ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অথচ বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সালমা খাতুন কিছুই জানেন না

মেয়েরাই পাকিস্তান যেতে চাচ্ছে ॥ পাপন

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১৮ মে ২০১৫

মেয়েরাই পাকিস্তান যেতে চাচ্ছে ॥ পাপন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন কয়েক দিন আগে বলেছিলেন, বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দলের ক্রিকেটাররাই পাকিস্তানে খেলতে যেতে উদগ্রীব হয়ে আছে। অথচ বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সালমা খাতুন এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) সঙ্গে যে শীতল সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দলকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ পাকিস্তানে পাঠিয়ে সেই সম্পর্ক আরও বন্ধুত্বপূর্ণ করতে চাইছে বিসিবি। তাতে প্রশ্ন উঠে গেছে, সালমাদের পাকিস্তানে পাঠিয়ে ঝুঁকিতে ফেলবে বিসিবি? যেখানে মাশরাফিদের পাঠানোর কোন চিন্তা নেই, সেখানে সালমাদের কেন পাঠানোর ভাবনা হচ্ছে? মাশরাফিদের মতো কী সালমাদের জীবনের ঝুঁকি নেই? বিসিবি সভাপতি বলেছিলেন, ‘পিসিবি থেকে জাতীয় দল (পুরুষ দল) পাঠানোর প্রস্তাব আমাদের কাছে সব সময়ই আছে। আপাতত আমাদের যাওয়ার (পাকিস্তানে) ব্যাপারটা ক্লোজ করে রেখেছি। পাকিস্তান ক্রিকেট দল যখন খেলতে আসবে, এর আগেই প্রাক সব হিসেব (যাওয়া-আসার) চুকিয়ে ফেলেছি। তবে জিম্বাবুইয়ে যাচ্ছে ভাল কথা। আমি অনেক খুশি। পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য অতি শক্তিশালী দল। সব সময়ই ছিল। ওখানে (পাকিস্তানে) এত বছর ধরে (৬ বছর) ক্রিকেট হচ্ছে না। আবার ক্রিকেট শুরু হচ্ছে। সে জন্য আমি খুশি। কিন্তু এ মুহূর্তে বাংলাদেশ (পুরুষ দল) যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। তবে মেয়েরা চাচ্ছে যেতে। ওরা অস্থির হয়ে গেছে। যেহেতু পাকিস্তানের কাছে দুইবার হেরেছে। ওরাই পাকিস্তানের সঙ্গে খেলতে চায়। এখন মেয়েরা যেতে চাইলে আমরা হয়ত সেদিকে এগিয়ে যাব।’ বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সালমা খাতুন পাকিস্তান যাওয়া নিয়ে কিছুই জানেন না। বিসিবি থেকে যে এখনও জানানো হয়নি। সঙ্গে জঙ্গী হামলায় জর্জরিত দেশটিতে যাওয়া নিয়ে সালমার কণ্ঠে শঙ্কাও জেগেছে। শুক্রবার যেই লাহোরে বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফরের কথা জানান পিসিবি চেয়ারম্যান শাহরিয়ার খান, এরপরই এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। সালমা এক অনলাইনকে বলেছেন, ‘আমরা যে যাচ্ছি, তা এখনও অফিসিয়ালি আমাদের জানানো হয়নি। আমরাও গণমাধ্যমের মাধ্যমেই জানতে পেরেছি। তবে প্রায় প্রতিদিনই শুনতে পাচ্ছি, সেখানে (পাকিস্তান) একটার পর একটা ঝামেলা লেগেই আছে। এই মুহূর্তে আমাদের বিদেশ সফর দরকার আছে, কিন্তু তাই বলে পাকিস্তানে যাওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ।’ সঙ্গে এও যোগ করেন সালমা, ‘কিন্তু বোর্ড যদি চায়, আমাদের জন্য ভাল মনে করে, সেক্ষেত্রে আমাদের যাওয়া লাগবেই। আমাদের কোনটাতে ভাল হয় আর কোনটাতে খারাপ হয় সেটা বোর্ডই ভাল বুঝবে। তবে এটুকু নিশ্চিত যে (নাজমুল হাসান) পাপন স্যার অবশ্যই আমাদের বিপদের মুখে ঠেলে দেবেন না।’ সালমার কথায় বোঝাই যাচ্ছে, যদি বিসিবি শেষপর্যন্ত মহিলা দলকে পাকিস্তানে পাঠায়, তাহলে সালমারা না যেতে চাইলেও যেতে হবে; কিন্তু এ যাওয়ারও কী মানে আছে? ২০১২ সালেও এমনটি হয়েছে। পুরুষ ক্রিকেট দলকে জোর করেই যেন পাঠাতে চায় বিসিবি। সিনিয়র ক্রিকেটাররা যেতেও চান না। একটা সময় তরুণ ক্রিকেটারদের পাঠানোর সিদ্ধান্তও হয়। কিন্তু মামলায় আর যাওয়া হয়নি। এ নিয়ে পিসিবির সঙ্গে বিসিবির সম্পর্কও নষ্ট হয়। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ একটি স্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার কী কোন মানে আছে? পাকিস্তানে প্রতিদিনই কোথাও না কোথায় জঙ্গী হামলা হচ্ছে। এতে জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেট দলও নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে পাকিস্তানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল। আবার তা ঠিক হয়। তবে শেষপর্যন্ত পাকিস্তানে জিম্বাবুইয়ে গেলে, সিরিজও যদি হয়; এর দায়দায়িত্ব যে আইসিসি নেবে না, তা বুঝিয়ে দেয়। আইসিসি কোন ম্যাচ অফিসিয়াল এ সিরিজে দেবে না। তাতে বোঝাই যাচ্ছে, ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কা টিম বাসের ওপর হামলার পর এখনও পাকিস্তানে খেলতে যাওয়া নিরাপদ নয়। যেখানে আইসিসিই ঝুঁকি দেখছে, সেখানে আইসিসির নিয়ন্ত্রণাধীন একটি বোর্ড হয়েও বিসিবি কিভাবে পাকিস্তানে মহিলা ক্রিকেটারদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলার ভাবনা করে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, সালমাদের শেষপর্যন্ত ঝুঁকিতে ফেলবে বিসিবি?
×