
ছবি: সংগৃহীত
রংপুর শহরের নীলকণ্ঠ মাস্টারপাড়ার বাসিন্দা কাউসার হোসেনের পরিবারে নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। পরিবারের একমাত্র ছেলে, মাত্র আট বছরের ইরফান হোসেন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। অথচ একসময় স্বচ্ছল এই পরিবারটি আজ চিকিৎসার খরচ তো দূরের কথা, তিনবেলা খাবার জোগাড় করতেও হিমশিম খাচ্ছে।
ইরফানের বাবা কাউসার হোসেন পেশায় ছিলেন একজন ইঞ্জিনিয়ার। কাজ করতেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। ছেলের চিকিৎসায় দিনরাত হাসপাতালে সময় দিতে গিয়ে হারিয়েছেন চাকরিটিও। মা-ও আক্রান্ত হয়েছেন ফ্যাটি লিভার ও হার্নিয়ার মতো জটিল রোগে। কাউসার নিজেও ভুগছেন PLID (Prolapsed Lumbar Intervertebral Disc) সমস্যায়। ফলে এই মুহূর্তে পরিবারটির তিন সদস্যই গুরুতর অসুস্থতায় ভুগছেন।
দুই বছর আগে ইরফানের শরীরে প্রথম টিউমার ধরা পড়ে। তখন অপারেশন ও চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ হলেও, পরবর্তীতে সেই টিউমার থেকে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে শরীরের প্রায় ৬০ শতাংশ অংশে। ছেলের জীবন বাঁচাতে বাবা-মা নিজের চিকিৎসা বন্ধ রেখে গত দুই বছরে প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। চিকিৎসার পেছনে সবকিছু বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে পরিবারটি।
বর্তমানে কেমোথেরাপি ও ওষুধ বাবদ ইরফানের চিকিৎসায় প্রতি মাসে খরচ হয় প্রায় ৪০ হাজার টাকা। অথচ এখন তাদের হাতে কোনো অর্থ নেই। ঋণে ডুবে থাকা পরিবারটি আর কারও কাছে সাহায্য চাইতেও পারছে না — শুধু সহ্য করছে নীরবে।
কাউসার হোসেন বলেন, “আমার বাবা-মা সারাদিন আমার কাছে কান্নাকাটি করে। মনে হয় শরীরের ভিতর থেকে কাটা ঢুকতেছে আর বের হচ্ছে। বড় ছেলে তো সবারই আদরের হয় বেশি, তাকেই চোখের সামনে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যেতে হয়েছে। এখনও ওই দিনের কথা মনে হলে আমি ভেঙে পড়ি।”
ইরফানের শারীরিক অবস্থাও দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। কখনো প্লাটিলেট, কখনো ডব্লিউবিসি কমে যায়, কথা বলার শক্তিও হারিয়ে ফেলে সে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে—নির্বাক, নিঃসহায়।
এমন করুণ অবস্থায় স্বজন ও স্থানীয়রা পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে সমাজের হৃদয়বান ও সামর্থ্যবান মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁদের বিশ্বাস, সবার একটু সহানুভূতি ও সাহায্যই পারে ছোট্ট ইরফানকে নতুন জীবন ফিরিয়ে দিতে।
“ও একটা সোনার টুকরা বাচ্চা, এত ভদ্র, এত শান্ত। আগে হাঁটতো, খেলতো। এখন শুধু বিছানায় শুয়ে থাকে। যদি সরকার চিকিৎসার দায়িত্ব নিত, তাহলে হয়তো সব বদলে যেত,” বলেন একজন আত্মীয়।
আজ এই পরিবারটির একটাই আকুতি— ইরফানকে বাঁচাতে সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিক দেশবাসী। কারণ এই শিশুটির প্রতিটি শ্বাস এখন নির্ভর করছে মানুষের ভালোবাসা আর সহায়তার ওপর।
ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=xYY_zko5mNA
মেহেদী