ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

হুমকিতে পরিবেশ ও প্রকৃতির ভারসাম্য

বান্দরবানে বালাঘাটায় পাহাড় কেটে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের জমি ভরাটের অভিযোগ

মোহাম্মদ আবদুর রহিম, বান্দরবান

প্রকাশিত: ১০:১১, ২৯ মে ২০২৫

বান্দরবানে বালাঘাটায় পাহাড় কেটে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের জমি ভরাটের অভিযোগ

বান্দরবানের বালাঘাটায় ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রের জমি ভরাট করতে নির্বিচারে পাহাড় কাটা হচ্ছে। এই পাহাড় কাটার নেতৃত্ব দিচ্ছেন মো. নাজিম উদ্দিন নামের এক মাটি ব্যবসায়ী।

স্থানীয়রা জানান, বেশ কয়েকদিন ধরে বান্দরবান সদর উপজেলার বালাঘাটা বাকিছড়া, থোয়াইংগ্যাপাড়া এলাকায় মো. নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে নির্বিচারে পাহাড় কাটা হচ্ছে। এরই মধ্যে ৫টি পাহাড় থেকে কয়েক লাখ ঘনফুট মাটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই মাটি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ভরাট করা হচ্ছে বালাঘাটা স্বর্ণ মন্দিরসংলগ্ন নির্মাণাধীন ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রের জমিতে। এতে দেশের প্রচলিত আইন লঙ্ঘনের পাশাপাশি মারাত্মকভাবে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং হুমকিতে পড়ছে প্রকৃতি ও পরিবেশ।

থোয়াইংগ্যাপাড়ার বাসিন্দা মংপ্রু মারমা, বাকিছড়া এলাকার ওসমান, লেমুঝিরি এলাকার আবুল কালাম বলেন, নব্য যুবদল নেতা নাজিম উদ্দিন ক্ষমতার জোরে থোয়াইংগ্যাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের পাহাড়, মো. ইসলাম ও বদরুন নেছা বেগমের পাহাড়, বাকিছড়া এলাকার খায়রুল ইসলামের পাহাড় এবং লেমুঝিরি ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্রের পাশের মোজাফরের পাহাড় কেটে পশ্চিম বালাঘাটা স্বর্ণ মন্দিরসংলগ্ন ব্রিজের পাশের নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের জমি ভরাট করছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দিনদুপুরে পরিবেশ ধ্বংসের এই কর্মকাণ্ড অন্যদেরও পাহাড় কাটতে উৎসাহিত করছে।

থোয়াইংগ্যাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দন কান্তি দেবনাথ জানান, বিদ্যালয়ের পাশের এলাকায় সারাদিন ধরে পাহাড় কাটা হচ্ছে। ভারী মাটিবোঝাই ট্রাকগুলো বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে চলাচল করছে। বর্ষাকালে কাঁচা রাস্তা খুব পিচ্ছিল হয়ে যায়। একদিকে মেশিনের বিকট শব্দে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে বিঘ্ন ঘটছে, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে চরম ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

ট্রাক ড্রাইভার মামুন ও সাইফুল ইসলাম রিমন জানান, তাঁরা দুদিন ধরে ট্রাকে মাটি পরিবহন করছেন। প্রতিদিন প্রতিটি ট্রাকে ৪০ থেকে ৫০টি ট্রিপে মাটি সরানো হচ্ছে। বর্তমানে ৫টি ট্রাক দিয়ে মাটি পরিবহন করা হচ্ছে বলে জানান তাঁরা।

স্কেভেটর চালক জামাল উদ্দিন বলেন, তিনি বালাঘাটার বাসিন্দা নাজিম উদ্দিনের হয়ে কাজ করছেন। নাজিম প্রতি ট্রাক মাটি কাটার জন্য তাঁকে ১৩০ টাকা করে দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত নাজিম উদ্দিন বলেন, বিদ্যুৎ গ্রিড উপকেন্দ্রের জমি ভরাটে তিনি স্থানীয়দের কাছ থেকে মাটি কিনে নিচ্ছেন। পাহাড় কাটার সঙ্গে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেন তিনি।

বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রেজাউল করিম দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, থোয়াইংগ্যাপাড়া এলাকায় পাহাড় কাটার ঘটনায় নাজিম উদ্দিনসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

এ বিষয়ে বান্দরবান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারুফা সুলতানা খান হীরামনি বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়টি শোনার পর ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সজিব

×