ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাভেদ বিন এ হাকিম

দেখার মাঝেও শেখার আছে

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

দেখার মাঝেও শেখার আছে

বর্তমান তরুণ সমাজের মাঝে ভ্রমণের নেশাটা বেশ জেঁকে বসেছে যা দেশ ও জাতির জন্য এক আলোকিত বার্তা। কোন একটা সময় সমাজ সংসার ভ্রমণটাকে বিলাসিতা ভাবত। এখন কিন্তু তা নয়, মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টেছে সেইসঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে ভ্রমণ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা আর এর মূলে রয়েছে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার এক দল কর্মীর নিরলস প্রচেষ্টা। যারা তাদের ফিচার আয়োজনগুলোতে বিশেষভাবে ভ্রমণ সম্পর্কে দর্শক ও পাঠকদের জন্য বিভিন্ন আগ্রহমূলক গল্প প্রকাশ এবং প্রতিবেদন তুলে ধরে। যার ফলে এখন তরুণদের ছাপিয়ে নানা বয়সের মানুষের মনেও সুযোগমতো ভ্রমণে যাবার দুর্নিবার আকর্ষণ সৃষ্টি হয়েছে। এখন আসি মূল প্রসঙ্গে দেখতে গিয়ে শেখা আমরা যারা ভ্রমণ করতে ভালবাসি তাদের সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে ভ্রমণে যাবার জায়গা যেমন নতুন কিছু খুজি ঠিক তেমনি করে নতুন পরিবেশে গিয়ে ভাল কিছু শেখার যেন চেষ্টা করি। প্রতিটি রাষ্ট্র, মহানগর, জেলা গ্রাম যেখানেই যাই না কেন সেখানকার প্রকৃতি ও পরিবেশ এবং মানুষের কাছ থেকে শেখার রয়েছে অনেক কিছু। পাহাড়ে যখন যাবেন তখন দেখবেন আদিবাসী মানুষগুলো কত কষ্ট করে তাদের যাপিত জীবন পার করছে এর পরেও তাদের মাঝে রয়েছে শৃঙ্খলতা অধ্যাবসায় নিয়মানুবর্তিতা যা আমাদের সভ্য সমাজেও অনেকটা অনুপস্থিত। আমি একবার গহীন পাহাড়ের এক পাড়াতে বন্ধুরা মিলে মজাদার খাবার খাচ্ছি ঠিক তার পাশেই ছিল বেশ কয়েকজন শিশু পরবর্তিতে জানতে পেরেছিলাম তারা ছিল অভুক্ত কিন্তু এর পরেও শিশুরা আমাদের দিকে তেমন করে ফিরেও তাকায়নি যা আমাকে সত্যিই আপ্লুত করার পাশাপাশি অন্যকে বিরক্ত না করার শিক্ষা দিয়েছে। পাহাড়ীদের দেখবেন কঠোর পরিশ্রমের পরেও দিন শেষে যখন রাতে ঘুমায় তখন নারী-পুরুষ সবাই আবার খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে যে যার মতো কাজে চলে যায়, কোন অলসতা বা অতি নিদ্রা নয় অথচ আমরা? তাই এখানেও শেখার আছে সময়ানুবর্তিতা পালনের। ভ্রমণের পাশাপাশি নতুন কিছু দেখার সঙ্গে সঙ্গে ভাল কিছু শেখার মধ্য দিয়ে নৈতিক চরিত্র উৎকর্ষতারও যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। ভ্রমণের স্থান কোন আল্লাহওয়ালা ব্যক্তির দরবারও হতে পারে যেখান থেকে শেখা যাবে ধর্মীয় রীতিনীতি। লাভ করা যাবে আত্মশুদ্ধি। ভ্রমণপিপাসুরা নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী যেতে পারেন তাদের উপাসনালয়ে, শিখতে পারবেন নিজেকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলার দীক্ষা, কারণ প্রত্যেক ধর্মেই রয়েছে সৎ কাজের আদেশ আর অসৎ কর্ম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ। ভ্রমণ শুধু হৈ-হুল্লোর আর ভূরিভোজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে শেখার জন্যও মানসিকতা রাখতে হবে। অনেকেরই ধারণা ভ্রমণে আবার শিখার কি আছে! ভ্রমণ মানেই হলো জাগতিক সুখে সেই সময়টুকু ডুবে থাকা। যা এক সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। জীবনে স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে হলে ভ্রমণই হলো একমাত্র পন্থা যেখান থেকে অনেক কিছু শেখা যায়। খুব কাছের বন্ধুকেও ভালভাবে তার আচরণ সম্পর্কে জানতে হলে ভ্রমণসঙ্গী করে নেও। ইসলাম ধর্মে ভ্রমণ করা সুন্নত। বন্ধুরা নিশ্চই বুঝতে পারছেন ভ্রমণের গুরুত্ব। কনকনে শীতে যখন হাওড় বা বিলে যাবেন তখন দেখবেন জেলেরা কত সকালে ধনী বাবুদের রসনা মিটানোর জন্য বুক সমান পানিতে নেমে আছে মাছ ধরার জাল নিয়ে। কৃষকরা ক্ষেতে ধান কাটা কিংবা বীজ বুনে যায়। অথচ আমরা সুযোগ পেলেই চাষা জাউল্লা বলে তাদের উপহাস করি। এই জেলে চাষীরা যদি এই কাজ না করত তাহলে কি আমাদের ডাইনিংয়ে মজাদার মাছের পেটি ও সুগন্ধিযুক্ত চালের ভাত শোভা পেত? এগুলো দেখে শিখতে হবে, কথায় কথায় গ্রাম থেকে আসা সহজ সরল মানুষটাকে চাষার ছেলে বলে গালি বা উপহাস করা এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। যখন কোন উন্নত রাষ্ট্রে যাবেন তখন দেখবেন সেখানকার মানুষগুলো কত ব্যস্ত অথচ ফাঁকা রাস্তায়ও লাল বাতি জ্বলার সময় গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। যেখানে-সেখানে আবর্জনা না ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলছে। তাদের প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় জনগণ কতটা আন্তরিক। অন্যের কষ্ট কিংবা অসুবিধা হয় এমন কাজ হতে তারা থাকে সর্বদা সতর্ক। বন ধ্বংস, পাহাড় কাটা, নদী ভরাট এগুলোতো করা দূরে থাক তারা বিশেষ কারণে গাছের একটি ডাল কাটার আগেও ভেবে নেয় কয়েকবার। আমরা যখন বিদেশে ভ্রমণ করতে যাব তখন এই সব বিষয়গুলো শিখে এসে নিজ দেশে নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিফলনের চেষ্টা করব। দেশে এসে বৃক্ষ কাটার চাইতে নতুন চারা রোপণে উৎসাহিত হব। ভ্রমণে গিয়ে আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেখা যায তা হলো সভ্যতা ভদ্রতা। একাডেমিক শিক্ষা অর্জন করে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করা যাবে কিন্তু আদব শ্রদ্ধা মার্জিত কথোপকথন রপ্ত করতে হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণে গিয়ে শিখতে হবে আর যাদের বিদেশ ভ্রমণের সামর্থ্য নেই তারা চলে যান বাংলাদেশের পাহাড়ী অঞ্চলের গভীরে যেখানে এখনও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি অথচ তাদের কাছ থেকে শেখার রয়েছে সততা, ভদ্রতা ও একাগ্রতা। পৃথিবীর যে প্রান্তেই ভ্রমণে যান না কেন জাগতিক আনন্দর চাইতে ভাল কিছু শেখার আগ্রহ রাখুন আপনার ধ্যানে মনে। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শেখার শেষ নেই। পরিশেষে আমাদের সেøাগান হোক ‘ভ্রমণের পাশাপাশি শেখার আছে... সেই শেখার বাস্তবায়নে ব্যক্তি ও সমাজের উন্নয়ন রয়েছে।’ ছবি : আরিফ আহমেদ মডেল : বাঁধন ও তার মেয়ে
×