
ছবি: জনকণ্ঠ
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় কয়েকবছর আগে মৃত্যুবরণ করা ও চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়াসহ অজ্ঞাত শিক্ষকদের আবেদক এবং স্বাক্ষী সাজিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন প্রেরণের অভিযোগ উঠেছে শিক্ষক মফিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে। আদালতে খালাসপ্রাপ্ত বিষয়সহ মীমাংসিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে মিথ্যা সৃজনকৃত লিখিত দরখাস্ত দিয়ে তদন্তের আয়োজন করেছেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ইউআরসি'র ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ছাকায়েত হোসেন।
এমনি একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (চদা:)(প্রশিক্ষণ) আব্দুল আলীম সোমবার (৫ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাতিয়া উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে তদন্ত কাজ চালান।
ভুক্তভোগী ইউআরসি'র ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ছাকায়েত হোসেন জানান, তাকে যেকোনো মূল্যে ফাঁসানোর জন্য রাজনৈতিক মিথ্যা তকমা লাগিয়ে দক্ষিণ রাজের হাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মফিজ উদ্দিন ও উপজেলা শিক্ষা অফিসে গড়ে উঠা সিন্ডিকেট মিলে অধিদপ্তরে মিথ্যা সৃজনকৃত লিখিত দরখাস্ত দেন। এ চক্রটি ২০১৪ সালে ডিপার্টমেন্টাল ও আদালতের নিষ্পত্তিকৃত বিষয়ে ২০১৭ সালে মৃত্যুবরণ করা মাহবুবিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওহাব, তার ছোট বোন সেলিনা আকতার ও প্রধান শিক্ষক নবীর উদ্দিনকে বাদী করে অভিযোগ দেয়। সিন্ডিকেট সদস্য সহকারী শিক্ষক মফিজ উদ্দিন ছাড়া তদন্তের নোটিশে উল্লেখিত কোন অভিযোগকারী স্বীকার করেননি তাদের অভিযোগ দেওয়ার কথা। একইভাবে হাতিয়া উপজেলার সাবেক সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামকরুল হাসান এবং কয়েকবছর আগে চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়া মিধ্যাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জামসেদ উদ্দিনসহ আবেদনে উল্লেখিত কোনো স্বাক্ষী প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেননি অভিযোগে তাদের স্বাক্ষর করার বিষয়ে।
ছাকায়েতের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর গণিত অলিম্পিয়াড প্রশিক্ষণে শিক্ষক মফিজ উদ্দিনের করা অভিযোগের বিষয়ে ঐ ব্যাচের প্রশিক্ষক এ.এইচ.এম আলাউদ্দিন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর ২০২৪ সালের ১২ জুন আবেদনে অভিযোগটি মিথ্যা ও বানোয়াট বলে উল্লেখ করেন।
এদিকে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে অভিযোগের আবেদক মফিজ উদ্দিনের সাথে প্রতিবেদকের মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি ২০২২ সালে আবেদন করেছেন বলে উল্লেখ করেন। অথচ চলতি বছরের ২০ মার্চ শিক্ষক মফিজ উদ্দিন নতুন কিছু মিথ্যা তথ্য যুক্ত করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে আবারও অভিযোগ দেন। সংযুক্তি হিসেবে যুক্ত করেন ২০১৪ ও ২০২২ সালে মীমাংসিত বিষয়ের বাদী ও স্বাক্ষীদের পূর্বেকার স্বাক্ষর।
তবুও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (চদা:) (প্রশিক্ষণ) আব্দুল আলীম স্বাক্ষরিত নোটিশ দেয় ছাকায়েতকে। নোটিশে তদন্তের জন্য গত ২৮ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টায় হাজির থাকতে বলে পুনরায় আরেকটি নোটিশ দেয় ৫ মে একই সময়ে হাতিয়া রিসোর্সে উপস্থিত থাকার জন্য।
জানা যায়, তদন্ত সংশ্লিষ্ট নয় এমন শিক্ষকদের মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ৫ মে শ্রেণী কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে অফিসে আসতে বাধ্য করেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আ: জব্বার।
সহকারী শিক্ষক মফিজ উদ্দিন বিদ্যালয়ে উপস্থিতিতে অনিয়ম ও অসদাচরণের দায়ে তার স্কুলের (দক্ষিণ রাজের হাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) প্রধান শিক্ষক কাজল রাণী পাল ২০২৪ সালের ৯ জুন হাতিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দেন। এরই প্রেক্ষিতে একই মাসের ১২ তারিখে দুইজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্তে যান। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ২০২৪ সালের ৬জুন- সউশিঅ/নোয়া/হাতিয়া/২০২৪/০৯ স্মারকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেন। কিন্তু শিক্ষা কর্মকর্তা এর কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে অনিয়মে সহযোগিতা করে যান।
এর আগে শিক্ষক মফিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর হাতিয়া কন্ঠে "হাতিয়ায় শিক্ষক মফিজের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ " শিরোনাম এবং একই বছরের ১৮ নভেম্বর দৈনিক নয়া পৃথিবী পত্রিকায় "হাতিয়ায় শিক্ষক মফিজের বিরুদ্ধে ছাত্রীদেরকে যৌন হয়রানি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ" শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়।
এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (চদা:) (প্রশিক্ষণ) আব্দুল আলীমকে তদন্তের দিন বিকেলে মোবাইল ফোনে বার বার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
আবীর