ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫, ৩১ চৈত্র ১৪৩২

ইটভাটার মাটি টানা ট্রাকে নষ্ট হচ্ছে এলজিইডি’র রাস্তা, চরম দুর্ভোগে স্থানীয়রা

মোঃ আশরাফুজ্জামান, কাশিয়ানী, গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:৪৫, ১৪ মে ২০২৫; আপডেট: ২১:৪৫, ১৪ মে ২০২৫

ইটভাটার মাটি টানা ট্রাকে নষ্ট হচ্ছে এলজিইডি’র রাস্তা, চরম দুর্ভোগে স্থানীয়রা

ছ‌বি: জনকণ্ঠ

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে ইটভাটার মাটি ও ইট টানা ট্রাক, ট্রাক্টর ও ভেকু মেশিনের অস্বাভাবিক চলাচলের কারণে সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় শত কোটি টাকার পিচঢালা পাকা রাস্তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রাস্তা রক্ষায় সরকার আইন করলেও প্রশাসন সেই আইনের বাস্তবায়নে তেমন একটা আগ্রহী নয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রতি বছর উপজেলায় ইটভাটায় ইট পোড়ানোর মৌসুম শুরু হলেই মাটি বিক্রির হিড়িক পড়ে যায়। জমির টপসয়েল কেটে কিংবা সমতল জমিতে পুকুর খননের মাধ্যমে মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে ওঠে।

দিন-রাত চলে ভেকু দিয়ে মাটিকাটা, আর সেই মাটি ট্রাক ও ট্রলির মাধ্যমে রাস্তা দিয়ে বহন করা হয়। ফলে রাস্তাগুলো ছোট যানবাহন চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়ে। রাস্তায় মাটি পড়ে থাকার কারণে প্রায়ই যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। অভিযোগ রয়েছে, পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনকে একাধিকবার জানানো হলেও মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় না।

কখনো কখনো সাংবাদিকদের চাপের মুখে মাটিকাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হলেও, বছর শুরুতেই দু-একটি অভিযান চালিয়ে হঠাৎ কোনো এক অদৃশ্য কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় উপজেলার সরকারি রাস্তাগুলো রক্ষার দাবি তুলেছেন উপজেলা পরিষদ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং এলজিইডি'র কর্মকর্তারা।

তাদের ভাষ্য, মাটি ও ইট টানা ট্রলিগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাচল করে, যার ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই নতুন রাস্তা পুরনো ও ভাঙাচোরা চেহারায় ফিরে আসে। এতে জেলা-উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

এদিকে, উপজেলাধীন ফুকরা ইউনিয়নের তারাইল পূর্বপাড়ায় মেসার্স রহুল আমিন ব্রিকস প্রতিষ্ঠানটি মোঃ হায়াত কাজীর জমি থেকে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ট্রলির মাধ্যমে সরকারি এলজিইডি'র রাস্তা ব্যবহার করছে। এতে করে গ্রামীণ পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এবং রাস্তার ওপর মাটি পড়ে গিয়ে যানচলাচল অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই পাকা রাস্তা কাদায় মাখা হয়ে পড়ে, আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলায় ঢাকা পড়ে যায়। ফলে এই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ছে।

স্থানীয়ভাবে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হলে, প্রশাসন মেসার্স রহুল আমিন প্রতিষ্ঠানকে সরকারি রাস্তায় ট্রলি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিলেও প্রতিষ্ঠানটি তা মানছে না।

অন্যদিকে, গত মাসে রামদিয়া বাজার এলাকার তিলছাড়া গ্রামে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে ইটভাটা ও অন্যান্য স্থানে বিক্রি করার অপরাধে মোঃ সাহিনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাত্র ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে। অথচ এই মাটি বিক্রি চক্রের কারণে ওই ইউনিয়নের কোটি কোটি টাকার রাস্তা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

গত বুধবার সকালে উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের ব্যাসপুর মধ্যপাড়ায় একটি জমিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুনমুন পাল। এ সময় মাটি বিক্রেতা ও জমির মালিক মোঃ মিসকাতকে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এ সময় সংশ্লিষ্ট একজনকে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।

এম.কে.

×