চিকিৎসকসহ জনবল সংকটে কলাপাড়ার ৫০ শয্যার হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালে আসা রোগিরা বঞ্চিত হচ্ছেন যথাযথ চিকিৎসা সেবা থেকে। একই দশা উপজেলার কুয়াকাটা ২০ শয্যার হাসপাতাল ও মহিপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের। সরেজমিনে দেখা গেছে, কলাপাড়া হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৩০০-৩৫০ জন রোগি চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। মাত্র ৩-৪ জন চিকিৎসক তাদের অফিস চলাকালীন সময়ের মধ্যে এ পরিমাণ রোগির চিকিৎসা সেবা দিতে পারেন না। বাধ্য হয়ে ভিজিট দিয়ে রোগিদের অফিস সময়ের পরে বাইরে চেম্বারে চিকিৎসা সেবা নিতে হয়। ফলে দরিদ্র রোগিদের ভোগান্তির শেষ নেই। একইভাবে ভর্তি হওয়া রোগির চাপও থাকছে অনেক বেশি।
৫০ শয্যার উপজেলা সদরের এ হাসপাতালটিতে শনিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, শয্যার চেয়ে ভর্তি হওয়া রোগির সংখ্যা বেশি। শুক্রবার রাত পর্যন্ত প্রাপ্ত বয়ষ্ক পুরুষ ২৭ জন, নারী ২০ জন, শিশু ছেলে ১০ ও মেয়ে ৭ জন মিলে মোট ৬৪ জন রোগি ভর্তি রয়েছে। এছাড়া প্রতিনিয়ত ২-৩ জন ডেঙ্গু রোগি শণাক্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। বহির্বিভাগের অবস্থা আরও জটিল। দুপুর পর্যন্ত ৩৩৭ জন রোগি চিকিৎসা সেবার জন্য স্লিপ সংগ্রহ করেছে। জানা গেল, বৃহস্পতিবারে আউটডোরে চিকিৎসা সেবা নেয় ৩৮৮ জন। চিকিৎসক জেএইচ খান লেলিন ও কামরুন্নাহার মিলির চেম্বারের ভিতরে ও সামনে অসংখ্য রোগির ভিড় রয়েছে। যেন সামাল দেওয়া কষ্টকর।
কলাপাড়া উপজেলাসদরসহ কুয়াকাটা এবং মহিপুর নিয়ে মাত্র ১১ জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসককে অধিকাংশ সময় প্রশাসনিক নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। এর মধ্যে একজন চিকিৎসক প্রেষণে পটুয়াখালী রয়েছেন। অথচ চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩৬ জনের। কলাপাড়া উপজেলা সদরে মাত্র চারজন চিকিৎসক বহির্বিভাগে দৈনিক তিন-সাড়ে তিন শ’ রোগির চিকিৎসা সেব সামাল দিচ্ছেন। যাতে একেজন রোগিকে সর্বোচ্চ ৫ মিনিট সময় দেওয়া সম্ভব নয়। চিকিৎসক সংকটে জরুরি বিভাগ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়। একইভাবে কর্মচারীর ৭৬টি পদ খালি রয়েছে। সমস্যার যেন শেষ নেই। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করাতে হয় আউটসোর্সিংয়ের জনবল দিয়ে। একই দশা কুয়াকাটা হাসপাতালের।
হাসপাতালে সরকারিভাবে টাইফয়েড, হেপাটাইটিস বি-সি, প্রেগনেন্সী, কিডনি, জন্ডিস, সিকলিস, এইডস ভাইরাস, এক্সরে, ডায়াবেটিকসহ অসংখ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা সপ্লমূল্যে করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু রোগিদের অভিযোগ, কতিপয় চিকিৎসক তাদের নিজেদের পছন্দের ক্লিনিকে পরীক্ষার জন্য পাঠান। তবে বেশ কিছু ওষুধপত্র রোগিরা বিনামূল্যে পেয়ে আসছেন। কিন্তু এ বছরের জুন মাসের পর থেকে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার জরুরি কিছু মেডিসিন ঠিকাদার সরবরাহ না করায় রোগিরা বঞ্চিত হচ্ছেন চিকিৎসা সেবা থেকে। হাসপাতালের বাথরুম-টয়লেট পরিচ্ছন্নতা নিয়ে রোগিদের অভিযোগ রয়েছে। কতিপয় নার্স-আয়া, ক্লিনারদের বিরুদ্ধে রোগিদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের কথা শোনা গেছে।
রোগিদের খাবারের মান নিয়ে উঠেছে এন্তার অভিযোগ। মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া রোগি পারভিন জানান, চারদিন আগে সে ভর্তি হয়েছেন। কিছু ওষুধপত্র হাসপাতাল থেকে পাচ্ছেন। বাইরে থেকে কিনতেও হয়েছে। জানালেন, শনিবার সকালে রুটি আর একটি কলা দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার রাতে ও দুপুরে দেওয়া হয়েছে সেদ্ধ একটি করে ডিম আলুর ঝোলসহ রান্না করা। এমটাই চলে অধিকাংশ দিন। তবে শনিবার দুপুরে বয়লার মুরগি রান্নার কথা জানালেন বাবুর্চি। আবাসিক মেডিকেল অফিসার জেএইচ খান লেলিন জানান, খাবারের মান নিয়ে ঠিকাদারকে বহুবার সতর্ক করা হয়েছে। আবারও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেন। তিনি জানালেন, কলাপাড়া উপজেলা ছাড়াও পাশের আমতলী, তালতলী ও রাঙ্গাবালী উপজেলার অসংখ্য রোগি এই হাসপাতালে প্রতিনিয়ত চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। চিকিৎসক সংকট দূর হওয়া প্রয়োজন বলে জানালেন তিনি।
হাসপাতালের আরেক বড় সমস্যা তিন ফেইজ বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকা। সিঙ্গেল ফেইজ সংযোগ থাকায় লোডশেডিংএর কবলে পড়তে হয়। জেনারেটর থাকলেও সবসময় জালানি সংকুলান দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। আর্থিক সংকট রয়েছে। আর বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে ভ্যাকসিন মান নিয়ন্ত্রণ করে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা অসম্ভব হয়ে ওঠে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আমরা কলাবাসী’র’ সভাপতি সংগঠক নজরুল ইসলাম জানান, এই জনপদের মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে জরুরিভাবে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক পদায়ন করা প্রয়োজন। পাশাপাশি হাসপাতালটির শয্যা সংখ্যা বাড়ানো দরকার। এছাড়া সরকারিভাবে বিনামূল্যে রোগিকে ওষুধ প্রদান নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভর্তি হওয়া রোগিদের মানসম্মত খাবার নিশ্চিত করা দরকার।
হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার বেহাল দশা
২৫ চিকিৎসক ৭৬ কর্মচারির পদশূণ্য ॥ কর্মরত ১১ চিকিৎসক ॥ রোগির খাবার মান নিম্নমানের
শীর্ষ সংবাদ: