় বেজে উঠল বঁাঁশির সুর। শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে ভেসে বেড়াল সুরেলা শব্দধ্বনি। এভাবেই প্রায় ৪০ মিনিটের বাদনে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হলো সাবেক আমলা, লেখক ও সংস্কৃতি অঙ্গনে প্রিয়জন রণজিৎ বিশ্বাসকে। আর তাঁকে স্মরণে বাঁশি বাজিয়ে শোনান ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম। এই বংশীবাদন সন্ধ্যার আয়োজন করে সঙ্গীতবিষয়ক পত্রিকা সরগম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। স্মৃতিচারণ করেন রণজিৎ বিশ্বাসের সহধর্মিণী কবি শেলী সেনগুপ্তা, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেসের উপাচার্য ড. লিয়াকত আলী, চট্টগ্রাম চারুকলা ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ সবিহ্্-উল-আলম। সভাপতিত্ব করেন কবি ও সংসদ সদস্য কাজী রোজী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সরগম সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। গওহর রিজভী বলেন, রণজিৎ বিশ্বাসের সঙ্গে পরিচয় সাত বছর আগে। অতি অল্প সময়ে সে সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ট ও নিবিড় হয়ে যায়। বছর কয়েক আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়ে ফিরে আসার পর সে এত দ্রুত চলে যাবে সেটা কেউ ভাবেনি। রণজিৎ ছিলেন দেশের সবচেয়ে মেধাবী আমলাদের একজন। তার মতো সংস্কৃতিমনা মানুষের চলে যাওয়ায় তিনি হারিয়েছেন বন্ধু, রাষ্ট্র হারিয়েছে অমূল্য সম্পদ।
শেলী সেনগুপ্তা বলেন, রণজিৎকে নিয়ে ভাবা সহজ, বলা কঠিন। ৩৪ বছরের সংসারের কথা বলে শেষ করা যাবে না। শুধু ধারণ করা যায় বুকে। ও ফুল, রঙ ও সুগন্ধি খুব ভালবাসতো। সারাজীবন মাটি, মানুষ ও মানবতার কথা বলেছে। স্বাধীনতার পক্ষে লিখেছে, যার মূল্য দিতে গিয়ে বারবার পড়তে হয়েছে বিপদে। সে আমার ওপর অনেক মানুষের ভালবাসার বোঝা দিয়ে গেছে। তবে সম্পদের কোন বোঝা দিয়ে যায়নি। ওর স্মৃতিকে সঙ্গে নিয়ে এ বাংলায় থাকতে চাই। যে দেশকে আমার স্বামী ভালোবেসেছেন, সে দেশে শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত থাকতে চাই।
সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে শুরু হয় ওস্তাদ আজিজুল ইসলামের বংশীবাদন। শুরুতেই তিনি বাজিয়ে শোনান রাগ শিবরঞ্জনী। বাজান আলাপ, জোর ও ঝালা। এরপর উপস্থাপন করেন ঝাপতাল ও তিনতালে নিবদ্ধ দুটি গৎ। এছাড়াও পরিবেশন করেন মিষ্টি রাগের আশ্রয়ে রাগ সুহেনী। একতাল, মধ্যালয় ও দ্রুত তিনতাল বাজিয়ে তিনি শেষ করেন এই পরিবেশনা। সব শেষে বেশ কিছুক্ষণ মিশ্র ধুন বাজিয়ে অনুষ্ঠানের ইতি টানেন। ওস্তাদ আজিজুল ইসলামের সঙ্গে তবলায় মেহের ও তানপুরায় সঙ্গত করেন জাহাঙ্গীর।
নজরুলের প্রয়াণবার্ষিকীর একক বক্তৃতা ॥ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪০তম প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার একক বক্তৃতার আয়োজন করে বাংলা একাডেমির। সঙ্গে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। বিকেলে একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে একক বক্তৃতা করেন বিশিষ্ট গবেষক ও প্রাবন্ধিক কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল আহসান চৌধুরী।
