
ছবি: জনকন্ঠ
চট্টগ্রামের খাবার মানেই এক আলাদা স্বাদ ও ঘ্রাণের রাজত্ব। এই অঞ্চলের মানুষের পছন্দের তালিকায় যে খাবারটি নিঃসন্দেহে শীর্ষে থাকে, তা হলো শুটকি। অনেকের কাছে এর গন্ধই কষ্টকর, কিন্তু চট্টগ্রামের মানুষের কাছে এই গন্ধেই লুকিয়ে আছে আবেগ, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির এক অমূল্য ধারা।
চট্টগ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারে শুটকির কোনো না কোনো পদ নিয়ে ছোটবেলার স্মৃতি জড়িয়ে থাকে। সকালে বা দুপুরে ভাতের সঙ্গে কই শুটকি, লইট্টা শুটকি কিংবা চিংড়ি শুটকির মজাদার তরকারি—এসব যেন পরিবারের নিত্যদিনের রুটিন। গ্রামে বড় হওয়া চট্টগ্রামের মানুষেরা জানেন, শীতের সকাল বা বৃষ্টিভেজা দুপুরে ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতের সঙ্গে শুটকি ভর্তা হলে আর কিছু লাগে না।
রান্নায় বৈচিত্র্য, স্বাদে রাজা চট্টগ্রামের শুটকি রান্নায় বৈচিত্র্যও চোখে পড়ার মতো।
লইট্টা শুটকির ভুনা, চিংড়ি শুটকি দিয়ে সরিষার তেলে রান্না, কই শুটকির তরকারি, নাগা মরিচ দিয়ে ঝাল শুটকি ভর্তা, এমনকি শুটকি আচারের মতো সংরক্ষণও করা হয়।
বাঁশখালী, সন্দ্বীপ, মহেশখালী কিংবা কক্সবাজার উপকূল থেকে সংগ্রহ করা শুটকি চট্টগ্রামের বাজারে আসে, আর এখান থেকেই ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
শুটকি শুধু খাবার নয়, এটি একটি ঐতিহ্য
চট্টগ্রামের মানুষের জন্য শুটকি শুধু একটি খাদ্যদ্রব্য নয়, এটি একটি আবেগ, একটি সংস্কৃতি, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বহন করে চলেছেন। বিয়েবাড়ি থেকে শুরু করে অতিথি আপ্যায়ন, বহু জায়গায় এখনো শুটকির পদ রাখা হয় বিশেষ মর্যাদায়। এমনকি প্রবাসী চট্টগ্রামবাসীরাও দেশে এলে শুটকির স্বাদ নিতে ভোলেন না।
চ্যালেঞ্জ আর সম্ভাবনা তবে একটা চ্যালেঞ্জও রয়েছে—দূষণ ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে শুটকি প্রস্তুত করার ফলে গুণগতমান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কিন্তু আশার কথা হলো, বর্তমানে অনেক উদ্যোক্তা হাইজেনিকভাবে প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত শুটকি বাজারজাত করছেন, যা স্থানীয় চাহিদার পাশাপাশি রপ্তানির পথও উন্মুক্ত করেছে।
চট্টগ্রামের মানুষ শুটকি ভালোবাসে প্রাণ দিয়ে। শহরের আধুনিক জীবনযাত্রা বদলালেও শুটকির জায়গা এখনো অটুট। ঘ্রাণে ঝাঁজ থাকুক কিংবা স্বাদে তীব্রতা, শুটকি যে চট্টগ্রামের রান্নাঘরে এক অমলিন ভালবাসার নাম—তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
মুমু