
ছবি : জনকণ্ঠ
এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেল কলেজছাত্র আসিফ হোসেনের বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন। মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট আনতে গিয়েছিলেন তিনি। ফেরার পথে ট্রাকচাপায় মর্মান্তিকভাবে নিহত হন আসিফ। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তার বন্ধু রাকিবুল ইসলাম শুভ। রবিবার দুপুর ২টার দিকে যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের যশোরের খয়েরতলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনরা সড়কে গাড়ি আটকে বিক্ষোভ করেন। পরে ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। নিহতের মরদেহ যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
নিহত আসিফ যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ঝাউদিয়া গ্রামের মেহের আলীর ছেলে। গুরুতর আহত রাকিবুল ইসলাম শুভ বর্তমানে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তারা দুজনেই পালবাড়ি এলাকার টেকনিক্যাল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।
নিহতের স্বজন ও পুলিশ জানায়, আগামী মাসে আসিফের মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল। সেই লক্ষ্যে যশোর পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করেন তিনি। রোববার ছিল পাসপোর্ট সংগ্রহের দিন। দুপুরে কলেজের বন্ধু রাকিবকে সঙ্গে নিয়ে পাসপোর্ট আনতে যান। ফেরার পথে খয়েরতলা এলাকায় ঝিনাইদহ থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে তাদের মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলেই আসিফ নিহত হন। স্থানীয়রা গুরুতর আহত রাকিবুলকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
ঘটনার খবর পেয়ে নিহত আসিফের মা, বাবা ও চাচা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। অকালে সন্তান হারিয়ে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন তারা। সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে আহাজারি করছিলেন পরিবারের সদস্যরা। বাবার বুকফাটা আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ।
আসিফের বাবা মেহের আলী বলেন, “আমার তো সব শেষ! হে মাবুদ, তুমি আমার ছেলেটাকে কেন এভাবে কেড়ে নিলে! বিদেশ পাঠাতে চেয়েছিলাম, সব কাগজপত্র প্রস্তুত ছিল। আজ পাসপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল—সে কত খুশি ছিল! পাসপোর্ট আনতে গিয়ে ছেলেটার প্রাণ গেল। আমি কি নিয়ে বাঁচব? বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় সাবধানে গাড়ি চালাতে বলেছিলাম। কিন্তু ছেলেটা ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হলো, আমার স্বপ্নও শেষ হয়ে গেল!”
ঘটনাস্থল থেকে কয়েক গজ দূরেই রয়েছে টেকনিক্যাল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কলেজ। আসিফের মৃত্যুর খবর পেয়ে তার সহপাঠীরাও ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের কান্নায় শোকাবহ পরিবেশ সৃষ্টি হয় খয়েরতলা এলাকায়।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসনাত বলেন, “ঘাতক ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। তবে চালক পালিয়ে গেছে। মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”
সানজানা