
ছবি: সংগৃহীত
নওগাঁর সাপাহার উপজেলার রোদগ্রাম মৌজার একটি জমির মালিকানা নিয়ে দুই পক্ষের দীর্ঘদিনের বিরোধ নতুন করে উত্তেজনার রূপ নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আদালতে ২৪০ মিস/২০২৫ (সাপাহার) নম্বরে মামলা চলমান রয়েছে। মামলার ভিত্তিতে উপজেলা ভূমি অফিস এবং সাপাহার থানা পুলিশ পৃথক তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিলেও—দুই প্রতিবেদনের তথ্যগত পার্থক্য জনমনে বিভ্রান্তি ও উদ্বেগ তৈরি করেছে।
ভূমি অফিসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিরোধীয় ৮.৭৯ একর জমি গত প্রায় ৫০ বছর ধরে মো. মোজাম্মেল হক শাহ ভোগদখলে রেখেছেন এবং নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করে আসছেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বিবাদীপক্ষ জোরপূর্বক জমি দখলের চেষ্টা চালায়, ফলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটার আশঙ্কা দেখা দেয়।
অন্যদিকে, পুলিশের প্রতিবেদনে উঠে আসে ভিন্ন চিত্র। সেখানে বলা হয়েছে, গত ৪–৫ মাস ধরে সাখাওয়াত হোসেন শাহ ও তার পরিবার উক্ত জমি ভোগদখল করছেন। অতীতে মৌখিক জমি বিনিময়ের ভিত্তিতে দুই পক্ষ চাষাবাদ করলেও, পরবর্তীতে মোজাম্মেল হক শাহ চুক্তি ভঙ্গ করলে বিরোধের সূত্রপাত হয়। পুলিশ জানায়, বিবাদীপক্ষ আম ও কুমড়া গাছ লাগালেও প্রথম পক্ষ তা নষ্ট করে পুনরায় জমি দখলের চেষ্টা করেছে। পরিস্থিতি যেকোনো সময় আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
বিবাদীপক্ষ সাখাওয়াত হোসেন শাহ জানান, রোদগ্রাম মৌজার ১৬১ দাগে ১৭২ খতিয়ানে থাকা ১ একর ৮৪ শতক জমি তার মা ফাতেমা পৈত্রিক সূত্রে পেয়েছেন। তিনি বলেন, “২০২৪ সালের অক্টোবরে আমরা জমিতে ৫৮০টি আমগাছ রোপণ করি, কিন্তু ২০২৫ সালের ৭ মার্চ রাতে মোজাম্মেল হক ও তার লোকজন তা কেটে ফেলে। আমরা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “১৩ জুলাই আমাদের বর্গাচাষিরা চাষ করে, আর ২০ জুলাই মোজাম্মেলের পক্ষের চাষিরা ধান রোপণ করেন। অথচ ১৭ জুলাই উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ইয়াকুব আলী একতরফাভাবে প্রতিবেদন দিয়েছেন। শুনেছি, তিনি অর্থের বিনিময়ে পক্ষপাতদুষ্টভাবে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।”
এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সার্ভেয়ার ইয়াকুব আলী জানান, তিনি সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছেন এবং তার মতে সেটি সঠিক। বিস্তারিত বক্তব্যের জন্য তিনি সোমবার অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
এদিকে, ভূমি অফিস ও পুলিশের প্রতিবেদনের এই বিভ্রান্তিকর ভিন্নতা নিয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত কী হবে, তা ঘিরে স্থানীয়দের মাঝে চরম কৌতূহল তৈরি হয়েছে। অনেকের আশঙ্কা, নিরপেক্ষ ও তথ্যভিত্তিক তদন্ত না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। স্থানীয়রা অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
রিফাত