ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কাশ্মীর নিয়ে নয় ॥ পাকিস্তানকে ভারত

সন্ত্রাস নিয়ে কথা হতে পারে

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ২৭ আগস্ট ২০১৬

সন্ত্রাস নিয়ে কথা হতে পারে

ভারত দীর্ঘদিনের কাশ্মীর বিরোধ নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার জন্য পাকিস্তানের দেয়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এটি পরমাণু অস্ত্রসজ্জিত দুটি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলার আরও এক আভাস। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আইজাজ চৌধুরীর কাছে পাঠানো এক চিঠিতে তার ভারতীয় প্রতিপক্ষ এস জয়শঙ্করের বদলে বিরোধপূর্ণ কাশ্মীর উপত্যকায় সীমান্তের উভয় পাশে চলমান সন্ত্রাসী তৎপরতা নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছেন। চিঠিতে জয়শঙ্কর বলেন, পাকিস্তানী ভূখ- থেকে উদ্ভূত সন্ত্রাসী কার্যকলাপই ভারতের উদ্বেগের মূল বিষয়। চৌধুরী ইতোপূর্বে কাশ্মীর নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। খবর এক্সপ্রেস ট্রিবিউন ও হিন্দু অনলাইনের। নয়াদিল্লী আলোচনা প্রশ্নে নিজের অবস্থানকে আরও কঠোর করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের সরকারের কাছে আরেকটি চিঠি পাঠিয়েছে। এতে পাকিস্তান থেকে উদ্ভূত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর বিষয়ে আলোচনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। এ সন্ত্রাস কেবল ভারতকেই নয়, এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশকেও হামলার লক্ষ্যস্থল হিসেবে বেছে নিয়েছে। চৌধুরীর ১৯ আগস্টের চিঠির জবাবে জয়শঙ্করের চিঠিটি ২৩ আগস্ট পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অর্পণ করা হয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার এ খবর নিশ্চিত করে। দু’পক্ষে ১৫-১৬ আগস্টেও ‘জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব মোতাবেক জম্মু ও কাশ্মীর বিরোধ নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আলোচনার জন্য মূল পাকিস্তানী প্রস্তাব সম্পর্কে চিঠি বিনিময় করে। জানা যায়, সর্বশেষ চিঠিতে জয়শঙ্কর একথা পুনর্ব্যক্ত করেন যে, ভারত ২০১৬-এর জানুয়ারিতে সংঘটিত পাঠানকোট বিমানঘাঁটিতে হামলা ও ২০০৮-এর ২৬ নবেম্বরের মুম্বাই হামলার বিষয়ে তদন্তসহ কেবল সন্ত্রাস নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে কথা বলতে রাজি আছে। সেই সঙ্গে পাকিস্তান এর অধিকৃত কাশ্মীর অবিলম্বে ত্যাগ করুক বলেও এক নতুন দাবি যুক্ত করা হয়। জানা যায়, চৌধুরীর চিঠির বিষয়বস্তু উপেক্ষা করে জয়শঙ্কর আভাস দেন যে, পাকিস্তান জম্মু ও কাশ্মীরের যে অংশ দখল করে রয়েছে, ভারত কেবল সেই অংশ নিয়েই কথা বলতে চায়। চৌধুরীর চিঠিতে গত মাসে জম্মু ও কাশ্মীরে আহত লোকজনের চিকিৎসা করতে জাতিসংঘ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের সেখানে যেতে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। সর্বশেষ চিঠিটি দৃশ্যত আগেরকার এক পাকিস্তানী চিঠির প্রতি নয়াদিল্লীর জবাবেরই প্রতিধ্বনি করে। ভারতীয় চিঠিতে বলা হয়, নয়াদিল্লী পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আলোচনায় রাজি আছে, কিন্তু পাকিস্তানের বছাই করা ইস্যুগুলোতে নয়। ১৯ আগস্ট চৌধুরী কাশ্মীর বিরোধের সমাধান খুঁজে পেতে আলোচনার জন্য চলতি মাসের শেষ দিকে ইসলামাবাদ সফর করতে তার ভারতীয় প্রতিপক্ষের প্রতি আমন্ত্রণ জানান। প্রস্তাবটি প্রথমে পাকিস্তান থেকে ১৫ আগস্ট পাঠানো হয়। তখন পররাষ্ট্র সচিব বিরোধপূর্ণ কাশ্মীরে চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে তার ভারতীয় প্রতিপক্ষের কাছে একটি চিঠি লেখেন। দু’দিন পর ভারত ইসলামাবাদের প্রস্তাবের জবাবে আলোচনায় মিলিত হতে ইচ্ছুক বলে জানায়, যদি ভারতীয় কাশ্মীরের সীমান্তের উভয় পাশে চলমান সন্ত্রাসী তৎপরতাকে আলোচ্য বিষয় করা হয়। দু’পক্ষই তাদের নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকে এবং এর ফলে সর্বশেষ পাকিস্তানী প্রস্তাবও অচলাবস্থা কাটাতে পরেনি। বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক নিউজ ব্রিফিংয়ে পাকিস্তানী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাফিস জাকারিয়া বলেন, ভারত সংলাপে না আসতে সব সময়েই অজুহাত দাঁড় করায়। সংলাপই এগিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে ভাল পথ বলে আমরা মনে করি। একটি দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে আমরা এক অর্থবহ, টেকসই ও ফলপ্রসূ সংলাপের মাধ্যমে সব ইস্যু শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান করতে চাই। এক পৃথক ঘটনায় ভারত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার জর্দানের প্রিন্স জেইদ রাদ আল-হুসেইনের কাশ্মীর সফরের প্রস্তাবের প্রতি কড়া ভাষায় জবাব দেয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, জম্মু ও কাশ্মীরের যেসব অংশ অবৈধ দখলে রয়েছে সে সব অংশে মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রসার সমর্থন করতে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উৎসাহিত করে যাব।
×