
চারদিকে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউয়ে ঘেরা, কক্সবাজার উপকূলের দ্বীপ কুতুবদিয়া আজ অস্তিত্ব সংকটে। টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে দ্বীপের একাধিক ইউনিয়ন পানির নিচে তলিয়ে যায়। স্থানীয়রা বলছেন, সরকার বদলালেও কুতুবদিয়াবাসীর ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
বিগত কয়েক দফায় বেড়িবাঁধ নির্মাণের টেন্ডার হলেও অভিযোগ উঠেছে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নেতাকর্মীরা কাদা-মাটি ও বালিভর্তি জিও ব্যাগ বসিয়ে টাকার অপব্যবহার করেছেন। ফলে যে বাঁধ হওয়ার কথা ছিল ‘সুপার ডাইক’, তা রয়ে গেছে অস্থায়ী এক বালির দেয়াল মাত্র।
দ্বীপবাসীর ভাষায়, “জোয়ার এলেই ভয়, বর্ষা মানেই সর্বনাশ।” কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের ভাঙনে ইতিমধ্যে হুমকির মুখে পড়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকার বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঐতিহাসিক বাতিঘর, সিবিচ, ও বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা। প্রায় ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অধিকাংশই এখন ভেঙে পড়েছে বা ভাঙনের মুখে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১০-১২টি গ্রামের মানুষ চরম ঝুঁকিতে আছেন। প্রায় ২ লাখ মানুষ দিন কাটাচ্ছেন আতঙ্কে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে নতুন করে পানিতে তলিয়ে যায় ঘরবাড়ি, বাজার, স্কুল-কলেজ এমনকি প্রধান সড়কও। ৬০০ বছরের পুরনো এই দ্বীপে ইতোমধ্যেই বঙ্গোপসাগরে বিলীন হয়েছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভূমি।
উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩৪ বছরে বঙ্গোপসাগরের গর্ভে বিলীন হয়েছে কুতুবদিয়ার ১৮৩ একর জনপদ। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাদাত হোসেন বলেন, “উপজেলার উত্তর ধূরুং, কৈয়ারবিল এবং আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নে বহু এলাকা জোয়ারে ধ্বংস হয়েছে। রেকর্ড না থাকলেও বিলীনের ক্ষতচিহ্ন আজও স্পষ্ট।”
দ্বীপবাসীরা বলছেন, প্রতিবছর বর্ষার আগে নামমাত্র প্রতিরক্ষার জন্য জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ নির্মাণ করা হলেও তা জোয়ারের প্রথম ঢেউতেই ভেঙে পড়ে। তাদের দীর্ঘদিনের দাবি, কুতুবদিয়ার চারপাশে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে টেকসই সুপার ডাইক নির্মাণ করা হোক।
স্থানীয় প্রবীণ মো. হাকিম বলেন, “কতবার এমপি-মন্ত্রী এসেছেন, প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু আজও আমাদের বাঁধ সেই কাদা-বালির, বানের পানিতে যেটা গায়েব হয়ে যায়।”
দ্বীপের মানুষের প্রাণের দাবি, এবার বর্ষা আসার আগেই স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ শুরু হোক। তা না হলে আরেকটি মৌসুম পেরোনোর আগেই হয়তো মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে কুতুবদিয়া নামের এক ঐতিহাসিক দ্বীপ।
মিমিয়া