ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পলি ভরাট ও দখলে বেহাল কর্ণফুলী

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৬ আগস্ট ২০১৬

পলি ভরাট ও দখলে বেহাল কর্ণফুলী

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দেশের অর্থনীতির প্রাণ চট্টগ্রাম বন্দর। আর এ চট্টগ্রাম বন্দরের প্রাণ হচ্ছে কর্ণফুলী নদী তথা কর্ণফুলী চ্যানেল। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট কর্ণফুলী নদী সংলগ্ন এই চ্যানেল প্রতিনিয়ত অচলাবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে। উজান থেকে নেমে আসা পলিমাটি পুরো নদী এলাকাকে গ্রাস করতে করতে বর্তমানে বন্দরের ১ নম্বর জেটি অতিক্রম করে ভাটির দিকে অর্থাৎ বন্দরের মূল জেটিগুলোর দিকে এগুচ্ছে। এদিকে, ২২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ যে ক্যাপিটাল ড্রেজিং শুরু করেছিল সে ড্রেজিংয়ের ঠিকাদার পালিয়ে গিয়ে উল্টো মামলা ঠুকে দিয়ে এ কার্যক্রমকে থমকে দিয়েছে। দীর্ঘদিন আদালতে লড়াই চালিয়ে ঠিকাদারের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ অবস্থায়ও ড্রেজিংয়ের কোন নাম নিশানা নেই। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ড্রেজিং কাজ শুরু হবে বলে সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, এ অবস্থায় কর্ণফুলী নদী সংরক্ষণ প্রশ্নে উচ্চ আদালতে জারিকৃত রুলের শুনানি সমাপ্ত হওয়ার পর আজ ১৬ আগস্ট (মঙ্গলবার) রায়ের দিন ধার্য রয়েছে। আশা করা হচ্ছে আদালত কর্ণফুলী নদী রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়ে জনস্বার্থে রায় দেবেন। কর্ণফুলী নদী সংরক্ষণে নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে এ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ। উল্লেখ্য, কর্ণফুলী নদী ব্যাপকভাবে সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি এর তলদেশের গভীরতা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। যে কারণে ১ নম্বর জেটির বহু আগ থেকে পণ্যবাহী কোন জাহাজ উজানমুখী হতে পারে না। এছাড়া নদীর দু’পাশ ঘিরে এমনিতেই রয়েছে অবৈধ বাহারি স্থাপনা। এছাড়া মেরিন ড্রাইভ করে বিশাল আকৃতির দুটি সড়ক নির্মাণ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। বন্দরের সড়কটি নির্মিত হয়ে উদ্বোধন হয়ে গেছে। যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্তও করা হয়েছে। এর পাশাপাশি চসিকের আরেকটি অনুরূপ সড়ক বর্তমানে নির্মাণাধীন। ফলে কর্ণফুলী নদীর প্রায় ২শ’ গজ এলাকা কমে গেছে। যে কারণে ইতোপূর্বেকার চাইতে এ নদী এখন বড় ধরনের একটি খালে রূপ নিয়েছে। এ অবস্থায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা ও অদূরদর্শিতার কারণে প্রতিনিয়ত নদীর যত্রতত্র চর সৃষ্টি হচ্ছে। উজান থেকে প্রতিনিয়ত ভাটির টানে পলিমাটি আসার প্রেক্ষাপটে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। সূত্র জানায়, এমনিতেই শহর অভ্যন্তর থেকে সাগরে পতিত নদীগুলো ভরাট হয়ে সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রাম মহানগরীর অবস্থা করুণ হয়ে যায়। বর্তমানে বৃষ্টি ছাড়াও জোয়ারে পানি শহর এলাকায় প্রবেশ করছে। ফলে বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকা, আবাসিক এলাকা সাগরের লোনা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই, আছাদগঞ্জ, কোরবানিসহ সন্নিহিত বিস্তীর্ণ এলাকা। এর একমাত্র কারণ কর্ণফুলী নদী ক্রমাগতভাবে ভরাট হয়ে যাওয়া। ইতোপূর্বে ভরাট প্রক্রিয়া প্রতিরোধে বন্দর কর্তৃপক্ষ যে সব আয়োজন করেছিল সবই ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি ২২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে যে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের জন্য ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়েছিল। তারা ১৬৫ কোটি টাকা রানিং বিল নিয়ে পালিয়ে যায়। এর ফলে বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের দফায় দফায় নোটিস দিয়ে কোন উত্তর না আসায় ঠিকাদারি কাজ বাতিল করে দেয়। এ বাতিলাদেশের বিরুদ্ধে ঠিকাদার এমএমডিজি উচ্চ আদালতে রিট মামলা করলে আদালত বাতিলাদেশের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ প্রদান করেন। বন্দর কর্তৃপক্ষ এ আদেশের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় লড়াই চালিয়ে তা বাতিল করাতে সক্ষম হয়। ফলে এখন নতুন করে ড্রেজিং কাজ শুরু করার ক্ষেত্রে আর কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। সম্প্রতি বন্দর চেয়ারম্যান এ ব্যাপারে অচিরেই কাজ শুরু করার ঘোষণা দিয়েছেন। অনুরূপ ঘোষণা দিয়েছেন চসিক মেয়র আ জ ম নাছিরও। অপরদিকে জনস্বার্থে হাইকোর্টে কর্ণফুলী নদী রক্ষায় যে রিট মামলা করা হয়েছে তার শুনানি সম্পন্ন করার পর আজ ১৬ আগস্ট রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে। বিচারপতি মোঃ রেজাউল হাসান ও বিচারপতি কাশেফা হোসেনের ডিভিশন বেঞ্চে। এর আগে আদালত এ বিষয়ে রুল জারি করে। রুলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনকে অবৈধ স্থাপনা তালিকা পেশের নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া কর্ণফুলীর সীমানা চিহ্নিত করতে বলা হয়। গত ৯ আগস্ট এ সংক্রান্ত মামলার রুলের চূড়ান্ত শুনানি সম্পন্ন হয়। রায় প্রদানের দিন ধার্য হয় ১৬ আগস্ট।
×