ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অস্ট্রেলিয়ায় যাচ্ছে বাংলাদেশ আজ

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৪ জানুয়ারি ২০১৫

অস্ট্রেলিয়ায় যাচ্ছে বাংলাদেশ আজ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এবার একাদশ ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে যৌথভাবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল পঞ্চমবারের মতো বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ মর্যাদার এ মঞ্চে অংশ নেবে। এবার মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে দলের স্বপ্ন কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার। আজ রাতে সেই স্বপ্নের মিশনে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবে বাংলাদেশ দল। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে প্রধান কোচ শ্রীলঙ্কার চান্দিকা হাতুরাসিংহের অধীনে মাশরাফিরা কঠোর অনুশীলন করেছেন টানা ১০ দিন। দিনব্যাপি কয়েক সেশনের এ অনুশীলন শেষ করে এবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে গিয়ে আসল পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হওয়া। দীর্ঘ অনুশীলনের পর দলের প্রস্তুতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কোচ হাতুরাসিংহে ও অধিনায়ক মাশরাফি। দু’জনেই বিশ্বকাপে দলের আশা-প্রত্যাশা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রত্যয় জানিয়েছেন কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার। ১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ আসরে অংশ নিয়েই শক্তিশালী পাকিস্তান দলকে পরাজিত করে বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেবার পাকরা রানার্সআপ হয়েছিল। তারপর থেকে প্রতিবারই বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ দল। টানা চার বিশ্বকাপের মধ্যে স্বপ্নে মতো একটা আসর কেটেছে ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে। ওই আসরে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব অতিক্রম করে বাংলাদেশ পা রেখেছিল সুপার এইট পর্বে। গ্রুপ পর্বে ভারতের মতো দলকে হারিয়ে আবার সুপার এইটে ক্রিকেট পরাশক্তি দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দিয়ে নিজেদের বিশ্ব ক্রিকেটের উঠতি শক্তি হিসেবে জানান দিয়েছিল। তবে ২০১১ বিশ্বকাপে দেশের মাটিতে খেলার সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি। ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ডকে ও হল্যান্ডকে হারিয়ে দিলেও বাকি তিন ম্যাচে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয়। এবারই প্রথম অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। মাশরাফিদের নিয়ে দেশের কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমীদের আশাটা অনেক বড়। তবে সেই আশা পূর্ণ করার জন্য ভাবতে হচ্ছে অনেক কিছু নিয়েই। গত বছরটা বেশ বাজে কেটেছে বাংলাদেশ দলের। পুরো বছর ছিল হারের বৃত্তে। দেশের মাটিতে হওয়া ক্ষুদ্র ফরমেটের ক্রিকেট মহাযজ্ঞ টি২০ বিশ্বকাপেও তেমন সুবিধা করতে পারেনি দল, হেরেছে হংকংয়ের মতো আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশের কাছে। ভাল করতে পারেনি ঘরের মাটিতে হওয়া এশিয়া কাপেও। তবে বছরের শেষে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে পুরো সিরিজে শতভাগ জয় নিয়ে ভালভাবেই ফিরে এসেছে বাংলাদেশ দল। এ সিরিজ থেকে দলের নেতৃত্ব ভার মুশফিকুর রহীমের পরিবর্তে পেয়েছেন মাশরাফি। আর এ সিরিজ জয়ের পর বেশ উজ্জীবিত মনোভাব নিয়েই বিশ্বকাপ খেলার জন্য যেতে পারছে দল। অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের উইকেটের গতি-প্রকৃতি এবং পরিবেশ যেমন তাঁর সঙ্গে তেমন পরিচয় নেই বাংলাদেশ দলের। এখানকার গতিময় ও বাউন্সি উইকেটে খেলেও অভ্যস্ত নয় দল। আর সে কারণেই সার্বিক কন্ডিশন নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তা কাজ করছেই। কারণ এশিয়ার কোন দলই এ দুটি দেশে গিয়ে সমস্যায় পড়ে স্বাভাবিক নৈপুণ্য দেখাতে। আর বিশ্বকাপ মঞ্চে গিয়ে ভাল করাটা আরও কঠিন। তবে হাতুরাসিংহে অনুশীলনে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের পরিবেশের একটা আবহ দেয়ার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। উইকেটে পাথর বিছিয়ে পেসারদের বোলিং করিয়েছেন, বোলিং মেশিনের মাধ্যমে নেটে ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং করিয়েছেন। উইকেটে পাথর বিছিয়ে অনুশীলনের বিষয়ে ওপেনার এনামুল হক বিজয় বলেছিলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের উইকেটে বলটা পড়ার পর স্কিড করে বেশ দ্রুত ব্যাটসম্যানের কাছে চলে আসে। পাথর বিছিয়ে দিলে বলটার গতি-প্রকৃতি তেমনই হয়। আমরা শর্ট অব লেন্থ ও বাউন্সি বলে প্র্যাকটিস করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।‘ তরুণ উদীয়মান টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকারও এ বিষয়ে বলেন, ‘নতুন করে কিছু শেখানো হচ্ছে না। যার যার দক্ষতা অনুসারেই অনুশীলন করে সেটাকে আরও বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আর আমরা মূলত হুক-পুল অনুশীলন করছি বেশি।’ এছাড়াও অনুশীলনে সøগ-ওভারে ব্যাটসম্যানদের দ্রুত রান তোলার প্র্যাকটিস করানো হয়েছে পুরনো বলে। সবমিলিয়ে অনুশীলন নিয়ে সন্তোষ জানিয়ে হাতুরাসিংহে বলেন, ‘আমরা যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি তাতে খুশি। আমরা আগেই অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছি। বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ম্যাচ আছে, সুযোগ থাকছে অনুশীলনেরও তাই মানিয়ে উঠতেও সমস্যা হবে না।’ লঙ্কান এ কোচ প্রত্যাশা করছেন এবার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে অন্তত তিনটি ম্যাচ জিতবে বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশের গ্রুপে নিজেদের চেয়ে শক্তিমত্তায় কিছুটা দুর্বলতর আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ড আছে। তবে এ দুটি দলের কাছেই অতীতে হারার বাজে রেকর্ড আছে দলের। তবে এ দুটি দল তো অবশ্যই অন্য যে কোন বড় দলকে হারানোর সামর্থ্য আছে বাংলাদেশের এমনটাই মনে করেন কোচ হাতুরাসিংহে। কিন্তু সে জন্য শুরুটা ভাল হওয়া জরুরী। ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যানবেরায় আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে এবার বিশ্বকাপ অভিযান শুরু হবে বাংলাদেশের। এ বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার। এটাও অনেক কঠিন কাজ। শুরুটা ভাল করতে হবে। তাহলে সবাই একটা প্ল্যাটফর্ম পাবে। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ। শুরুটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।’ টেস্ট খেলুড়ে সব দলকেই হারানোর রেকর্ড আছে এবং সে সব কারণেই প্রমাণ হয়েছে যে কোন দলকে হারানোর সামর্থ্য রাখে বাংলাদেশ দল। বিশ্বকাপের আগে সিডনিতে ৯ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান ও ১২ ফেব্রুয়ারি আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে নিজেদের প্রস্তুত করা এবং সামর্থ্য বোঝার সুযোগ। সেটাও মূল মঞ্চে নামার আগে উপযোগী হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
×