ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কর্ম দিবসে খোলেনা প্রাথমিক বিদ্যালয়, ওড়েনা পতাকাও

সুদীপ্ত শামীম, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪:২২, ২৭ মে ২০২৫

কর্ম দিবসে খোলেনা প্রাথমিক বিদ্যালয়, ওড়েনা পতাকাও

সরকারি কর্মদিবস চলমান থাকা সত্ত্বেও টানা এক সপ্তাহ ধরে তালাবদ্ধ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ফলে চরম হতাশা আর ক্ষোভে ভুগছেন এলাকার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের পোড়ার চর এলাকায় অবস্থিত চর ভাটি বুড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে পাঠদানে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। শিক্ষকদের অনুপস্থিতি, নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রম না থাকা এবং প্রশাসনের তদারকির অভাবে বিদ্যালয়টি কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।

সোমবার (২৬ মে) বেলা বারোটার দিকে বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। পুরো বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ফাঁকা। কোথাও কোনো শিক্ষক বা শিক্ষার্থী নেই। শ্রেণিকক্ষগুলো বন্ধ, জানালাগুলো ধুলোয় ভরা। বিদ্যালয় মাঠে কয়েকজন নারী ধান শুকাচ্ছেন।

জাতীয় পতাকাও উত্তোলন করা হয়নি, যা সরকারি বিদ্যালয়ের নিয়মের লঙ্ঘন। এমন চিত্রে স্থানীয়রা হতাশা প্রকাশ করেছেন। এই অবস্থায় চরাঞ্চলের অনেক শিক্ষার্থী নিয়মিত পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। 

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, চর ভাটি বুড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে চরম শিক্ষক সংকটে ভুগছে। বিদ্যালয়টি দুর্গম চরাঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় বেশিরভাগ শিক্ষক সেখানে যোগ দিতে অনিচ্ছুক। ফলে নিয়মিত শিক্ষক নিয়োগ হলেও তারা স্থায়ীভাবে কর্মস্থলে টিকে থাকেন না। বর্তমানে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ মাত্র দুজন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন, যা পাঁচ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত অপ্রতুল। 

স্থানীয় অভিভাবক ফজলু মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলে সকাল সকাল স্কুলে যায়। কিন্তু প্রায়ই গিয়ে দেখে স্কুল বন্ধ। এতে তারা হতাশ হয়ে পড়ে।’

আরেক আব্দুর রফিক বলেন, ‘স্কুলটা যেন শুধু নামেই চলছে। সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে শিক্ষার মানোন্নয়নে, অথচ মাঠপর্যায়ে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।’

অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষকদের দায়িত্বে অবহেলা ও বিদ্যালয়ে নিয়মিত মনিটরিংয়ের অভাবে তাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ায় শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ অবস্থায় এলাকায় শিক্ষার প্রতি অনাগ্রহ ও হতাশা তৈরি হচ্ছে। 

তারা আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীলতা, নিয়মিত তদারকি এবং শিক্ষক সংকট দূরীকরণ ছাড়া এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোনো উপায় নেই। এজন্য দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাফিজার রহমান বলেন, ‘বিদ্যালয়টি প্রায়শই বন্ধ থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, পুরো সপ্তাহই তালাবদ্ধ থাকে। এলাকাবাসী বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার অভিযোগ করেছে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাব—তারা যেন দ্রুত বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, যাতে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাসে ফিরতে পারে।’

নিয়মিত বিদ্যালয় না খোলার বিষয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে জানতে চাইলে চর ভাটি বুড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আতাউর রহমান কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না দিয়ে উল্টো অসহযোগিতা ও দাম্ভিকতার পরিচয় দেন।

তিনি বলেন, ‘আপনি আমার সঙ্গে সরাসরি দেখা করেন। মোবাইলে আপনাকে কোনো বক্তব্য দিতে আমি বাধ্য নই।’ 

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর। আমি এখনই খোঁজ নিচ্ছি এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে শোকজ নোটিশ দেওয়া হবে। তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সজিব

×