ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কুমিল্লার তুরুপের তাস রনি!

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫

কুমিল্লার তুরুপের তাস রনি!

মোঃ মামুন রশীদ ॥ লক্ষ্যটা সবার অন্যদিকেই ছিল। যে দলটির অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা, স্বাভাবিকভাবেই প্রতিপক্ষরা ব্যাটিং করার আগে তাকে নিয়েই পরিকল্পনায় রেখেছিলেন। সেই পরিকল্পনার অংশ কোনভাবেই ছিলেন না আবু হায়দার রনি। কারণ একেবারেই নবাগত এ তরুণ এবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) আগে কোন পর্যায়ের টি২০ ম্যাচ খেলেননি। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে উজ্জ্বলতা ছড়ালেও বড়দের ক্রিকেটেও তেমন খেলার অভিজ্ঞতা নেই ১৯ বছর বয়সী এ তরুণ উদীয়মান বাঁহাতি পেসারের। কিন্তু তিনিই ম্যাজিক দেখাতে শুরু করলেন শুরু থেকে। হয়ে উঠলেন প্রতিপক্ষ শিবিরের জন্য আতঙ্কের নাম! দুর্ধর্ষ ইনসুইঙ্গারের সঙ্গে আছে দুয়েকটি কাটার দেয়ারও ক্ষমতা। তারচেয়েও বড় কথা ‘ডেথ ওভারে’ সত্যিকারের এক নির্ভরযোগ্য ও ভয়ানক নেত্রকোনা থেকে উঠে আসা এ তরুণ। অনেক আগেই যোগ্যতা ও সামর্থ্য প্রমাণ করলেও নিজেকে ভালভাবে সবার কাছে পরিচিত করেছেন এ বিপিএল দিয়েই। বর্তমানে তিনি চলতি বিপিএলের সর্বাধিক উইকেট শিকারি। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে ১১ ম্যাচে ২১ উইকেট নিয়ে তিনি বিপিএলের ইতিহাসে যে কোন এক আসরে সবচেয়ে বেশি উইকেট দখলকারী বোলার। তাই এবার টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে রনি। যদিও ফাইনালেই হবে তার লড়াই কেভন কুপারের সঙ্গে। বরিশাল বুলসের কুপার ৮ ম্যাচে ২০ উইকেট নিয়ে তার পেছনেই আছেন। তবে মাশরাফির ‘ট্রাম্প কার্ড’ রনির ওপরই আজ ফাইনালে দারুণ কিছু পাওয়ার আশায় তাকিয়ে থাকবে ভিক্টোরিয়ান্স। সত্যিকারের এক মারণাস্ত্রে পরিণত হয়েছেন রনি। একেবারেই অচেনা থেকেও নিজের কার্যগুণে সবার নজর কাড়া যায়। রনি যেন সেটারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এবার বিপিএলে সবচেয়ে আলোচিত বোলার তিনি। প্রতিপক্ষরাও এখন রনির বোলিং মোকাবেলার জন্য পরিকল্পনা করেন। অথচ বিপিএল শুরুর আগে এবং পরে কয়েকটি ম্যাচে তাকে কেউ বিবেচনায়ই আনেননি। অধিনায়ক মাশরাফি যখন বোলিং করতে পারছিলেন না ইনজুরির কারণে, তখন তিনি তার হাতের অস্ত্রগুলো ধীরে ধীরে প্রদর্শন করেছেন। সেই অস্ত্রশালা থেকে অন্যতম মারণাস্ত্র হয়ে বের হলেন রনি। বয়স কিংবা অনভ্যস্ততা কোন বিষয় নয়, প্রতিভা বিকাশের সুযোগটা পেলে অনেক সাধারণও অসাধারণ হয়ে যায়। মাশরাফি সেটাই যেন করে দেখিয়েছেন তরুণ রনিকে দিয়ে। লঙ্কান পেসার নুয়ান কুলাসেকারাও ইনজুরিতে, আরেক আলোচিত তরুণ পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বিও তেমন সাড়া ফেলতে পারছিলেন না, মাশরাফি নিজে বোলিং করতে পারছেন না। কিন্তু ভরসা হারাননি মাশরাফি, রনিকে আগেই জানতেন এবং আত্মবিশ্বাস ও আস্থা ছিল তার রনির কার্যকারিতার ওপর। তাই তো ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে রনির হাতেই বল দিয়েছেন। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান প্রতি ম্যাচেই দিয়েছেন। টি২০ অভিষেকেই বিপিএলের প্রথম ম্যাচে রনি ১৭ রান দিয়ে দুই উইকেট নিয়ে নিজের পরিচয় দেন। টি২০ অভিষেকে যখন বিশ্ব ক্রিকেটের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান কুমার সাঙ্গাকারার মতো ক্রিকেটারের উইকেট দখলে আসে তখন আর ভীতি কোথায়? বুকের ছাবিটা প্রশস্ত হয়েছে তখনই। সিলেট সুপার স্টারসের বিপক্ষেই প্রথম নিজের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রূপটা দেখিয়েছেন ২৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে। ডেথ ওভারগুলোয় বোলিং করেছেন, বোলিং করেছেন ম্যাচ নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত হবে এ রকম শেষ ওভারের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে। রনি আবার সৌভাগ্যবানও যে মাশরাফি তার অধিনায়ক। এ কারণেই তার উপযুক্ততা এবং প্রতিভা প্রকাশের মোক্ষম সুযোগ পেয়ে গেছেন। এবার বিপিএলে রনির চেয়ে দেশ-বিদেশে সুপরিচিত এবং তারকা বোলাররা খেলেছেন। কিন্তু সবাইকে টপকে গেছেন তিনি। বিপিএলের এক আসরে কোন বোলারই এত উইকেট পাননি এর আগে। রনি ফাইনালে নামার আগেই শিকার করে ফেলেছেন ১১ ম্যাচে ১৩.৩৮ গড়ে ২১ উইকেট। ২০১২ সালের প্রথম বিপিএলে ইলিয়াস সানি ও মোহাম্মদ সামি যৌথভাবে ১৭ উইকেট নিয়ে ছিলেন শীর্ষে। আর ২০১৩ সালের দ্বিতীয় আসরে দক্ষিণ আফ্রিকার মিডিয়াম পেসার আলফোনসো থমাস ২০ উইকেট নিয়ে ছিলেন সর্বাধিক উইকেট শিকারি। তাই ইতোমধ্যেই এক আসরের রেকর্ড উইকেটশিকারি এখন রনি। এবার ফাইনালে আরেকবার তরুণ রনিই ভরসা ভিক্টোরিয়ান্সের। নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ারও সুযোগ তার জন্য। তাছাড়া প্রথম কোন টি২০ আসরে খেলতে নেমেই সেরা খেলোয়াড় হওয়ার দারুণ এক সুযোগ। সুযোগ দলকে চ্যাম্পিয়ন করার। তবে প্রতিযোগিতাটা আচ ফাইনালের প্রতিপক্ষ বরিশাল বুলসের বোলার কুপারের সঙ্গে। কুপার পুরো আসরেই দুর্দান্ত বোলিং করে ৮ ম্যাচেই নিয়েছেন ৮.৭০ গড়ে ২০ উইকেট।
×