ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্লাবিত বিস্তীর্ণ এলাকা ॥ প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে পদ্মার পানি

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৭ আগস্ট ২০১৬

প্লাবিত বিস্তীর্ণ এলাকা ॥ প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে পদ্মার পানি

শাহীন রহমান ॥ হঠাৎ করেই ফুঁসে উঠছে পদ্মা নদীর পানি। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এদিকে পদ্মার পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন অঞ্চলের বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মানুষের মাঝে আতঙ্কও দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারত ফারাক্কা বাঁধের গেট খুলে দেয়ায় একযোগে পানি নামছে পদ্মা নদীতে। প্রতি তিন ঘণ্টায় দুই সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। যে গতিতে পানি বাড়ছে তা অব্যাহত থাকলে পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে। ভারতের বিহার রাজ্যে সম্প্রতি অতিবর্ষণে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এরই পরিপেক্ষিতে সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ফারাক্কার সব গেট খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। জানা গেছে, ভারতের ফারাক্কার সব গেট এক সঙ্গে খুলে দেয়ায় দেশে পদ্মার পানি ফুঁসে উঠছে। নতুন করে পানিবন্দী হয়ে পড়ছে মানুষ। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আগামী তিন দিনে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাবে। এরপরই পানি বৃদ্ধি স্থিতিশীল হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, এর প্রভাবে দেশে নতুন করে দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কোন আশঙ্কা নেই। তবে ফারাক্কা গেট খুলে দেয়ার কারণে দেশে পদ্মায় হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পেলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত বিহারের বন্যার কারণে হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে । পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অবশ্য দাবি করেছেন ফারাক্কার সব গেট এই মৌসুমে খোলাই থাকে। তিনি দাবি করেন, আগস্টের শেষ দিকে মূলত পদ্মার পানি বৃদ্ধি পায়। এছাড়া বিহারের বন্যার পানি যোগ হয়ে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পদ্মা নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর প্রধান শাখা গড়াই নদেও পানি বাড়ছে। এর প্রভাবে রাজশাহী অঞ্চল থেকে শুরু করে কুষ্টিয়া-পাবনা অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি বাড়ছে। দৌলতদিয়া উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের ১৮ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে বলে আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গঙ্গা নদীর পানি সমতলে আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। পদ্মায় পানি বৃদ্ধির কারণে পাংখা, রাজশাহী ও হার্ডিঞ্জ পয়েন্টে যথাক্রমে বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার, ২২ সেন্টমিটার ও ২১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর কারণে মহানন্দা নদীর পানি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পয়েন্টে বাড়ছে। তবে এখনও তা বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তারা জানিয়েছেন, পানি বৃদ্ধির কারণে কিছু কিছু নিচু এলাকা হয়ত নতুন করে প্লাবিত হতে পারে। এর প্রভাব সব এলাকায় পড়বে না। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিহারের বন্যার পানি ধেয়ে আসায় হঠাৎ পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পানি আবার কমতে শুরু করবে। এর ফলে দেশে নতুন করে বড় বন্যার কোন সম্ভাবনা নেই। তারা বলেন, যেহেতু এখন ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় পানি কমছে সেজন্য পদ্মার পানি বাড়লে সেটি কোন বড় বন্যা পরিস্থিতির তৈরি করবে না। বাংলাদেশের ভেতরে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার ভেতর দিয়ে সবচেয়ে বেশি পানি প্রবাহিত হয়। সব নদীর পানি যদি এক সঙ্গে বৃদ্ধি পেত তাহলেই কেবল বন্যার আশঙ্কা ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সাধারণত আগস্টের শেষ দিকে গঙ্গার পানি অনেকটা বেড়ে যায়। এ কারণেই পদ্মায় এখন কিছুটা পানি বাড়ছে। এছাড়া বিহারের অধিক বৃষ্টিপাতের কারণে সেখানে বন্যা চলছে। উজানে বন্যার পানি নিচে নেমে আসার কারণে পদ্মার বিভিন্ন অংশে পানি বাড়ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, আজ ও আগামীকাল পদ্মার পানি সমতলে আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে পরশু সোমবার থেকে পানি স্থিতিশীল হয়ে পড়বে। তারপরই কমে আসবে পানি। তিনি বলেন, উজানে ভারি বৃষ্টি ও গঙ্গার পানি বৃদ্ধির কারণে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। উজান থেকে আসার কারণে পানি বাড়ছে। যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রে বর্তমানে পানির প্রবাহ অনেক কমে এসেছে। এ কারণে পদ্মার পানি বাড়লেও তা বন্যায় রূপ নেবে না। পদ্মায় পানি বৃদ্ধির বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। সম্প্রতি ভারতের বিহারে বন্যার কারণে মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ফারাক্কার সব গেট খুলে দেয়ার দাবি জানান। এমনকি নীতিশ কুমার ফারাক্কা বাঁধই তুলে দেয়ার দাবি জানান। তিনি বলেন, ফারাক্কার বাঁধ দেয়ার কারণে বিহার প্রতিবছর বন্যাকবলিত হচ্ছে। বিশেষ করে পলি জমে নদী ভরাট হচ্ছে। এ কারণে নদীতে প্রবাহ কমে যওয়ায় রাজ্যে বড় বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানেও বিহারের বন্যার কারণে লাখ লাখ লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ফারাক্কার সব গেটে খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অবশ্য নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, বিহারের বন্যার কারণেই মূলত পদ্মার এ সময়ে পানি বাড়ছে। তিনি বলেন, ফারাক্কার গেট খুলে দেয়ার সঙ্গে এ পানি বৃদ্ধির কোন সম্পর্ক নেই। বিহারের বন্যার পানি বেরিয়ে যাওয়ার কারণে সাময়িক পানি বাড়ছে। এর প্রভাবে বন্যার কোন আশঙ্কা নেই। তিনি আরও বলেন, এই সময়য়ে সাধারণ ফারাক্কার সব গেট খোলাই থাকে। ফারাক্কা গেট খোলার সঙ্গে এই পানি বৃদ্ধির কোন সম্পর্ক নেই। পানি বেরিয়ে গেলেই আবার কমতে শুরু করবে। তিনি বলেন, পদ্মার কারণে দেশে বন্যা হলে আগে হবে পশ্চিমবঙ্গে। এরপর বাংলাদেশে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ফারাক্কায় গেট রয়েছে মূলত ১০৪। শুষ্ক মৌসুমের জন্য এসব গেট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু বর্ষা মৌসুম এলেই তার গেট উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। বাংলাদেশে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, ভারতের হিসাব অনুযায়ী ১১ লাখ কিউসেক অতিরিক্ত পানির প্রবাহ যদি বাংলাদেশের ভেতরে আসে তাহলে বাংলাদেশ অংশে পদ্মায় পানি বাড়বে কিন্তু বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হবে না। তাদের মতে, যেহেতু এখন ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় পানি কমছে সেজন্য পদ্মার পানি বাড়লে সেটি কোন বন্যা পরিস্থিতির তৈরি করবে না। বাংলাদেশের ভেতরে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার ভেতর দিয়ে সবচেয়ে বেশি পানি প্রাহিত হয়। এদিকে হঠাৎ পদ্মায় পানি বৃদ্ধির কারণে দেশের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানির বৃদ্ধির কারণে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকায় পানি বাড়ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে বলে আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় অফিস। হঠাৎ পানি বৃদ্ধির কারণে পদ্মার তীর এলাকায় অনেক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ১৮ আগস্ট পদ্মায় পানির উচ্চতা ছিল ১৩ দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার। ১৯ আগস্ট ছিল ১৩ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার। ২৫ আগস্ট ছিল ১৩ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার। পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর প্রধান শাখা গড়াই নদেও অব্যাহতভাবে পানি বাড়ছে। পাউবো বলছে, পদ্মা নদী ও গড়াই নদের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও বাঁধগুলোতে নজর রাখা হচ্ছে। এছাড়াও গত এক সপ্তাহ ধরে রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মার পানির উচ্চতা প্রতিদিন প্রায় ১২ থেকে ১৩ সেন্টিমিটার করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। হিমালয় থেকে উৎপন্ন গঙ্গা নদীর প্রধান শাখা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, সেখান থেকে নদীটির নাম হয়েছে পদ্মা। ভাটির দিকে ২৫৮ কিলোমিটার এগিয়ে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দে এসে যমুনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে পদ্মা। সেই মিলিত প্রবাহ পদ্মা নামে আরও ১২০ কিলোমিটার এগিয়ে চাঁদপুরে এসে মেঘনার সঙ্গে মিলেছে। পদ্মা-মেঘনার মিলিত প্রবাহ মেঘনা নামে পৌঁছেছে বঙ্গোপসাগরে। গঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের আগে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলায় ভারতের ফারাক্কা বাঁধ, যা চার দশক ধরে নানা ধরনের পরিবেশ বিপর্যয় ডেকে আনছে বাংলাদেশের জন্য। রাজশাহী পাউবো বলছে, গত ১৭ আগস্ট সকাল নয়টা থেকে শুক্রবার সকাল নয়টা পর্যন্ত পদ্মায় পানির উচ্চতা ১ মিটার ৫৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীতে পানির উচ্চতা পাঙ্খা পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার, রাজশাহী পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ওই তিন পয়েন্টে বিপদসীমার যথাক্রমে ১৭, ২২ ও ২১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হাচ্ছিল পদ্মা। মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী থেকে জানান, ফারাক্কার প্রভাবে রাজশাহীতে পদ্মার পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার একেবারেই কাছে চলে এসেছে। শুক্রবার বিপদসীমার মাত্র ২২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে পদ্মা। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আজকের (শনিবার) মধ্যে বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার অতিক্রম করতে পারে। পদ্মার রাজশাহী অংশে শুক্রবার প্রবাহ ছিল ১৮ দশমিক ২৮ মিটার। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, পানির প্রবাহ এভাবে অব্যাহত থাকলে রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে পড়তে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পশ্চিমবঙ্গের মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও বিহারে বন্যার কারণে ভারত ফারাক্কা বাঁধের সব গেট খুলে দেয়ায় বিপজ্জনক গতিতে পানি বাড়ছে পদ্মা নদীতে। এতে পুরো ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে পদ্মা অববাহিকা ও সংশ্লিষ্ট এলাকা। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, এই গতিতে পানির উচ্চতা বাড়তে থাকলে পদ্মার বিভিন্ন পয়েন্টে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মীর মোশাররফ হোসেন জানান, গঙ্গার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে ভারত ফারাক্কা বাঁধের ১০৬টি গেটের সবই খুলে দিয়েছে। এ কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মার পানির উচ্চতা প্রতিদিন প্রায় ১২ থেকে ১৩ সেন্টিমিটার করে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান তিনি। রাজশাহী পাউবো জানায়, গত ১৭ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত পদ্মায় পানির উচ্চতা ১ মিটার ৫৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীতে পানির উচ্চতা রাজশাহী পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের মীর মোশাররফ হোসেন বলেন, এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে শনিবার রাতে বা পরের দিন বিপদসীমা (১৮ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার) অতিক্রম করতে পারে। এদিকে, ফারাক্কার প্রভাবে পদ্মায় প্রবাহ বাড়তে থাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান জানান, প্রবাহ ১৮ মিটার অতিক্রম করার পর থেকে তারা সতর্কতা জারি করেছেন। এরই মধ্যে রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধের পুলিশ লাইন এলাকা ও বুলনপুরের মাঝামাঝি অন্তত ৫টি পয়েন্টকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছেন। এসব পয়েন্টে তারা লাল পতাকা টাঙিয়ে জনসাধারণকে সতর্ক করছেন। অপরদিকে পানি বৃদ্ধির কারণে হুমকির মুখে পড়েছে রাজশাহী মহানগরীর কয়েকটি এলাকার পদ্মার তীর রক্ষা প্রকল্প কাজ। ইতোমধ্যেই বুলনপুর এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধের নিচে তীর রক্ষা প্রকল্পের চারটি স্থান দেবে গেছে। বালির বস্তা ফেলে মাটি ধরে রাখার চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। এ স্থানগুলো ধসে গেলে শহর রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে পড়বে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্ব¡াবধায়ক প্রকৌশলী মীর মোশাররফ হোসেন জানান, ভারতের বন্যার প্রভাব ও ফারাক্কার গেট খুলে দেয়ার কারণে পদ্মায় হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন প্রায় ১২ থেকে ১৩ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। এদিকে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তলিয়ে যাচ্ছে পদ্মার উভয় তীরের নিম্নাঞ্চল। প্লাবিত হচ্ছে স্থাপনা, বাড়িঘর ক্ষেত খামার। সর্বস্ব হারাচ্ছে তীরবর্তী মানুষ। ভাঙ্গনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পবা উপজেলার হরিপুর ও হরিয়ান ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম। হরিয়ানের দু’টি গ্রাম চর খানপুর ও চর খিদিরপুরের প্রায় সম্পূর্ণ অংশ নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। মধ্যচরেও পানি ওঠায় সেখানকার মানুষ বিপাকে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সাংসদ আয়েনউদ্দিন এসব এলাকা পরিদর্শন করেছেন। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ভাঙনে পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েক শ’ হেক্টর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বিলীন হয়েছে বাংলাদেশ-ভারতের সীমানা পিলারসহ বিভিন্ন স্থাপনা। জানা গেছে, হরিয়ান ইউনিয়নের চর তারানগর, চরখিদিরপুর, দিয়াড় খিদিরপুর, চর তিতামারি, দিয়াড় শিবনগর, চরবৃন্দাবন, কেশবপুর, চর শ্রীরামপুর ও চর রামপুরের সিংহভাগ জমিই পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়েছে। যে টুকু অবশিষ্ট আছে তাও বিলিন হতে বসেছে। পদ্মার ভাঙ্গনে এরই মধ্যে চর তারানগরে ২শ’ ঘরবাড়ি, চারটি মসজিদ, একটি মাদ্রাসা, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দ্বিতল আশ্রয় কেন্দ্র, খানপুর বিজিবি ক্যাম্প এবং আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ১৬৪ ও ১৬৫ বিলিন হয়েছে। এছাড়া পানি বৃদ্ধিতে হরিপুর ইউনিয়নের নবগঙ্গা, বেড়পাড়া ও সোনাইকান্দি এলাকার বাড়িঘর, ক্ষেত খামার তলিয়ে গেছে। এ পারের নি¤œাঞ্চলও প্লাবিত হয়েছে। তালাইমারি, জাহাজঘাট, বড়কুঠি ও বুলনপুর এলাকার অনেক বাসাবাড়িতে পানি উঠেছে। নগরীর কোর্ট এলাকার জিয়ানগর বস্তিও প্লাবিত হয়েছে। এদিকে পদ্মায় আকস্মিক পানি বৃদ্ধিতে নদী দেখতে এখন মানুষ ভিড় করেছেন পদ্মার পাড়ে। শুক্রবার বিকেলে পদ্মা নদীর পাশের বিভিন্ন বিনোদন স্পট ও বাঁধে গিয়ে দেখা গেছে লোকারণ্য। পরিবার পরিজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে মানুষ আসছেন প্রমত্তার পদ্মার রূপ দেখতে।
×