ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ঋণ না পেয়ে ব্যাংক ম্যানেজারকে মারধর, ২ যুবদল কর্মীর নামে মামলা

প্রকাশিত: ০৭:১৪, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

ঋণ না পেয়ে ব্যাংক ম্যানেজারকে মারধর, ২ যুবদল কর্মীর নামে মামলা

ছবি: সংগৃহীত।

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায় কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমানের ওপর হামলা ও ভল্টের চাবি ছিনতাইয়ের ঘটনায় দুই যুবদল কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ভবানীপুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। সংঘবদ্ধ একদল যুবক ব্যাংক ম্যানেজারকে মারধর করে এবং তার কাছ থেকে ব্যাংকের ভল্টের চাবি ছিনতাই করে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় রাতে ব্যাংক কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান বাদী হয়ে দুই জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও তিনজনকে অজ্ঞাত আসামি করে গৌরীপুর থানায় মামলা করেছেন। এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, অভিযুক্তরা দুজনই দুই লাখ টাকা ঋণ চেয়েছিলেন, কিন্তু তাদের আবেদন পর্যালোচনা করে ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি ওবায়দুর রহমান বলেন, ব্যাংকের ভল্টের চাবি ছিনতাই হওয়ায় বুধবার রাতভর ব্যাংকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। এ কাজে নেতৃত্ব দেওয়া দুই জন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তবে তাদের পদ-পদবি নেই। ব্যাংকের ভল্টের চাবি ছিনিয়ে নেওয়ার পর স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের চাপ প্রয়োগ করা হলে তারা লোক মারফত রাতেই লুট করা ব্যাগটি থানায় পৌঁছে দেন। তবে মূল অপরাধীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। ওই চাবি পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।

এদিকে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ময়মনসিংহ উত্তর জেলা শাখার উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) কামরুল হাসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ব্যাংকের ভল্টের চাবি ছিনতাই হওয়ায় আজ জেলা কার্যালয়ের সংরক্ষিত চাবি এনে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালানো হয়েছে।

কৃষি ব্যাংক সোহাগী বাজার শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান বলেন, প্রতিদিনের মতো বুধবার সন্ধ্যায় ব্যাংকের কাজ শেষ করে মোটরসাইকেলে করে গৌরীপুর উপজেলার নিজ বাড়িতে ফিরছিলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গৌরীপুর উপজেলার ভবানীপুর এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে একটি মোটরসাইকেল দ্রুতগতিতে এসে পথ আটকে ধরে। মোটরসাইকেলটিতে আরোহী ছিলেন তিন জন। সঙ্গে আগে থেকে আরও কয়েকজন ওতপেতে ছিলেন। ছয় থেকে সাত সদস্যের ওই সংঘবদ্ধ দল মারধর শুরু করে। এ সময় সঙ্গে থাকা ব্যাংকের ভল্টের চাবিসহ সবকিছু নিয়ে যায়।

এই কর্মকর্তা দাবি করেন, মারধরে নেতৃত্ব দেওয়া দুই তরুণকে চিনতে পেরেছেন। তারা হলেন- ঈশ্বরগঞ্জের সোহাগী ইউনিয়নের দড়িবড়ভাগ গ্রামের সাদেক মিয়ার ছেলে নাহিদ হাসান রাসেল (২৪) ও দরিবৃ গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে আজিজুল হক (২২)।

তিনি আরও বলেন, ওই দুই তরুণ এক সপ্তাহ আগে ব্যাংক থেকে দুই লাখ টাকা ঋণের জন্য আবেদন করেছিলেন। সেই ঋণের আবেদন যাচাই–বাছাই করে ঋণ আবেদন নামঞ্জুর করা হয়। কারণ, তাদের বাবার নামে খেলাপি ঋণ ছিল। পরে ওই দুই তরুণ তাকে চাপ প্রয়োগ করেন ঋণ দিতে। কিন্তু ঋণ দিতে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে গালাগাল ও হুমকি দিয়ে ব্যাংক ত্যাগ করেন। পরে বুধবার সন্ধ্যায় বাসায় যাওয়ার সময় পূর্বপরিকল্পিতভাবে হামলা ও ভল্টের চাবি ছিনতাই করেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনের বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য শাহ নুরুল কবীর বলেন, ‘যারা ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাদের আমি চিনি না। তারা (অভিযুক্তরা) কার সঙ্গে রাজনীতি করেন, পরিচয় কী, তা আমার জানা নেই। থানার ওসি অনুরোধ করায় ব্যাগটি উদ্ধারে ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ওসি সাহেবকে বলেছি, আমার কোনও আপত্তি নেই, আপনার (ওসি) যা খুশি অ্যাকশন নেন। বিএনপির নাম ভাঙিয়ে যদি কিছু করে থাকে, কঠিন ব্যবস্থান নেন।’

গৌরীপুর থানার ওসি মির্জা মাযহারুল আনোয়ার বলেন, ব্যাংক ঋণ না দেওয়ায় ব্যবস্থাপকের পথ আটকে ব্যাংকের ভল্টের চাবিসহ ব্যাগ নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত যুবকেরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।

নুসরাত

×