ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে বগুড়ায় নির্মিত হচ্ছে জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ

মাহফুজ মন্ডল, বগুড়া

প্রকাশিত: ১৭:১৪, ২১ জুলাই ২০২৫

জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে বগুড়ায় নির্মিত হচ্ছে জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ।

২০২৪ সালের ঐতিহাসিক জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে বগুড়ায় নির্মিত হচ্ছে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’। বগুড়া জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে, জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজার নেতৃত্বে এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে শহরের সাতমাথায় প্রধান ডাকঘরের পাশের ‘মুক্ত মঞ্চ’ ভেঙে একই স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শুরু হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের এমন উদ্যোগ বগুড়াবাসীর কাছে গর্ব ও কৃতজ্ঞতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের মত, জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজার এই সাহসী পদক্ষেপ দীর্ঘদিন বগুড়ার ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

একই নকশায় নির্মাণ হচ্ছে দেশজুড়ে
গণপূর্ত বিভাগের আওতায় ১৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ব্যয়ে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ হচ্ছে। গত ৬ জুলাই নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে, আর ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। লক্ষ্য, ৫ আগস্ট শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদনের দিনটিতে এটি প্রস্তুত রাখা।

গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. ফারজানা আকতার জানিয়েছেন, দেশের ৬৪ জেলায় একই নকশা ও বাজেটে নির্মিত হচ্ছে এই স্মৃতিস্তম্ভ। নারায়ণগঞ্জে ইতিমধ্যে একটি উদ্বোধন করা হয়েছে।

স্মৃতিস্তম্ভের কাঠামো হবে ১৮ ফুট উচ্চতার স্টিলের স্তম্ভ, যার ব্যাস ৬ ফুট। মাটি থেকে ১ ফুট উচ্চতায় ১৮ ফুট ব্যাসের কংক্রিট প্লাটফর্মে এটি বসানো হবে। ভেতরে থাকবে আলো, যা শহীদদের নামকে আলোকিত করবে। সঙ্গে যুক্ত থাকবে ১.৫ ফুট প্রশস্ত একটি বেদি।

মুক্ত মঞ্চের ইতিহাস ও রূপান্তর
২০২৩ সালে জেলা পরিষদের অর্থায়নে তৈরি হয়েছিল ‘মুজিব মঞ্চ’ ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল। ২০২৪ সালের আন্দোলনের পর, তৌহিদী ছাত্র জনতা সেটিকে ‘মুক্ত মঞ্চ’ নামে অভিহিত করে। পরে ‘জাস্টিস ফর জুলাই’ সংগঠন শহীদ ১৯ জন ছাত্র-জনতার নাম সেখানে ফলকে যুক্ত করে। 

পূর্বে নামকৃত মুজিব ও মুক্ত মঞ্চটি হয়ে ওঠে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চর্চার একটি জায়গা। তবে নাগরিক স্বার্থে ও শহীদদের স্মরণে এর স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

জনসাধারণের স্বস্তির প্রতীক
বহুদিন ধরে অভিযোগ ছিল, সাতমাথার মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মঞ্চ তৈরি হওয়ায় যানজট, চলাচলে বিঘ্ন এবং ছিনতাই-পকেটমারের উপদ্রব বেড়ে যায়। ডাকঘরের পশ্চিম গেটটি ছিল বন্ধ, যা সৃষ্টি করেছিল নাগরিক ভোগান্তি।

মানবাধিকার কর্মী কেজিএম ফারুক বলেন, “মুক্ত মঞ্চ ভেঙে জনগণ শান্তি পেয়েছে। এই স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ হলে শহীদদের শ্রদ্ধাও জানানো যাবে, আবার জনসাধারণের দুর্ভোগও কমবে।”

তিনি আরও বলেন, “যদি এটি শহরের অন্য কোথাও হতো, যানজটের অবসান হতো আরও দ্রুত। তবু স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের বিষয়টি জনগণের আশা পূরণ করেছে।”
জেলা প্রশাসকের উদ্যোগের প্রশংসা

জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, “জুলাই শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজ গুরুত্বের সঙ্গে এগিয়ে চলছে। আগামী ৫ আগস্ট সকাল ৯টায় শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন।”

তিনি আরও জানান, শহরের মানুষ সিদ্ধান্ত নেবেন কোথায় ‘মুক্ত মঞ্চ’ গড়ে উঠবে। স্মৃতিস্তম্ভ হবে সকলের অংশগ্রহণে গড়া এক ঐক্যের প্রতীক।

শহীদদের স্মরণে এই স্মৃতিস্তম্ভ কেবল একটি নির্মাণ প্রকল্প নয়, বরং এটি বগুড়ার গণতান্ত্রিক চেতনা, শহীদের আত্মত্যাগ এবং প্রশাসনিক জবাবদিহিতার মিলনস্থল। বগুড়া জেলা প্রশাসনের সুস্পষ্ট ও সময়োপযোগী উদ্যোগ নাগরিকদের আশাবাদী করে তুলেছে।

মিরাজ খান

×