রহিম শেখ ॥ বিনিয়োগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার। সেই বাধা ক্রমেই শিথিল হচ্ছে। সর্বশেষ মার্চ মাসে ঋণের ক্ষেত্রে সুদহার কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আগের মাসেও যা ছিল ১০ দশমিক ৯১ শতাংশ। দীর্ঘদিন ধরে ঋণের সুদহার ‘সিঙ্গেল ডিজিটে’ নামিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানতের সুদহার মার্চ মাসে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা থাকলেও সরকারী, বেসরকারী ও বিদেশী ২৪ ব্যাংকের স্প্রেড এখনও ৫ শতাংশের ওপরে রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্প্রেড রয়েছে বেসরকারী খাতের ব্র্যাক ব্যাংকের। এরপরে রয়েছে বিদেশী খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মার্চ মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ঋণের ক্ষেত্রে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ হারে সুদ আদায় করেছে। আমানতের বিপরীতে দিয়েছে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ সুদ। স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৮৬ শতাংশীয় পয়েন্ট। বিশেষায়িত ব্যাংকের স্প্রেড সবচেয়ে কম মাত্র ২ দশমিক ২ শতাংশীয় পয়েন্ট। আমানতের বিপরীতে দিয়েছে ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ সুদ। এই খাতের ব্যাংকগুলোর ঋণের ক্ষেত্রে ভারিত গড় সুদহার ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ দাঁড়িয়েছে। মার্চ মাসে বেসরকারী ব্যাংকগুলো ঋণের ক্ষেত্রে ১১ দশমিক ১৪ শতাংশ হারে সুদ আদায় করেছে। আমানতের বিপরীতে দিয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ সুদ। স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৯ শতাংশীয় পয়েন্ট। বিদেশী ব্যাংকগুলো আমানতের বিপরীতে ২ দশমিক ১৯ শতাংশ সুদ দিয়ে ঋণের বিপরীত আদায় করছে ৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ সুদ। এ খাতের ব্যাংকগুলোর স্প্রেড সবচেয়ে বেশি ৭ দশমিক ৩৪ শতাংশীয় পয়েন্ট। তবে ঋণ ও আমানতের সুদের হার (স্প্রেড) ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের মধ্যে রাখার নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না ২৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। এর মধ্যে ১টি সরকারী, ১৭টিই বেসরকারী ও ৬টি বিদেশী ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি স্প্রেড রয়েছে বেসরকারী খাতের ব্র্যাক ব্যাংকের। ব্যাংকটির স্প্রেড ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এরপরে রয়েছে বিদেশী খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের। ব্যাংকটির স্প্রেড ৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ঋণ ও আমানতের সুদের হারের ব্যবধানের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে বেসরকারী খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। তাদের এই ব্যবধান ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ওয়ান ব্যাংকের স্প্রেড ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। চতুর্থ অবস্থানে থাকা আইএফআইসি ব্যাংকের স্প্রেড ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। পঞ্চম অবস্থানে থাকা ইস্টার্ন ব্যাংকের ৫ দশমিক ৫১ শতাংশ। অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে ঢাকা ব্যাংকের ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ, সিটি ব্যাংকের ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ, পূবালী ব্যাংকের ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ, উত্তরা ব্যাংক ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, এক্সিম ব্যাংকের ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, প্রিমিয়ার ব্যাংক ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, ব্যাংক এশিয়া ৫ দশমিক ২ শতাংশ। নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের স্প্রেড ৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ, এনআরবি ব্যাংক ৬ দশমিক ৬ শতাংশ, মধুমতি ব্যাংকের স্প্রেড ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ ও মেঘনা ব্যাংকের ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। বিদেশী ব্যাংকগুলোর মধ্যে বর্তমানে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের স্প্রেড ৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ, সিটি ব্যাংক এন, এর ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ, এইচএসবিসি ব্যাংকের ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ, উড়ি ব্যাংক ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ, স্টেট ও কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনের ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। উল্লেখ্য, শতাংশ থেকে শতাংশের মধ্যে কম-বেশির তুলনা করতে শতাংশীয় পয়েন্ট ব্যবহার করা হয়। যেমন ৫ শতাংশ থেকে কমে ৩ শতাংশ হলে এটি ২ শতাংশীয় পয়েন্ট কমল বলে বিবেচিত হবে।
ঋণ ও আমানতের গড় সুদহার ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ
স্প্রেড নির্দেশনা মানছে না ২৪ ব্যাংক
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: