ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিটেনের ভাগ্য নির্ধারণী ভোট

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ৮ মে ২০১৫

ব্রিটেনের ভাগ্য নির্ধারণী ভোট

বৃহস্পতিবার ব্রিটেনে এক প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সাধারণ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে ক্ষমতায় যেতে রাজনীতিবিদদের পারস্পরিক লড়াইয়ের মধ্যে ভোটারদের হয়ত একটি নতুন সরকার পেতে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এই নির্বাচন দৃশ্যত ১৯৭৪ এর পর থেকে প্রথমবার একটি সংখ্যালঘু সরকার উপহার দিতে যাচ্ছে। আবার এই নির্বাচন ব্রিটেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের দিকেও ঠেলে দিতে এবং স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা লাভ ত্বরান্বিত করতে পারে। খবর এএফপির। ২০১০ সাল থেকে একটি কোয়ালিশন সরকারের নেতৃত্ব দিয়ে আসা প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের মধ্য-ডানপন্থী কনজারভেটিভ পার্টি ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য লড়াই করছে, তবে তাদের এড মিলিব্যান্ডের মধ্য-বামপন্থী লেবার পার্টির সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে লড়তে হচ্ছে। নির্বাচনের আগে চূড়ান্ত জনমত জরিপে এ কথা জানা গেছে। লাখ লাখ ব্রিটেনবাসী শিপিং কন্টেনার থেকে শুরু করে গির্জা এবং পানশালার ভোটকেন্দ্রে গ্রিনিচ মান সময় ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। শুক্রবার বিকেলের আগে আসন লাভের চূড়ান্ত খতিয়ান পরিষ্কার হবে না। যদি প্রত্যাশা অনুযায়ী কনজারভেটিভ কিংবা লেবার কেউই সুস্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায় তবে তারা প্রায় ৩২৬ আসনের একটি জোট গড়ে তোলার চেষ্টায় ছোটখাটো দরগুলোর সঙ্গে কয়েকদিন অথবা কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনা চালাবে। প্রধান দুটি দলের নেতৃবৃন্দই ৬৫০ আসনের হাউস অব কমন্সে পরিষ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করবেন প্রকাশ্যে এ কথা জোর দিয়ে বললেও তাদের প্রায় নিশ্চিতভাবেই একটি সরকার গঠনের জন্য ছোটখাটো দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতায় আসতে হবে। জনমত জরিপ সংস্থা ইউগভের সভাপতি পিটার গেলনার এ সপ্তাহে লিখেছেন : ‘এই মুহূর্তে আমার কোন ধারণা নেই যে, এখন থেকে এক মাস পরে কে প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। ‘কোন জরিপবিদ অথবা রাজনৈতিক ভবিষ্যত বক্তা নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না বৃহস্পতিবার কি ঘটবে।’ ব্রিটেন থেকে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতাকামী স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি) সীমান্তের ওপারে উত্তরের অধিকাংশ আসনেই জয়লাভ করতে যাচ্ছে এবং আলোচনায় তাদের শক্ত অবস্থান থাকবে। এক বছর আগে এ ধরনের ফলাফল অকল্পনীয় হলেও গত বছরের সেপ্টেম্বরের গণভোটে স্কটল্যান্ড স্বাধীনতাকে প্রত্যাখ্যান করার পর থেকে নিকোলা স্টার্জিয়নের এসএনপির জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এসএনপি একটা সংখ্যালঘু লেবার সরকারকে সমর্থন করবে কিন্তু কনজারভেটিভকে নয়। মার্গারেট থ্যাচারের এই দল সীমান্তের উত্তরে দারুণভাবে অজনপ্রিয়। থ্যাচারের অর্থনৈতিক সংস্কারের নীতিকে সেখানে ভারি শিল্পের অধোগতির জন্য এখনও দায়ী করা হয়ে থাকে। কয়েক বিশ্লেষক বলেছেন, স্বাধীনতার প্রশ্নে নতুন করে গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য এসএনপি একটি নতুন সরকারের ওপর তার প্রভাব খাটাতে পারে। স্টার্জিয়ন কবে নাগাদ নতুন ভোটগ্রহণ দেখতে চান সে ব্যাপারে কোন সময়সূচী দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। ক্যামেরনের কোয়ালিশন সরকারের জুনিয়র পার্টনার মধ্যপন্থী রিবারেল ডেমোক্র্যাটরাও নির্বাচনে পরবর্তী আলোচনায় একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করবে এবং দুই প্রধান দলের যে কারও সঙ্গে সমঝোতা করতে প্রস্তুত আছে। তাদের নেতা নিক ক্লেগকে কনজারভেটিভদের খুবই ঘনিষ্ঠ হিসেবে দেখা হলেও দেশজুড়ে লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের প্রত্যাশিত পরাজয় সত্ত্বেও তিনি নিজের আসন ধরে রাখার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালান। নাইজেন ফারাগের ইইউবিরোধী ইউকে ইন্ডেপেন্ডেন্স পার্টি (ইউকিপ) মুষ্টিমেয় আসন লাভ করবে বলে আশা করা যায় এবং তাই তারা নির্বাচন পরবর্তী আলোচনায় ভূমিকা পালন করবেন। কনজারভেটিভ অথবা লেবার পদের নেতৃত্বেই নতুন সরকার গঠিত হোক না কেন তারা প্রথম বড় ধরনের পরীক্ষার সম্মুখীন হবে যখন ২৭ মে রানীর ভাষণের পর আইন প্রণেতারা তাদের আইন প্রণয়নমূলক কর্মসূচীর ওপর ভোট প্রদান করবেন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি স্থায়ী সদস্য দেশ এবং পারমাণবিক শক্তিধর ন্যাটো রাষ্ট্র ব্রিটেনের মর্যাদার ওপর এই নির্বাচন কি ফলাফল নিয়ে আসে সে জন্য বিশ্বজুড়ে এই নির্বাচন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
×