ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

অর্ধলক্ষ মানুষের জলাবদ্ধতার অবসান 

অবশেষে উন্মুক্ত হলো পাইকগাছার বহুল আলোচিত নাছিরপুর খাস খাল

আশরাফুল ইসলাম সবুজ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, পাইকগাছা, খুলনা

প্রকাশিত: ২১:২৯, ২ জুলাই ২০২৫

অবশেষে উন্মুক্ত হলো পাইকগাছার বহুল আলোচিত নাছিরপুর খাস খাল

ছবি: জনকণ্ঠ

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার বহুল আলোচিত নাছিরপুর খাস খাল অবশেষে উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কখনো বৈধ ইজারা, আবার কখনো ইজারাবিহীনভাবে অবৈধভাবে দখল করে খালের বিভিন্ন অংশে নেট-পাটা বসিয়ে চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করছিলেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ফলে এলাকাজুড়ে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা ও কৃষি বিপর্যয়।

সম্প্রতি ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রুহুল আমিন স্বাক্ষরিত একটি উন্নয়ন প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট পত্রে জানানো হয়, ১৪৩২-৩৭ বঙ্গাব্দ মেয়াদে নাছিরপুর বদ্ধ জলমহালটি আপাতত উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। গত ১৬ জুন অনুষ্ঠিত সরকারি জলমহাল ইজারা কমিটির ৮৫তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, পরবর্তীতে মহামান্য আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইজারা পাওয়ার লক্ষ্যে অনলাইনে আবেদন করা তিনটি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির আবেদন – তালতলা (আবেদন নং-২২৬৯১), নগরশ্রীরামপুর (নং-২২৭৭৪) ও নাছিরপুর (নং-২২৬৬২) – বিবেচনার অযোগ্য বিবেচনায় নামঞ্জুর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের স্মারক নম্বর ছিল ৩১.০০.০০০০.০৫০.৬৮.০১৪.২৫.৪৩৬।

স্থানীয় কপিলমুনি ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা কৃষ্ণ চন্দ্র দাশ জানান, নাছিরপুর খালের ৬৮.১০ একর জমি উন্মুক্ত করার বিষয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

সর্বশেষ, বুধবার (২জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইফতেখারুল ইসলাম শামীম, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সৈকত মল্লিক, কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ একরামুল হোসেন, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি ও পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে খাল দখলমুক্ত করার কার্যক্রম শুরু হয়। খালের বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে বসানো সাতটি নেটপাটা পর্যায়ক্রমে অপসারণ করে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেইসঙ্গে খালে দখলমুক্ত ঘোষণাসূচক সাইনবোর্ডও স্থাপন করা হয়।

স্থানীয়রা জানায়, অবৈধ মাছ চাষের ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমে খালের পানি আটকে পড়ে অন্তত ২০টি গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ জলাবদ্ধতার আশঙ্কায় ছিলেন। একইসঙ্গে খালের মাধ্যমে ঢুকে পড়া লবণাক্ত পানি ধান চাষে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি করছিল।

দখলমুক্ত ঘোষণার পর স্থানীয় শত শত মানুষ বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দে মেতে ওঠে। অনেকেই জাল নিয়ে খালে নেমে মাছ ধরায় অংশ নেন। উল্লেখ্য, নাছিরপুর খাল নিয়ে অতীতেও একাধিকবার দখল ও পাল্টা দখল, মামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

সর্বোপরি, এবার প্রশাসনের কঠোর উদ্যোগে খালটি দীর্ঘ সময় পর সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত হলো।

আবির

×