ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ৭ মাঘ ১৪৩১

বরিশালে নৌপথের যাত্রীদের  নেই নিরাপত্তা

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪; আপডেট: ২০:৪৩, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪

বরিশালে নৌপথের যাত্রীদের  নেই নিরাপত্তা

.

বরিশাল সদর থেকে দ্বীপ জেলা ভোলা ও দ্বীপ উপজেলা মেহেন্দিগঞ্জে আজও সরাসরি সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন হয়নি। যে কারণে বাধ্য হয়েই নদীপথে এ জনপদের মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। সেক্ষেত্রে লঞ্চ প্রধান বাহন হলেও সময় স্বল্পতার কারণে স্পিডবোটে যাতায়াত করেন বিপুলসংখ্যক যাত্রী।
তবে যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জাম এ রুটের লঞ্চগুলোতে যেমন নেই, তেমনি স্পিডবোটগুলোর ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। বরং দ্রুতগতির যান হওয়ায় যে ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম বিশেষ করে লাইফ জ্যাকেট থাকার কথা তা বেশিরভাগ স্পিডবোটেই দেখা যায় না। ফলে ছোট-বড় দুর্ঘটনা লেগেই আছে। বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই। 
বরিশাল-ভোলা নৌরুটের নিয়মিত যাত্রী হুমায়ুন কবির বলেন, স্বল্প সময়ে বরিশাল থেকে ভোলা পৌঁছতে স্পিডবোটের রুট জনপ্রিয়। তবে এ রুটের বোটগুলো যেমন পুরাতন, তেমনি বেশিরভাগ চালকই অনভিজ্ঞ। প্রায়ই ইঞ্জিন বিকল হয়ে মাঝ নদীতে উৎকণ্ঠা নিয়ে ভেসে থাকতে হয় যাত্রীদের। আবার যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য দায়সারা কিছু সরঞ্জাম রাখা হয় স্পিডবোটগুলোতে। কিন্তু সেগুলোও ব্যবহারে নেই কোনো উদ্যোগ। তিনি আরও বলেন, স্পিডবোটে লাইফ সেফটি হিসেবে জ্যাকেট থাকে, তবে দেখা যায় দশজন যাত্রী হলে ৮টি থাকে। আবার যাত্রীদের হলেও চালকের নেই। তবে বেশিরভাগ জ্যাকেটই খুব পুরাতন, নয়তো বিভিন্ন অংশ নষ্ট থাকে। যা দুর্ঘটনার সময় কাজেই লাগে না।
সূত্রমতে, গত ৫ ডিসেম্বর বরিশাল-ভোলা রুটে দুর্ঘটনায় এ অবধি চালকসহ চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। যাদের কারও শরীরে লাইফ জ্যাকেট ছিল না। নিহত একজনের স্বজন শরিফুল ইসলাম বলেন, লাইফ জ্যাকেটটা শরীরে থাকলে অন্তত দুর্ঘটনা ঘটার পর তাৎক্ষণিক পানির ওপরে ভেসে ওঠার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু চালকসহ মৃত কোনো ব্যক্তির শরীরে লাইফ জ্যাকেট ছিল না। যে কারণে মৃত্যুর পরেও মরদেহ পেতে দুই দিন সময় লেগেছে। তিনি আরও বলেন, এ রুটটি টিকে থাকা উচিত। কারণ বরিশালের সঙ্গে ভোলার একমাত্র সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা এটি। তবে অবৈধ ও অনিরাপদ স্পিডবোটগুলো বাদ দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে নিরাপত্তা সরঞ্জাম নিশ্চিতের পাশাপাশি একটি নীতিমালার মধ্য দিয়ে বোট চালনার ওপর বিআইডব্লিউটিএর জোর দেওয়া উচিত।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে চাননি। তবে নৌপুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম হিসেবে ঘাট ত্যাগের পূর্বে বোটগুলোতে লাইফ জ্যাকেট নিশ্চিত করা হয়। সেই সঙ্গে সন্ধ্যার পরে বোট চালনা বন্ধ রাখাসহ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয়ে চালক ও শ্রমিকদের সতর্ক করা হয়ে থাকে। তবে অনেক যাত্রী লাইফ জ্যাকেট পরিধান করতে অনীহা প্রকাশ করে বলে জানিয়েছেন বোট চালকরা। তারা বলছেন, গরম লাগাসহ নানান অজুহাতে যাত্রীরা লাইফ জ্যাকেট থাকলেও পরিধান করতে চান না। 
এ ব্যাপারে বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি স্পিডবোটের গতি নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

জোবায়ের আহমেদ

×