ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

চার বছরেও শেষ হয়নি ছয় লেন সড়ক কাজ বন্ধ

চট্টগ্রাম দক্ষিণে যাতায়াতে ভোগান্তি

নুরউদ্দীন খান সাগর, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ২১:৩৪, ২ জুলাই ২০২৫

চট্টগ্রাম দক্ষিণে যাতায়াতে ভোগান্তি

৬ লেন সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় দুই লেনে চলছে গাড়ি। আনোয়ারা উপজেলার চৌমুহনী মোড় থেকে তোলা

দেশের প্রথম নদীর তলদেশে নির্মিত কর্ণফুলী টানেলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঢাকা-কক্সবাজার মহাসড়কে সংযোগের লক্ষেই নির্মাণাধীন ছিল কর্ণফুলী শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে আনোয়ারার কালাবিবির দিঘি পর্যন্ত ৮ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ ছয় লেন সংযোগ সড়ক। কিন্তু প্রায় চার বছরেও এই প্রকল্প শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (এনডিই)। দীর্ঘ সময় কাজ বন্ধ থাকায় জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে সড়কের সুফল থেকে, তৈরি হয়েছে দুর্ভোগ ও যানজট।
৪৮১ কোটি টাকার এই সড়ক প্রকল্প এখন দীর্ঘসূত্রতা ও অনিশ্চয়তায় পড়েছে। ছয় লেনের এই সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি। প্রকল্প শেষ হওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বর।
তবে মূল সময়সীমা অনুযায়ী কাজ শুরুর বদলে প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয় এক বছর পর, ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি। বিদ্যুৎ খুঁটি অপসারণ, ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব ঘটে। ফলে প্রকল্পে প্রথম মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।
পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর একনেক সভায় প্রকল্পের সংশোধিত ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপজাল) অনুমোদিত হয়। এতে প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয় এবং প্রকল্পের ব্যয় ৭৪ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ৪৮১ কোটিতে উন্নীত করা হয়।
তবে ব্যয় বাড়লেও কাজের অগ্রগতি হয়নি। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হয়নি। পরবর্তীতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিল পাস না হওয়ায় কাজ বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে দীর্ঘ এক বছর ধরে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে।
বর্তমানে ২০২৫ সালের জুন মাস পেরিয়ে গেলেও ৮ দশমিক ১ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের দেড় কিলোমিটারের ছয় লেন কাজ এখনো অসমাপ্ত। একইসঙ্গে প্রকল্পের অধিগ্রহণকৃত জায়গার মধ্যে থাকা দালানকোঠা, মার্কেট ও অন্যান্য স্থাপনাও এখনো উচ্ছেদ করা হয়নি।
এনডিইর প্রকৌশলী সাইদুর রহমান জানান, ‘আমরা ১৬টির পরিবর্তে ২১টি কালভার্ট নির্মাণ করেছি, যেগুলোর মধ্যে পাঁচটি পরবর্তীতে সংযুক্ত করা হয়। এসব কালভার্ট নির্মাণ হয়েছে টানেল সংলগ্ন মোড়, চাতরী চৌমুহনীর আগে, মেগা কনভেনশন হল, নাসির কনভেনশন হল সংলগ্ন এবং বড় উঠান এলাকায়। এ ছাড়াও বৈদ্যুতিক খুঁটি সরানোসহ অন্যান্য অতিরিক্ত কাজ করতে হয়েছে। কিন্তু কাজের বিল না পাওয়ায় বর্তমানে কাজ বন্ধ আছে।’
এ বিষয়ে সওজ-এর নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, ‘ঠিকাদার কিছু বাড়তি কাজ করেছে, যার বিল অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বিল পাস হলে তারা আবার কাজ শুরু করবে। ইতোমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হয়েছে। কিছু স্থাপনা সরানো বাকি, সেগুলো দ্রুত অপসারণ করা হবে।’
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে আনোয়ারার কালাবিবির দিঘী পর্যন্ত সড়কের বিভিন্নœ অংশে নির্মাণ কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। কর্ণফুলী ডাকপাড়া, বড়উঠান, ফাজিলখাঁর হাট, চৌমুহনী ও কালাবিবির দিঘী এলাকায় এখনো দালান, মার্কেট ও অন্যান্য স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়নি। অনেক জায়গায় মাটি ফেলে রাখা হলেও সেখানে পিচ ঢালাই বা রাস্তার কার্পেটিং কাজ শুরুই হয়নি।
অন্যদিকে, সড়ক ঘেঁষা কোরিয়ান ইপিজেড, কাফকো, সিইউএফএল ও অন্যান্য শিল্প-কারখানার অফিস শুরুর সময় ও ছুটির সময় সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। যান চলাচলের অসুবিধার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিল্প এলাকা, যা অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বাঁশখালী, চন্দনাইশ, মহেশখালী, পেকুয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে চট্টগ্রাম শহরের দিকে আসা যাত্রীবাহী বাস, মাইক্রোবাস, অটোরিক্সা ও অন্যান্য যানবাহনের একটি বড় অংশ চাতরী চৌমুহনী হয়ে যাতায়াত করে। কিন্তু সড়কের ছয় লেনের কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় যানবাহনকে সীমিত পরিসরের রাস্তায় চলাচল করতে হচ্ছে। এতে দীর্ঘ যানজট তৈরি হচ্ছে, যা প্রতিদিনের রুটিন জীবনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ছয় লেন সড়কের কাজ দ্রুত শেষ না হলে এই সমস্যার সমাধান হবে না। ইতোমধ্যেই ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন এবং স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের যাতায়াতেও বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে।
তারা এই সড়কের সুফলের অপেক্ষায় আছেন দীর্ঘদিন ধরে। সড়কটি চালু হলে আনোয়ারা, কর্ণফুলী, বাঁশখালী, চন্দনাইশ ও কক্সবাজারের পেকুয়া, চকরিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়ার যাত্রীদের পাশাপাশি টানেল ব্যবহারকারীরা ব্যাপক উপকার পাবেন। কিন্তু সড়কের কাজ বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ বেড়েছে।

×