ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম

গণভবন জয় করেছি, এবার জাতীয় সংসদ জয় করবো

প্রকাশিত: ০৯:৫৬, ৭ জুলাই ২০২৫

গণভবন জয় করেছি, এবার জাতীয় সংসদ জয় করবো

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, তাদের আগামী লক্ষ্য হচ্ছে জাতীয় সংসদ ভবন জয় করা এবং বাংলাদেশের পুনর্গঠন। গত রবিবার (৬ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজশাহী নগরীর জিরোপয়েন্ট এলাকায় বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবিতে আয়োজিত এক পথসভায় তিনি এই ঘোষণা দেন।

নাহিদ ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, "পাঁচ আগস্ট আমাদের লক্ষ্য ছিল ফ্যাসিবাদের পতন, এবার আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের পুনর্গঠন। ৫ আগস্ট আমাদের লক্ষ্য ছিল গণভবন, এবার আমাদের লক্ষ্য হলো জাতীয় সংসদ ভবন।" তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, "আমরা গণভবন জয় করেছি, এবার জাতীয় সংসদকেও আমরা জয় করবো। জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় সংসদে তরুণদের অভূতপূর্ব বিজয় উদযাপন হবে।"

আগামী ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সকলকে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, "অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমরা রাজপথে নেমেছিলাম। কেবল শেখ হাসিনার পতন নয়, আমাদের স্বপ্ন ছিল একটি নতুন বাংলাদেশের। কিন্তু ৫ আগস্টের পরে নানা শক্তির ষড়যন্ত্রে সংস্কারের পথ রুদ্ধ হয়েছে।" তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, "অনেক সুযোগ দিয়েছি, আমরা আর সুযোগ দেবো না। যারা এই সংস্কারের কাজটাকে ব্যাহত করার চেষ্টা করছে, বাংলাদেশের জনগণ তাদের কোনোদিন ক্ষমা করবে না।" নির্বাচনের আগে অবশ্যই সংস্কার ও বিচারের সুরাহা হতে হবে উল্লেখ করে তিনি "গণহত্যাকারী খুনি হাসিনার বিচার এবং নতুন সংবিধান" দেখতে চাওয়ার কথা বলেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, "আগামী ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে আমরা জুলাই ঘোষণাপত্র আদায় করে ছাড়বো, ইনশাল্লাহ।"

পথসভায় এনসিপি'র সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, রাজনীতিতে আবেগের কোনো স্থান নেই বলে যারা মনে করেন, তারা ভুল করছেন। তিনি বলেন, "আমরা বলি জনগণের ন্যায়সঙ্গত আবেগকে বাস্তবে রূপান্তরিত করাই আমাদের রাজনীতি। জনগণের আবেগ সঞ্চারিত হয়েছিল বলেই, জুলাইয়ে রাজপথে রক্ত ঢেলে দিতে জনগণ কুণ্ঠাবোধ করেনি।"

দলের দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে তরুণরা রক্ত দিয়েছে এবং যারা সংস্কার কার্যক্রম বন্ধ করতে চান, তাদের তরুণদের সাথে কথা বলতে হবে। তিনি বলেন, "এই তরুণ সমাজ আর তাঁবেদারি, দালালি করতে চায় না। যারা সংস্কারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, তারা তরুণ সমাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।" তিনি আরও বলেন, "আমাদের হারানোর কিছুই নাই। আমাদের ব্যাংক নাই, যেটা আমরা হারাবো। আমাদের শুধু মানুষের ভালোবাসা আছে।"

উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। তিনি দৃঢ়ভাবে জানান, "যতদিন না ছাত্র-জনতার মনে হচ্ছে আমাদের দেখা স্বপ্নগুলো এখন অনেকটা পূরণ হয়েছে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের এই জুলাই চলবে।"

জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা বলেন, "স্বাধীনতা এনেছি, সংস্কারও আনবো। দেশের সংস্কারে যারা বাধা দেবে, দেশের মানুষ তাদের মনে রাখবে এবং সেই হিসাব রাখবে। যারা গতবছর জুলাই-আগস্টে আমাদের সন্তানদের খুনের নির্দেশ দিয়েছে, তাদের বিচার এই দেশের মাটিতেই হবে।"

পথসভায় অন্যদের মধ্যে রাজশাহী মহানগর প্রধান সমন্বয়কারী মোবাশ্বের আলী, যুগ্ম সমন্বয়কারী আল আশরারুল ইমাম তানিম বক্তব্য দেন। এসময় দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্থা শারমিন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারীসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, রাজশাহী মহানগর ও জেলা-উপজেলাগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

পথসভার আগে, নগরীর রেলগেট এলাকা থেকে জিরোপয়েন্ট অভিমুখে দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ করেন সংগঠনটির হাজারও নেতাকর্মী। পদযাত্রায় নেতাকর্মীরা ‘অ্যাকশন, অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘দখলদারের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘ক্ষমতা না জনতা, জনতা, জনতা’, ‘ইনকিলাব, ইনকিলাব, জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ’সহ ফ্যাসিবাদবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন।

সাব্বির

আরো পড়ুন  

×