
ছবি: সংগৃহীত
প্রতি বছর ১ মে আসে একরাশ আশাবাদ আর প্রতিজ্ঞা নিয়ে। শ্রমিকদের সম্মান জানানোর, তাদের অধিকার স্মরণ করার এবং ন্যায্য দাবিগুলো উচ্চারিত করার একটি আন্তর্জাতিক দিন এটি। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী নানা আয়োজনে পালিত হয় শ্রমিক দিবস।
কিন্তু যখন ২ মে আসে, তখন সেই শোরগোল, প্রতিশ্রুতি, ব্যানার-পোস্টার, শ্লোগান—সব যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। বাস্তবতা এসে দাঁড়ায় শ্রমিকের ঘাড়ে। শ্রমিক দিবসের পরদিন শ্রমজীবী মানুষের জন্য কেমন যায়, সেই প্রশ্নটি খুব কমই তোলা হয়। অথচ এই দিনটি আরও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ১ মে’র পরদিন থেকেই আবারও শুরু হয় সেই চেনা জীবন—যেখানে শ্রম আছে, কিন্তু সম্মান কম; কাজ আছে, কিন্তু সুরক্ষা নেই; ঘাম আছে, কিন্তু ন্যায্য মজুরি নেই। বাংলাদেশের গার্মেন্টস, নির্মাণ, পরিবহন, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ প্রায় সব খাতে কর্মরত শ্রমিকরা এখনও নানান বঞ্চনার শিকার। কেউ হয়তো মাসের পর মাস বেতন পান না, আবার কেউ শ্রমঘণ্টা বেশি দিয়ে মজুরি পান কম। অনেক ক্ষেত্রেই নেই কোনো নিয়োগপত্র, নেই চিকিৎসা সুবিধা, নেই মাতৃত্বকালীন ছুটি কিংবা বার্ষিক ছুটি। শ্রম আইন আছে কাগজে-কলমে, বাস্তবে তার প্রয়োগ বড়ই দুর্বল। বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের অবস্থা আরও নাজুক। তাদের জন্য কর্মপরিবেশ প্রায়শই নিরাপদ নয়। যৌন হয়রানি, মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে সমস্যা, ডে-কেয়ার সুবিধার অভাব—এসব যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। অথচ তারাও দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন।
শ্রমিক দিবস শুধু একটি ছুটি নয়, এটি একটি প্রতিশ্রুতির দিন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি তখনই অর্থবহ হয়, যখন তা বাস্তবায়ন করা যায়। আমরা প্রতিবছর নানা দাবি শুনি—ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির, সাপ্তাহিক ছুটির, বোনাস পাওয়ার, শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার। কিন্তু দ্বিতীয় দিনেই সেই দাবিগুলো বিস্মৃত হয়। মালিকপক্ষ, সরকার ও নীতিনির্ধারকরা যেন আবারও নিজেদের পথে ফিরে যান। এ অবস্থার পরিবর্তনে চাই শ্রমিকদের অংশগ্রহণমূলক নেতৃত্ব, জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান, এবং শক্তিশালী শ্রমিক ইউনিয়ন। ইউনিয়ন গঠন এখনো বহু প্রতিষ্ঠানে মালিকপক্ষ বাধা দেয়। শ্রমিকদের কণ্ঠস্বরকে দমন করা হয় চাকরি হারানোর ভয় দেখিয়ে। অথচ সংবিধানে এই অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।
শ্রমিক দিবস যদি সত্যিকার অর্থে শ্রমিকদের জন্য হয়, তবে সেটা শুধু ফুলেল শুভেচ্ছায় সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। তাদের মৌলিক অধিকার, সুরক্ষা ও মর্যাদার নিশ্চয়তা দিতে হবে। আমরা যদি সত্যিকার অর্থে শ্রমিকের সম্মান দিতে চাই, তবে প্রতিদিনের নীতিনির্ধারণে, বাজেট বণ্টনে এবং কর্মক্ষেত্রের সংস্কারে শ্রমিকদের গুরুত্ব দিতে হবে। দ্বিতীয় দিনই হতে পারে সেই চর্চার সূচনা—যেদিন আমরা প্রশ্ন তুলব, “আসলে কতটা পালিত হলো শ্রমিক দিবস?” কথায় নয়, এখন দরকার কাজে দেখানো। ২ মে থেকে শুরু হোক শ্রমিক অধিকার বাস্তবায়নের নতুন পথচলা।
আসিফ