ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পাবলিক টয়লেট উদ্বোধন

উন্নয়ন কাজে পর্যাপ্ত জমি না পাওয়াই বড় বাধা ॥ মেয়র আনিসুল

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৯ এপ্রিল ২০১৬

উন্নয়ন কাজে পর্যাপ্ত জমি না পাওয়াই বড় বাধা ॥ মেয়র আনিসুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় আধুনিক পাবলিক টয়েলেট নির্মাণ, ময়লা ফেলার স্থান ও বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের মতো উন্নয়ন কাজ করতে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্থান না পাওয়াই বড় বাধা বলে মন্তব্য করেছেন সেবাদানকারী সংস্থাটির মেয়র আনিসুল হক। সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে স্বাস্থ্যসম্মত দু’টি আধুনিক পাবলিক টয়লেটের উদ্বোধনকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। নতুন অরও ১০০টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় স্থান বরাদ্দ দিতে তিনি সমাজের সকল শ্রেণীর নাগরিকদের কাছে সহায়তা কামনা করেন। পাবলিক টয়লেটের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ঢাকা ওয়াসা এবং ওয়াটার এইডের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা চুক্তির ধারাবাহিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে টয়লেট দু’টি স্থাপন করা হয়েছে। নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে তেজগাঁও সাতরাস্তা টি এ্যান্ড টি গেট এবং হাজী মরণ আলী সড়কে পাবলিক টয়লেট দুটি তৈরি করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে বদলে যাবে ঢাকা। সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে। রাজধানীতে ১০০ পাবলিক টয়লেটের মধ্যে চারটি তৈরি হয়েছে, ১৪টির কাজ চলছে এবং অন্যগুলো প্রক্রিয়াধীন। কিন্তু পাবলিক টয়লেট নির্মাণের ক্ষেত্রে স্থান বড় বাধা। এ সময় তিনি কাউন্সিলরদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা জায়গার সন্ধান দিন। অনেক সরকারী জায়গা আছে যেগুলো আমরা জানি না। সেসব স্থানে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে। আমরা ডিএনসিসি এলাকায় নাগরিকদের সুবিধার্থে অধিক পরিমাণ পাবলিক টয়লেট নির্মাণে পেট্রোল পাম্পের মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। মেয়র বলেন, পাবলিক টয়লেট সমাধানের জন্য ৮৬টি পেট্রোল পাম্পের মালিকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ওনাদের সঙ্গে মিটিং করেছি, ওনাদের রিকোয়েস্ট করেছি, যে ওনাদের পাম্পের ভেতরে যে টয়লেটটি আছে সেটি যেন আমরা মানসম্মতভাবে তৈরি করে দিতে পারি। তবে এখনও ওনারা সেভাবে সাড়া দেননি। হয়তো ভেবেছেন, আমরা ভুলে গেছি। আমরা মেয়র অফিস সেটা ভুলিনি। আমরা যেন সেটা তৈরি করে দিতে পারি সেজন্য সহায়তা চাই। তিনি যত্রতত্র ময়লা ফেলা ঠেকাতে পরিকল্পনা করেও উত্তর ঢাকায় ৭২টি ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণের জন্য জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে নগরবাসীর সহযোগিতা চান। এছাড়া ১০ থেকে ১৫টি জায়গার প্রয়োজন। আমাদের দেখিয়ে দেন কোথায় সরকারী জমি, খাসজমি দখলে আছে বা পড়ে আছে। আমরা সেখানে পাবলিক টয়লেট বা বর্জ্য স্টেশন নির্মাণ করব। তেজগাঁওয়ের রাস্তা থেকে ট্রাক স্ট্যান্ড সরাতে আলাদা টার্মিনাল নির্মাণের জন্য কাজও জায়গার অভাবে আটকে আছে। আনিসুল হক বলেন, ওয়াটার এইডের সহায়তায় ইতোমধ্যে ঢাকা শহরে আধুনিক মানের ৪টি টয়লেট নির্মাণকাজ শেষ করেছি ও ১৪টির নির্মাণকাজ চলছে। এসব টয়লেট এতো সুন্দর যে এরকম টয়লেট