একক বক্তৃতায় ড. আবুল আহসান চৌধুরী বলেন, রবীন্দ্র-সমকালে নজরুলের বিস্ময়কর উত্থান ও বিকাশ শুধু বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে নয়, বাঙালী জাতির সামগ্রিক ইতিহাসের প্রেক্ষিতেও তাৎপর্যপূর্ণ। সামরিক বাহিনীতে যুক্ততা তাঁর সৃজনশীলতায় এনেছে নতুন মাত্রা। ঠিক তেমনি কমিউনিজমের সঙ্গে সংযোগ তাঁর মননে সাম্যবাদী চেতনার সঞ্চার করেছে। সাহিত্য, সাংবাদিকতা ও রাজনীতি এই তিন ক্ষেত্রে তিনি যে অসাধারণ সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রেখেছেন তা বাঙালী জাতিকে তাঁর কাছে চিরস্মরণীয় করে রাখবে। তিনি বলেন, পূর্ববঙ্গ অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশ ছিল নজরুলের বিশেষ অনুধ্যানের বিষয়। তাই তাঁর কবিতা ও অন্যান্য রচনায় বারবার ফুটে উঠেছে এই অমর বাক্য ‘বাংলার জয় হোক, বাঙালীর জয় হোক’।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, নজরুল প্রবলভাবে জাতীয়তাবাদী এবং আন্তর্জাতিকতাবাদী কবি-শিল্পী। তুরস্ক সালতানাতের ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক ছিলেন নজরুলের নায়ক। একই সঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে গত শতাব্দীর শুরুর দিকে পরিচালিত স্বাধীনতাকামী এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মুসলিম জাগরণের নেতা যেমন সাদ জগলুল পাশা, আমানুল্লাহ, আবদুল করিম ছিলেন নজরুলের কবিতা ও গানের বিষয়।
স্বাগত ভাষণে অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, বাঙালীর দুই শ্রেষ্ঠ সন্তান কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালীর হাজার বছরের স্বাধীনতাকামী আকাক্সক্ষাকে প্রকাশ করেছে বিপুলভাবে।
সাংস্কৃতিক পর্বে নজরুলের কুলি-মজুর কবিতাটি আবৃত্তি করেন মোঃ বেলায়েত হোসেন। নজরুলসঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী প্রিয়াংকা গোপ, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, কমলিকা চক্রবর্তী প্রমুখ।
আবদুল মান্নান সৈয়দ রচনাবলির নজরুলবিষয়ক পঞ্চম খ- প্রকাশ ॥ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের চল্লিশতম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার বাংলা একাডেমি অনু হোসেন সংকলিত ও সম্পাদিত প্রখ্যাত নজরুল গবেষক প্রয়াত আবদুল মান্নান সৈয়দ রচনাবলির পঞ্চম খ- প্রকাশ করেছে। এই খ-ে নজরুল বিষয়ে মান্নান সৈয়দের মৌলিক রচনার পাশাপাশি তাঁর গৃহীত নজরুল বিষয়ক সাক্ষাতকার, নজরুলের বিভিন্ন গ্রন্থের পরিচিতি এবং প্রাসঙ্গিক তথ্যাবলি স্থান পেয়েছে। ৬০৮ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থের মূল্য রাখা হয়েছে ৫০০ (পাঁচশ) টাকা। প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী আনওয়ার ফারুক।
‘মহা নায়ক’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা টঙ্গী থেকে জানান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে জঙ্গীবাদীরা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে দেশকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছে। বর্তমান সরকার তাদের এই অপতৎপরতা বন্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। তিনি রবিবার বিকেলে উত্তরার কামারপাড়া এলাকায় ১৫ আগস্টের এক আলোচনা সভায় ‘মহা নায়ক’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
শীর্ষ সংবাদ: