
লিবিয়ার বন্দিশালায় নির্যাতনে আবারও বাংলাদেশি এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর পরে মৃতদেহ অভিবাসী ট্রলারে করে অন্য যুবকদের সাথে পাঠানো হয় ইতালী। ইতালী পৌঁছানোর পর সেখান থেকে পরিবারে মৃত্যুর খবর আসলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন স্বজন ও পাড়াপ্রতিবেশি। এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।
জানা যায়, ৭ মাস আগে উন্নত জীবনের আশায় ইতালীর উদ্দেশ্যে বাড়ি ছাড়েন মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের খাটোপাড়া গ্রামের শহিদুল বেপারীর ছেলে সাইদুল বেপারী। এরপর লিবিয়ার বন্দিশালায় আটকে নির্যাতন করে পরিবারের কাছ থেকে দফায় দফায় আদায় করা হয় মুক্তিপনের ৬০ লাখ টাকা। ভিটেমাটি বিক্রি করে টাকা দিয়ে নিঃশ্ব সাইদুলের পরিবার।
স্বজনদের অভিযোগ, মানবপাচাকারী চক্রের সদস্য আদিত্যপুর গ্রামের লালু খানের ছেলে শিপন খান প্রলোভন দেখিয়ে সাইদুলকে লিবিয়া নিয়ে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেয়। পরে মাফিয়াদের নির্যাতনে মৃত্যু হলে ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মৃতদেহ ট্রলারে করে অন্য অভিবাসীদের পাঠানো হয় ইতালী। বহনকারী ট্রলার ইতালী পৌঁছায়। এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি পরিবারে মৃত্যুর খবর আসলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন স্বজনরা। বিচার দাবি করেন দালালের।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে লিবিয়ার বন্দিশালায় নির্যাতনে যুবকের মৃত্যু। আদরের সন্তানের এমন মৃত্যুতে দিশেহারা পরিবার। ঘটনাটি টাকা দিয়ে মীমাংসার জন্য স্থানীয় মাদবররা নিহত সাইদুলের পরিবারকে চাপ দিচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নিহতের বাবা শহিদুল বেপারী বলেন, দালালে লিবিয়া নিয়ে আমার ছেলেকে বন্দি করে রাখে। এরপর নির্যাতন করে ধাপে ধাপে ৬০ লাখ টাকা নেয়। সাইদুলকে তিনবেলা খাবারও দিতোনা। একপর্যায়ে মারা গেলে মরদেহ ট্রলারে করে ইতালী পাঠায়। আমার দালাল শিপন খানের কঠিন বিচার চাই। এমন ঘটনা ভবিষ্যতে যেন শিপন আর করতে সাহস না পায়।
প্রতিবেশি সাহাবুদ্দিন বেপারী বলেন, মানুষের কাছ থেকে ধারদেনা হয়ে, চড়া সুদে টাকা এনে দালালের হাতে তুলে দেয়া হয় ৬০ লাখ টাকা। কয়েক দফায় এই টাকা নেয় শিপন খান। মিথ্যের আশ্বাসে ভুলে ছেলেকে ইতালী পাঠানোর স্বপ্নে এখন পুরো পরিবার নিঃশ্ব। এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এলাকাবাসীর দাবি, মানবপাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য শিপন খান দীর্ঘদিন ধরে ইতালীর প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়া নিয়ে জিম্মি করে এভাবে মুক্তিপনের লাখ লাখ টাকা আদায় করে। পরে পরিবারকে নিঃশ্ব করে ফেলে। লিবিয়ার মাফিয়াচক্রের সাথে যোগাযোগে এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে শিপন খান।
এদিকে অভিযুক্ত দালাল শিপন খান মুঠোফোনে বলেন, ঘটনাটি মীমাংসা হয়েছে। নতুন করে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ দেয়ার কথা নয়। লিবিয়া দিয়ে ইতালী যাবার পথে একটি দুর্ঘটনায় সাইদুলের মৃত্যু হয়েছেও বলেও দাবি করেন শিপন খান।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোকছেদুর রহমান বলেন, লিবিয়ায় নির্যাতনে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। নিহতের পরিবার থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
শিহাব