ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

বৃষ্টির প্রভাবে উত্তরাঞ্চলে আমন ক্ষেতে ফিরেছে প্রাণ

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী

প্রকাশিত: ১৮:১০, ১৮ জুলাই ২০২৫

বৃষ্টির প্রভাবে উত্তরাঞ্চলে আমন ক্ষেতে ফিরেছে প্রাণ

ছবি: সংগৃহীত

টানা খরার পর অবশেষে বর্ষার দেখা মিলল উত্তরের জেলাগুলোতে। তীব্র দাবদাহের পর আষাঢ়ের এই বৃষ্টি যেন প্রকৃতির উপহার, স্বস্তি পেল কৃষক সমাজ। চরম খরার কারণে বহু কৃষকই ধান রোপণ করতে পারছিলেন না। কেউ কেউ পাম্পসেট চালিয়ে পানি তুলে জমিতে চাষ করলেও প্রচন্ড রোদের তাপে নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল চারা।

অবশেষে বৃষ্টির জেরে জমিতে পানি জমতে শুরু করেছে, মুখে হাসি ফুটেছে কৃষকদের। ফলে পুরোদমে আমনের চারা রোপণ শুরু করেছেন তারা। আবহাওয়াবিদদের মতে, এই বৃষ্টি বর্ষারই অংশ এবং আরও কয়েকদিন উত্তরবঙ্গে ভারী থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত চলবে। এর ফলে কৃষিকাজ, পানি সঞ্চয় এবং পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা।

এছাড়া, তিস্তা সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে তিন জেলা নীলফামারী, দিনাজপুর ও রংপুরে ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস সূত্রমতে, গত ৪৮ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের আট জেলায় মাঝারি, ভারী ও অতিভারী বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে দিনাজপুরে ১১৩ মিলিমিটার, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১৬১ মিলিমিটার, পঞ্চগড়ে ৯০ মিলিমিটার, রংপুরে ৪৪ মিলিমিটার, কুড়িগ্রামে ৫৮ মিলিমিটার, নীলফামারীর ডিমলায় ৫০ মিলিমিটার।

এছাড়া, তিস্তা অববাহিকার ডালিয়া ও কাউনিয়ায় বৃষ্টি হয়েছে ৬০ মিলিমিটার। উত্তরাঞ্চলের রংপুর ও দিনাজপুর দুটি পৃথক কৃষি অঞ্চল। এর মধ্যে রংপুর কৃষি অঞ্চলের আওতায় ৫ জেলা নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় চলতি আমন মৌসুমে ৬ লাখ ২০ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ চলছে।

অপরদিকে, দিনাজপুর কৃষি অঞ্চলের আওতায় পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর তিন জেলায় আমন চাষ চলছে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ১৯০ হেক্টরে।

শুক্রবার (১৮ জুলাই) কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, তারা সরেজমিনে আমনের চারা রোপনে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। সূত্রমতে, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় এবার রংপুর কৃষি অঞ্চলে হাইব্রিড ৮৫ হাজার ৪৫০ হেক্টরে, উফশী ৫ লাখ ২৪ হাজার ৭০ হেক্টরে ও স্থানীয় ১০ হাজার ৯১০ হেক্টরে ও দিনাজপুর কৃষি অঞ্চলে হাইব্রিড ৫২ হাজার ৪৬৮ হেক্টরে, উফশী ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩৮২ হেক্টরে ও স্থানীয় ১ হাজার ৩৪০ হেক্টরে আমন চাষ চলছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলা চাল উৎপাদনের ল্ক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৯ লাখ ১৭ হাজার ৬৭২ মেট্রিক টন । জেলা অনুযায়ী নীলফামারীতে ১ লাখ ১৩ হাজার ২২০ হেক্টর, রংপুরে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৪০ হেক্টর, লালমনিরহাটে ৮৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর, গাইবান্ধায় ১ লাখ ৩৩ হাজার ১২০ হেক্টর ও কুড়িগ্রামে ১ লাখ ২০ হাজার ৫০০ হেক্টরে আমন রোপন চলছে।

অপরদিকে, দিনাজপুর অঞ্চলের তিন জেলায় চাল উৎপাদন ধরা হয়েছে ১৭ লাখ ১৮ হাজার ৪০৪ মেট্রিক টন। এ জন্য দিনাজপুর জেলায় ২ লাখ ৬০ হাজার ৮৬০ হেক্টরে, ঠাকুরগাঁও জেলায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩০০ হেক্টরে ও পঞ্চগড় জেলায় ১ লাখ ৩০ হাজার হেক্টরে আমন চাষ চলছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) পর্যন্ত বৃষ্টি পেয়ে আট জেলায় প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমিতে আমন চারা রোপন শেষ করেছেন কৃষকরা। প্রতিদিন চারা রোপনে দ্রুত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। সরেজমিনে দেখা যায়, পথের ধারে কৃষকরা চারা রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার কোথাও কোদাল দিয়ে ক্ষেতের আইল (সীমানা) বেঁধে দিচ্ছেন। তাদের চোখে-মুখে খুশির ঝিলিক।

চিলাহাটির মুক্তিরহাট এলাকায় দেখা যায়, কৃষকরা জমিতে বৃষ্টির পানি জমিয়ে আমনের চারা রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষক রবিউল ইসলাম (৫৩) জানালেন, বৃষ্টির অভাবে আমনের ক্ষেত তৈরি করা যাচ্ছিল না। বৃষ্টি পেয়ে দ্রুত জমি তৈরি করে রোপা আমনের কাজ করা হচ্ছে। তিনি প্রায় ৭ একর জমিতে আমন চাষ করছেন। এজন্য ১০ থেকে ১২ জন কৃষি শ্রমিক নিয়ে চারা রোপন করছেন। সরেজমিনে এমন অনেক এলাকায় কৃষকদের আমনের চারা রোপন চালিয়ে যেতে দেখা যায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক ড.এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, এই বৃষ্টি আমন চাষে আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। এতে আমন উৎপাদনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ার কারণে মাটির তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছিল। এই বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কমে গেছে।

রাকিব

×