
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের ফল রপ্তানিতে নতুন দিগন্তের সূচনা হতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বুকে। প্রথমবারের মতো কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একক বাংলাদেশি ফল মেলা, যা শুরু হবে আগামী ২৫ জুন এবং চলবে পহেলা জুলাই পর্যন্ত। দোহার অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র সুক ওয়াকিফে অনুষ্ঠিতব্য এই মেলায় বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে বাংলাদেশি আম। আয়োজকরা আশা করছেন, মেলায় ৫ লাখ কেজি ফল বিক্রি হবে, যার বড় অংশজুড়েই থাকবে আম, বোম্বাই লিচু, কাঠাল, জামসহ দেশি কৃষিপণ্য।
মেলাটির আয়োজনে রয়েছে কাতারে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান এম্পিরিক রিসার্চ লিমিটেড। এম্পিরিক রিসার্চ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক সোহেল রানা জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ২৭ লাখ টন আম উৎপাদিত হয়। বিশ্বে উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম, কিন্তু রপ্তানির দিক থেকে দেশটি এখনও অনেক পিছিয়ে। অথচ ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী আমের বাজার ছিল ৬৭.৪ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৯ সালের মধ্যে ৯৭.৮২ বিলিয়নে পৌঁছাতে পারে।
সোহেল রানা বলেন, "এই মেলার মাধ্যমে কাতারের বাজারে বাংলাদেশি ফলের অবস্থান তৈরি হবে। এতে শুধু ফল বিক্রি নয়, কৃষিপণ্য রপ্তানির স্থায়ী পথ তৈরি হবে। আমাদের লক্ষ্য—দেশের উৎপাদকদের আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিয়ে আসা। তারা যেন সরাসরি কাতারের খুচরা ও পাইকারি ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন"।
মেলায় ৬০টিরও বেশি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে। এখনো কিছু স্টল ফাঁকা রয়েছে এবং আয়োজকরা জানাচ্ছেন, স্বল্প খরচে অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন কৃষিপণ্য উদ্যোক্তারা। অংশগ্রহণকারীদের সহায়তায় থাকছে ভিসা প্রসেসিং, স্টল প্রস্তুতি, পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও প্রমোশনাল সহযোগিতা।
বাংলাদেশে বর্তমানে শতাধিক জাতের আমের মধ্যে প্রায় ৪৫টি বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে খিরসাপাতি, ফজলি, ল্যাংড়া, আশ্বিনা, হাঁড়িভাঙ্গা ইতোমধ্যেই জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন (GI) স্বীকৃতি পেয়েছে।
জিআই পণ্য হিসেবে এই আমগুলোর গুণগতমান নিয়ন্ত্রণ করে উন্নত দামে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করানো সম্ভব। ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্য, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, বাহরাইন ও সুইডেন-এ বাংলাদেশি আম রপ্তানি শুরু হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, মধ্যপ্রাচ্য এখন সবচেয়ে সম্ভাবনাময় গন্তব্য।
বাংলাদেশি ফল, বিশেষ করে আম, কেবল স্বাদের জন্য নয়—বিশুদ্ধতা, প্রাকৃতিক উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং জাতিগত বৈচিত্র্যের কারণেও বিশ্ববাজারে আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে। দোহার এই মেলাটি শুধু বাণিজ্য নয়, বাংলাদেশের কৃষি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিশ্বদর্শনে উপস্থাপনের একটি সুযোগ।
বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের জন্য এটি হতে পারে এক ঐতিহাসিক মোড়বদলের সূচনা। যদি সঠিক মান বজায় রেখে, পেশাদার রপ্তানি ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়—তবে এই ফল মেলা কেবল এক আয়োজন নয়, বরং বাংলাদেশি কৃষিপণ্যের জন্য বৈশ্বিক রপ্তানির দরজা খুলে দিতে পারে।
ফারুক