
মাদারীপুরের রাজৈরে মসজিদে নামাজ পড়ার মুসল্লী ভাগাভাগি নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ
মাদারীপুরের রাজৈরে মসজিদে নামাজ পড়ার মুসল্লী ভাগাভাগি নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজৈর উপজেলার পাইকপাড়া ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।আহতদের মধ্যে মজিবর মুন্সী (৫৫) নামে একজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, পাইকপাড়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি টিটু শেখ ও তার দুই সহকারীকে মাদক সেবনে বাধা দেওয়ায় এ কান্ড ঘটেছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, দুটি মসজিদে বিভক্ত হয়ে নামাজ পড়াকে কেন্দ্র করে বাবলু শেখ ও চুন্নু মুন্সী দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এরই জের ধরে বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে চুন্নুর ভাতিজা সাইদুল মুন্সী (১৮) ও বাবলু গ্রুপের রয়েজ শেখের(২৫) বাকবিতন্ডা হয়। এ ঘটনা মিমাংসার জন্য আজ (শুক্রবার) সকালে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা দুই পক্ষের লোকজন নিয়ে শালিসিতে বসেন। এসময় কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এ সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহত মজিবর মুন্সীকে (৫৫) ঢাকা মেডিকেলে ও বেলাল শেখকে (৪৫) ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যান্য আহতদের মধ্যে বক্কর মুন্সী (২০), গিয়াস শেখ (৩৫), তানভীর শেখ (১৮), সাইদুল মুন্সী (১৮), বাবুল মুন্সী ও দৌলা রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। বাকি আহতরা বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
এ ব্যাপারে বাবলু শেখ বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে ভূড়ি ছাড়াই দেওয়ার হুমকি দিছে চুন্নু। এ নিয়ে মারামারি হইছে। শালিসরা উস্কানি দিয়া এই গেঞ্জামের সৃষ্টি করছে।
চুন্নু মুন্সীর ছেলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ রাজৈর শাখার সহ-সভাপতি কামরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, আমাদের বাড়ির পাশে আমার ফুফু নতুন বিল্ডিং করতেছেন। সেই নির্মাণাধীন বিল্ডিং-এ প্রতিদিন মাদকসেবন করতে যায় ৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি টিটু ও তার দুই সহকারী ইসলাইল শেখ ও ইব্রাহিম শেখ। এজন্য আমার বাবা তাদের বিল্ডিং-এ উঠতে নিষেধ করলে তারা বেয়াদবি করে। এ ঘটনা এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সবাই জানেন। সেজন্য শালিস বসানো হয়েছিল। এদিকে মিমাংসা হলেও বাড়িতে তারা হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে।
ইউপি সদস্য জিয়াউর রহমান বলেন, পান্নু মুন্সী ও রোকন উদ্দিন শেখ সম্পর্কে মামা-ভাগনে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) নান্নু মুন্সী ও পান্নু মুন্সী দুই ভাইয়ের মধ্যে পান্নুকে ভালো বলে রোকন উদ্দিন। এ নিয়ে নান্নুর ছেলে সাইদুল ও রোকন উদ্দিনের ছেলে রয়েজের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। সেই ঘটনা মিমাংসার জন্য শালিস বসেছিল। সেই শালিসের মধ্যেই দুই পক্ষের লোকজন উত্তেজিত হয়ে সংঘর্ষ বাধায়। দুই পক্ষই খারাপ।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজৈর থানার এস আই শেখ নুরুল ইসলাম জানান, দুই পক্ষ আলাদা আলাদা কথা বললেও জানা গেছে মসজিদে নামাজ পড়াকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আগে তারা এক সাথে এক মসজিদে নামাজ পড়তো। কিন্তু এখন আলাদা মসজিদ নির্মাণ করে সেখানে নামাজ পড়ে। এক মসজিদ এলাকা থেকে আরেক মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়ায় মুসল্লীদের নিষেধ করায় দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। এরপরও কোন ঝামেলা হলে উভয়পক্ষকে থানায় অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে।
সায়মা ইসলাম