ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যমুনায় নাব্যতা সঙ্কট: ধারণক্ষমতার অর্ধেক মাল নিয়ে জাহাজ বাঘাবাড়ী ভীড়ছে

প্রকাশিত: ২৩:০২, ১৬ মে ২০১৬

যমুনায় নাব্যতা সঙ্কট: ধারণক্ষমতার অর্ধেক মাল নিয়ে জাহাজ বাঘাবাড়ী ভীড়ছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা ॥ বেড়ার মোহনগঞ্জ থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত যমুনা নদীতে নব্যতা সস্কটে রাসায়নিক সার, ক্লিংকার ও জ্বালানী তেলবাহী জাহাজ ধারণক্ষমতার অর্ধেক মাল নিয়ে বাঘাবাড়ী রিভারাইন অয়েল ডিপো ও নৌ-বন্দরে আসছে। আবার জাহাজগুলো একইভাবে অর্ধেক মাল নিয়ে বাঘাবাড়ী বন্দর থেকে ছেড়ে যাচ্ছে। এদিকে বিআইডাব্লিউটিএ ড্রেজিং স্পয়েল নদীতে ফেলায় ¯্রােতের টানে ভাটিতে পলি জমে আবারো ডুবো চরের সৃষ্টি হচ্ছে। তাই নাব্যতা সঙ্কট দুর না হয়ে আরো তীব্র হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় জ্বালানী তেল ও রাসায়নিক সার চাহিদার ৯০ ভাগ বাঘাবাড়ী রিভারাইন অয়েল ডিপো ও নৌ-বন্দর থেকে যোগান দেয়া হয়। এখান থেকে প্রতিদিন ২৭ লাখ লিটার জ্বালানী তেল ও হাজার হাজার বস্তা রাসায়নিক সার সরবরাহ করা হয়। নাব্যতা সঙ্কট দ্রুত নিরসন না হলে এ অঞ্চলে সেচ নির্ভর বোরো আবাদ ব্যাহত হতে পারে বলে বন্দর কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন । বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাবনা হাইড্রোলজি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে আসা ব্রক্ষপুত্র ও তিস্তা নদীর প্রবাহ একসঙ্গে ধারন করে যমুনা নদী বিশাল জলরাশি নিয়ে বির্স্তীর্ণ জনপদের ভেতর দিয়ে প্রবাহমান ছিল। কিন্তু ভারত তিস্তা ও ব্রক্ষপুত্রে নদে বহুসংখ্যক জলবিদ্যুৎ ও সেচ প্রকল্প নির্মাণ করে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রন করছে। এদিকে গত ক’দিন ধরে অপ্রত্যাশিতভাবে তিস্তার পানি প্রবাহ এক হাজার কিউসেকে নেমে এসেছে। ফলে যমুনা নদীতে নাব্যতা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তিস্তা নদীতে পানি প্রবাহ না বাড়লে যমুনায় নাব্যতা সঙ্কট আরো প্রকট আকার ধারণ করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। বাঘাবাড়ি নৌবন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, স্বাভাবিক ভাবে রাসায়নিক সার ও পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য নদীতে ১০ ফুট পানির গভীরতা প্রয়োজন। বাঘাবাড়ী থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার নৌ-পথের মোহনগঞ্জ, পেচাকোলা, হরিরামপুর, কল্যাণপুর, চরসাফুল¬া, চরশিবালয়, নাকালী ও রাকশাসহ ১০টি পয়েন্টে পানির গভীরতা কমে ৭ থেকে ৮ ফুটে দাড়িয়েছে। সরু হয়ে গেছে নৌ-চ্যানেল। যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিআইডবি¬উটিএ ড্রেজিং করে পলি নদীতেই ফেলছে। ফলে স্রোতের টানে পলিমাটি ভাটিতে গিয়ে আবারো ডুবো চরের সৃষ্টি হচ্ছে। বাঘাবাড়ী বন্দরমূখী রাসায়নিক সার ও জ্বালানী তেলবাহী জাহাজ মাঝেমধ্যেই যমুনার ডুবোচরে আটকা পড়ছে। আটকে পড়া জাহাজের রাসায়নিক সার, ক্লিংকারসহ অন্যান্য পণ্য অর্ধেক খালাস করে ছোট ছোট নৌকায় করে বাঘাবাড়ী বন্দরে আনা হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের জাহাজ প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। একারণে বাঘাবাড়ি বন্দরের মালামাল পরিবহনে জাহাজ মালিকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। বাঘাবাড়ি বন্দরমুখি এম,ভি জুগর্ডেনের মাষ্টার হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, দৌলতদিয়া থেকে বাঘাবাড়ী নৌবন্দর পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার নৌপথের ১১টি পয়েন্টে পানির গভীরতা কমে দাড়িয়েছে ৭ থেকে ৮ ফুট। সরু হয়ে গেছে নৌচ্যানেল। পেচাকোলা পয়েন্টে জ্বালানী তেলবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ পয়েন্টে দুটি জাহাজ পাশাপাশি চলাচল করতে পারছে না। ওই পয়েন্টে জেগে উঠা চরের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় দিনদিন চ্যানেলটি আরো সরু হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত ড্রেজিং না করা হলে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেছেন। বিআইডব্লিউটিএ আরিচা অফিসের উপ-পরিচালক জয়নাল আবেদীন জানিয়েছেন, বছরের এসময়ে দৌলতদিয়া থেকে বাঘাবাড়ী পর্যন্ত ৪৫ কিঃ মিঃ নৌ-পথে প্রতি বছরই নাব্যতা সঙ্কট দেখা দেয় । বর্তমানে এ রুটে ৭ থেকে ৮ ফুট পানির গভীরতা রয়েছে। নৌ-চ্যানেল সচল রাখার জন্য যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ড্রেজিং শুরু হয়েছে। ড্রেজিং করার পর যমুনা নদীর স্রোতে পলি পড়ে ডুবোচরগুলো আগের স্থানে ফিরে গেছে। তিনি আরো জানান, বাঘাবাড়ী নৌ-রুটে ৬ থেকে সাড়ে ৬ ফুট ড্রাফটের জাহাজ চলাচলের জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু জাহাজগুলো অতিরিক্ত মালামাল বহন করায় ডুবোচরে আটকা পড়ছে। এছাড়া যমুনা ও হুড়াসাগর নদীর মিলনস্থলে ডুবোচর জেগেছে। ফলে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় নাবাত্যা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। যমুনা সেতুর ভাটি থেকে নগরবাড়ী পর্যন্ত যমুনা নদী ক্যাপিটাল ড্রেজিং না করা হলে এই সঙ্কট নিরসন সম্ভব নয় বলে তিনি জানান। বিপিসি’র বাঘাবাড়ী রিভারাইন অয়েল ডিপোর যমুনা কোম্পানির ডেপুটি ম্যানেজার মোঃ আব্দুল মজিদ জানিয়েছেন, বাঘাবাড়ীতে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তিনটি তেল কোম্পানির ডিপোতে পর্যাপ্ত পরিমান জ্বালানী তেল মজুদ আছে। আরো প্রায় এক কোটি লিটার ডিজেল ভর্তি ১৯টি জাহাজ বন্দরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে এসেছে। নাব্যতা সঙ্কটে জাহাজগুলো অর্ধেকলোড বাঘাবাড়ী ডিপোতে আসছে।
×