আমার-আপনার বাড়িতেও নাই। আমার মনে হয়, দেশ যারা চালান-প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে এত সুন্দর টয়লেট নাই। সবার উদ্দেশে তিনি বলেন, ঢাকা শহরে যেখানে জায়গা দেন, আমরা এই মানের টয়লেট করে দেব। কিন্তু মেনটেইন করতে হবে আপনাদের। আপনাদের জায়গা, আপনার বাড়ি যে রকম এটাকেও আপনার বাড়ি মনে করবেন। বিভিন্ন স্থানে গাছ কাটা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের কিছু কিছু সেক্রিফাইস করতে হচ্ছে। একটি গাছের জায়গায় কমপক্ষে ৪টি গাছ লাগাব বলে আমরা প্ল্যান করেছি। ৩ লাখ ২৫ হাজার গাছ আগামী ২ বছরের মধ্যে লাগানো হবে। সেই কাজ আমাদের শুরু হয়ে গেছে। ডিএনসিসি মেয়র বলেন, পাঁচ মাস আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী এর মধ্যে ঢাকায় নিরাপত্তার জন্য ৩০০টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর কাজ শেষ হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে ৬০০ ক্যামেরা বসে যাবে। আর চার মাসের মধ্যে অর্ধেক ঢাকা সিসি ক্যামেরা মধ্যে চলে আসবে, ১২শ’ ক্যামেরা বসবে। অনুষ্ঠানে ঢাকায় সুইডেনের রাষ্ট্রদূত জোহান ফ্রিসেলের বাংলা ও ইংরেজী মেশানো বক্তব্য সবার মনোযোগ কাড়ে। ভাঙ্গা বাংলায় তিনি বলেন, এই ধরনের টয়লেট চারটি কারণে দরকার। জনস্বাস্থ্যের জন্য, লিঙ্গ সমতার জন্য, মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য এবং শহরের সৌন্দর্য রক্ষার জন্য। এরপর তিনি ইংরেজীতে বলেন, আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন এই টয়লেটগুলোতে পুরুষ ও নারীর জন্য আলাদা স্থান তৈরি করা হয়েছে। তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে তারা টয়লেট ব্যবহার করতে যাবে কি যাবে না, সেই আতঙ্কে না ভোগে। নগরীতে মানসম্মত টয়লেট বানানোর পরিকল্পনায় ওয়াটারএইড আরও সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন রাষ্ট্রদূত। বৈশ্বিক উন্নয়ন সংস্থা ওয়াটারএইড এবং সুইডিশ কোম্পানি এইচএ্যান্ডএম কনশাস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় সিটি কর্পোরেশন এই টয়লেট দুটি নির্মাণ করেছে, ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসের। সরেজমিনে দেখা গেছে, নবনির্মিত টয়লেট দুটি নারী ও প্রতিবন্ধীবান্ধব। এতে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা চেম্বার, লকার ও হাত ধোয়া, গোসল করা, বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা, ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুত সংযোগ ঠিক রাখা ও সিসি টিভির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া টয়লেট দুটি পরিষ্কারের জন্য পরিচ্ছন্নকর্মী তো রয়েছেই। অনুষ্ঠানে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, গাবতলীতে একটি পাবলিক টয়লেট করার পর আমরা দেখেছি, চাইলে এটাকে টেকসই করা সম্ভব। আধুনিক এই টয়লেট ব্যবহারের জন্য মানুষকে কিছু অর্থ খরচ করতে হবে এবং সেটা ঠিক রাখার জন্য কাজ করতে হবে। আমরা আউট অব বক্স উন্নয়ন পরিকল্পনার আওতায় আনতে চাই। সমস্ত বস্তিবাসীকে আমরা বৈধ পানির লাইনের আওতায় আনার কাজও করছি। অনুষ্ঠানে ডিএনসিসির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সফিউল্লার সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহ উল ইসলাম, ওয়াটার এইডের আঞ্চলিক প্রধান থেরেস মোহন ও বাংলাদেশ প্রতিনিধি খায়রুল ইসলাম, সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নাজমুন নাহার হেলেন, ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন বিপন কুমার সাহা উপস্থিত ছিলেন।
×