![হাসনাবাদ ছন্দা সিনেমা হল বিক্রি, সেখানে হচ্ছে মাদ্রাসা! হাসনাবাদ ছন্দা সিনেমা হল বিক্রি, সেখানে হচ্ছে মাদ্রাসা!](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2023May/সিনেমা-হল-02-2404210300.jpg)
ছন্দা সিনেমা হল
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার হাসনাবাদ এলাকার ছন্দা সিনেমা হলটি অবশেষে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সিনেমা হলটি ভেঙে প্রতিষ্ঠা করা হবে ইদরিসিয়া দারুল কুরআন মাদ্রাসা নামে একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে বিক্রির প্রক্রিয়া শেষ বলে জানিয়েছেন মালিকপক্ষ ও অত্র মাদ্রাসার জীম্মাদার মাওলানা মোকাররম হোসেন। সিনেমা হলের জমিটি ক্রয় করার জন্য ২০ লাখ টাকা বায়নাও করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সিনেমা হলের সামনের রাস্তার পার্শ্বে প্রচারে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিবৃন্দ নামে একটি ব্যানার সাটানো রয়েছে। ব্যানারে লেখা রয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ ছন্দা সিনেমা হলটি মাদরাসার জন্য বায়না করা হয়েছে। চুক্তিমূল্য ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা, বায়না মূল্য ২০ লাখ টাকা। সদকায়ে জারিয়ার এ মহৎ কাজে আপনাদের আন্তরিক দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি। মাদরাসার রশিদ ছাড়া কোনোপ্রকার লেনদেন করবেন না।
ইদরিসিয়া দারুল কুরআন মাদ্রাসার জীম্মাদার মাওলানা মোকাররম হোসেন বলেন, জমির বায়না করা হয়েছে ২০ লাখ টাকা। বাকি টাকা পরিশোধের জন্য ভিত্তবানসহ সাধারণ মানুষের নিকট সাহায্যও চাওয়া হচ্ছে। আশা করি খুব দ্রুতই জমির নির্ধারিত মূল্যের বাকি টাকা পরিশোধ করে মাদ্রাসা সম্প্রসারণসহ অন্যান্য আনুসাঙ্গিক কার্যক্রম শুরু করা হবে। দলিলকরাসহ প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয় হবে।
নরসিংদীর প্রবীণ চলচ্চিত্র প্রয়োজক শামসুর রহমান পিন্টু বলেন, দেশের চলচ্চিত্র প্রদর্শন শিল্প ক্রান্তিকাল পার করছে। ক্রমশঃ নিভে যাচ্ছে দেশের হলগুলোর রূপালী পর্দার আলো। নরসিংদীতে গত দুই দশকে বন্ধ হয়ে গেছে ১৫টির বেশি প্রেক্ষাগৃহ। সর্বশেষ হাসনাবাদের ৯০ দশকের ছন্দা সিনেমা হল বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ঢিমেতালে নরসিংদীতে টিকে আছে দু-একটি সিনেমা হল। তাছাড়া বর্তমান ডিজিটাল যুগে সবার হাতে স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট থাকায় এখন সিনেমা, নাটকসহ চিত্তবিনোদন হাতের মুঠোয়। তাই এখন আর সিনেমা হলে যেতে হয় না। মানুষ মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ-ডেক্সটপেই ইন্টার নেটের মাধ্যমে সিনেমা, নাটক ইত্যাদি দেখে থাকে।
সিনেমা হলের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইমন খান জানান, বর্তমানে সিনেমা ব্যবসা মন্দা হওয়ায় তাদের অবস্থা শোচনীয়। মালিকপক্ষ ঠিক মতো বেতন দিতে পারে না। সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই অন্য পেশা বেছে নিচ্ছে।
ছন্দা সিনেমা হলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রুবেল আহমেদ বলেন, দীর্ঘ দিন লোকসান গুনে হলটি চলছিল। মাস শেষে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন, বিদ্যুৎ বিল, জেনারেটরসহ নানা মেইনটেন্যান্স খরচ রয়েছে। লোকসানি এই প্রতিষ্ঠান আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
কয়েক বছর আগেও সপ্তাহে দু-একটি সিনেমা রিলিজ হতো, এখন মাসেও একটি হয় না। নতুন সিনেমা মুক্তি পেলে তা দু-এক সপ্তাহের মধ্যেই ইন্টারনেটে বা অন্যান্য কোনো মাধ্যমে পাওয়া যায়। তাই হলে তেমন কেউ সিনেমা দেখতে আসে না। নিরুপায় হয়ে এ ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হচ্ছে।
নির্মাতা হাসান রেজাউল বলেন, ছন্দা সিনেমা হল বিক্রি করে দেওয়া সিনেমা শিল্পের জন্য হুমকি। এলাকায় এলাকায় তো মসজিদ মাদ্রাসা অনেক আছে। মানুষের বিনোদনও দরকার আছে। ধর্মকেও বাদ দিতে বলছি না। ধর্ম আর শিল্প একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী না। বরং প্রতিবিম্ব হওয়া উচিত। সিনেমা হলগুলো রক্ষা করা জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবেও উদ্যোগ নেওয়া দরকার। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনেরও এগিয়ে আসা উচিত। এমনিতেই সিনেমা হলগুলোর অবস্থা নাজুক। দেশে তো ভালো ভালো সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে। দেশের গন্ডি ছেড়ে বিদেশেও অনেক প্রশংসিত হচ্ছে। হল বন্ধ হয়ে গেলে প্রদর্শনী কোথায় হবে?
এসআর