ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বেহাল রাস্তায় চরম দুর্ভোগে ছাত্র-ছাত্রীসহ হাজারও মানুষ

এইচ এম মোনায়েম খান,রায়গঞ্জ,সিরাজগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৭:০৩, ২২ মে ২০২৫

বেহাল রাস্তায় চরম দুর্ভোগে ছাত্র-ছাত্রীসহ হাজারও মানুষ

ছবি: জনকণ্ঠ

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা পাবনা বাজারের প্রবেশের প্রধান রাস্তাটি বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীসহ হাজার হাজার মানুষদের। সড়কটি যেন এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, উক্ত সড়ক নির্মাণ কাজে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার করায় সড়কের অনেকস্থানে বড়বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে যানচলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এতে প্রায়ই উক্ত সড়কে যানবাহন ও পথচারীরা দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। সড়কের দুরবস্থা দেখার যেন কেউ নেই।  সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড়বড় গর্ত হয়ে বেহাল দশা বিরাজ করছে। এর মধ্যে বৃষ্টি হলে পানি জমে গর্তগুলোতে কাদা, নর্দমা একাকার হয়ে সড়কটি পুকুরে পরিণত হয়।

বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিন জানা যায়, উপজেলার শ্রেষ্ঠ হাট হিসেবে পরিচিত চান্দাইকোনা পাবনা বাজার হাট। যে হাটে প্রতিবছর রাজস্ব আসে তিন কোটি টাকার উপরে। এই হাটের সড়ক পথে দুটি প্রবেশ পথ রয়েছে। একটি হলো সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক  অপরটি চান্দাইকোনা মহাসড়ক থেকে নেমে হাইস্কুল রোড হয়ে। চান্দাইকোনা মহাসড়ক থেকে নেমে হাইস্কুল রোড হয়ে বাজারের প্রবেশের রাস্তাটি কিছুদিন আগে করা হয়েছে। এই রাস্তা দিয়ে চলে যানবাহন, ভ্যান সাইকেল,চান্দাইকোনা উচ্চ বিদ্যালয়, চান্দাইকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং চান্দাইকোনা দাখিল মাদ্রাসার শতশত শিক্ষার্থী।  শুধু তাই নয় হাজার হাজার মানুষের চলাচলের জন্য একমাত্র ভরসা এই সড়কটি। 

আর ৩/৪ হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন যাওয়া আসা করে। কিন্তু বছর খানেক ধরে সড়কের বেশির ভাগ অংশে কার্পেটিং উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে যানবাহন চলাচলে মারাত্মক অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। সেই সাথে বিপাকে পড়েছেন স্কুল কলেজে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা। গর্তগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে যেন পুকুরে পরিণত হয়ে যায়। সড়কটি খানা খন্দকের কারণে সড়কে দুর্ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্কুল শিক্ষার্থী সিহাবুল আলম সায়েম জানান, রাস্তা দিয়ে স্কুলে আসা যাওয়া করা যায়না। অনেক সময় পড়ে গিয়ে পড়নের ড্রেস এবং বই ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। চান্দাইকোনা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মোঃ শাহীনুল ইসলাম জানান,রাস্তার বেহাল দশার কারণে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে গেছে। স্কুলে যাতায়াতের প্রধান সমস্যা কি এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চান্দাইকোনা উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক জানান, ভাই কি আর বলবো স্কুলে যাওয়ার মূল সমস্যা এই সড়কটি। সড়কের অবস্থা এত খারাপ হওয়ায় প্রতিদিন স্কুলে যেতে মন চায়না। এর মধ্যে এখন প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়, সামান্য বৃষ্টি হলেই আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ রাস্তায় অনেক বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।  গর্তের মধ্যে ময়লা জমে থাকে আর এই ময়লা বৃষ্টির পানি পেলে ভাগাড় হয়ে যায়।

বাজারের বীজ ব্যবসায়ী সুজন কুমার দাস জানান, গ্রাম থেকে কৃষক হাটের দিন কৃষি পণ্য নিয়ে আসেন ভ্যান যোগে। হাটের ভিতরের রাস্তায় এসে কৃষি পণ্য নিয়ে ভ্যান উল্টে যায়। এতে করে কৃষকের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। বীজ ব্যবসায়ী ইমন শেখ জানান, রাস্তা খারাপের কারণে কৃষক আর বাজারে আসছেনা। একারনে তাদের বেচাকেনা কমে গেছে। একই কথা জানান বীজ ব্যবসায়ী পলাশ কুমার দত্ত। তিনি জানান, রাস্তার সমস্যার কারণে ভারি যানবাহন আসছেনা। অন্যত্র মালামাল আনলোড করে দোকানে আনা দ্বিগুণ খরচ হচ্ছে। ভ্যান চালক আব্দুস সালাম জানান, বেশ কিছুদিন যাবৎ তাদের ভ্যানের ভাড়া কমে গেছে। বাজারে মালামাল আনা নেওয়া কমে গেছে। রাস্তার কারণে তাদের প্রতিদিনে আয় কমে গেছে। এজন্য তারাও মানবেতর জীবন যাপন করছে। বিশিষ্ট কাপড় ব্যবসায়ী অশোক কুমার ঘোষ জানান, রাস্তাটি খারাপের জন্য তাদের দোকানেও ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। গ্রাহক আসতে পারছেনা। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চান্দাইকোনা বাজার কমিটির এক সদস্য জানান, আমরা কোটি কোটি টাকা রাজস্ব দিয়ে হাট ডেকে নেই। সেই টাকা কোথা যায় কেউ বলতে পারেনা। প্রতিবছর যে টাকা সরকার রাজস্ব পাচ্ছে সেই টাকা দিয়ে হাটটিকে সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া যাবে। অথচ তার কিছুই দেখা যায়না। মাঝে মধ্যে শুনি হাটের টাকা বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে তুলে খাওয়া হচ্ছে। বৃষ্টি হলেই বাজারের মধ্যে হাঁটু পানি জমে যায়। মূল কথা দেখার কেউ নেই। 

রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ হুমায়ুন কবির জানান,সমস্যার ছবিগুলো আমাকে পাঠান । আমি সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। 

সাব্বির

×