ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় নষ্ট হচ্ছে বীজতলা

বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কা

কাওসার রহমান

প্রকাশিত: ২৩:৫৫, ৩১ জানুয়ারি ২০২৪

বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কা

তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত ধানের বীজতলা

২০১৮ সালের পর এবার বোরো আবাদকে সবচেয়ে বেশি সংকটে ফেলেছে ঘন কুয়াশা। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় এবারের বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এ বছর দীর্ঘ সময় ধরে ঘন কুয়াশা থাকছে। ফলে কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হচ্ছে দেশের প্রধান ধান বোরোর বীজতলা।

অধিকাংশ জেলায় তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাওয়ায় রোপণ করা চারা নিয়েও উৎকণ্ঠায় আছে কৃষক। এ অবস্থায় বীজতলা নষ্ট হয়ে বোরোর চারা সংকট তৈরি করতে পারে। আর সময় মতো চারার জোগান দিতে না পারলে ব্যাহত হতে পারে বোরোর আবাদ। 
ফলে বোরোর আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। শুধু বোরো নয়, চলতি রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসল নিয়েও উৎকণ্ঠায় কৃষক। বিশেষ করে, আলু নিয়েও উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন তারা। দেশের আলু উৎপাদন এলাকাগুলোতে তাপমাত্রার তারতম্যে লেট ব্লাইট এবং অল্টারনেরিয়া ব্লাইট রোগ দেখা দিচ্ছে। ফলে আলু আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

নতুন কৃষিমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বোরো ও অন্যান্য রবি আবাদ সফল করতে হলে তার মন্ত্রণালয় ও দপ্তর, অধিদপ্তরের কর্মীদের মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে বলে মনে করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, যে কোনো মূল্যে কৃষকদের সর্বাত্মক সহায়তা দিয়ে বোরো আবাদকে সফল করতে হবে। কারণ এ বছর আমন ফলন ভালো হয়নি। ঘূর্ণিঝড় ও বৃষ্টির কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ফলে চালের জোগান ঠিক রাখতে হলে বোরো আবাদ সফল করতে হবে। অন্যথায় খাদ্য সংকট দেখা দিলে তা সামাল দেওয়া কষ্টকর হবে। কারণ প্রাকৃতিক কারণে বিশ্বজুড়ে কৃষির জন্য এই বছরই ভালো বছর নয়।  অবশ্য নতুন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ ইতোমধ্যে ফসল রক্ষায় কৃষকের পাশে থাকতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।  
মাঠ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, উত্তরের জেলাগুলোতে গত দেড় সপ্তাহ ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬-৮ ডিগ্রি  সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠান্ডায় জনজীবন প্রায় স্থবির। ২০ দিন পর সোমবার উত্তরাঞ্চলের কোনো কোনো জেলায় সূর্যের মুখ দেখেছে মানুষ। ঠান্ডায় সবাই যখন প্রায় ঘরবন্দি তখনো থেমে নেই কৃষকের ব্যস্ততা। বোরোর চারা বাঁচাতে ও মাঠে বোরো আবাদে ব্যস্ত সময় কাটছে কৃষকদের। দিনভর ঠান্ডা ও কুয়াশার মধ্যেই ফসলের মাঠে কাজ করে যাচ্ছে কৃষক। 
তবে শঙ্কার বিষয় হলো, দেশের বিভিন্ন জেলায় বোরোর চারা নষ্ট হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। কয়েকদিনের তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে ‘কোল্ড ইনজুরিতে’ ধানের চারার পাতা হলুদ হয়ে মরে যাচ্ছে। পুরো বীজতলায় তা ছড়িয়ে পড়ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে বীজতলা পুরো নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এতে দেখা দিতে পারে বোরোর চারার সংকট। সময় মতো চারার জোগান দিতে না পারলে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে। 
তবে শঙ্কার মধ্যে কৃষক তার বীজতলা বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। সেই সঙ্গে মাঠে বোরোর আবাদ ও ধানের বীজতলা যত্ন এবং পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। কারণ বীজতলা নষ্ট হলে চারার দাম আরও বেড়ে যাবে। তাই  জমিতে রোপণ না করা পর্যন্ত বীজতলার পরিচর্যা অব্যাহত রাখছেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে তারা সকাল-সন্ধ্যায় পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখছেন। বৈরী আবহাওয়ার কারণে কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী বীজতলায় ছত্রাকনাশক স্প্রে করছেন। কৃষকদের বীজতলা যেন ভালো থাকে সে ব্যাপারে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

কৃষকরা জানান, বোরোর বীজতলায় ছত্রাকনাশক ছিটিয়েও তেমন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বীজতলা মরে বোরোর চারা সংকট দেখা দেওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। 
রাজশহীর পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়ন এলাকার কৃষক মাসুদ জানান, কয়েকদিনের তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে ধানের চারার পাতা মরে যাচ্ছে। পুরো বীজতলায় এমন হচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে বীজতলা পুরো নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর রুহিতার কৃষক আবু তাহের জানান, গত কয়েক দিনের ঘন কুয়াশায় জমির বেশিরভাগ বীজতলার চারা লালচে হয়ে গেছে। পাশাপাশি পোকার আক্রমণ শুরু হয়েছে। রংপুর অঞ্চলে রাত থেকে শুরু করে বেলা ১১টা পর্যন্ত কুয়াশা পড়ায় বোরো চাষ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ফলে বোরো ধানের বীজতলা নিয়ে শঙ্কিত ওই অঞ্চলের কৃষকও। চলতি মৌসুমে ২৮ হাজার ৯৮২ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। 
কাউনিয়ার শহীদবাগ এলাকার কৃষক আফজাল মিয়া জানান, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বীজতলায় ৬০ কেজি ধানের বীজ বপন করেছেন তিনি। এখন ওই চারা জমিতে রোপণের সময়ও হয়ে আসছে। কিন্তু কুয়াশায় বীজতলা নষ্ট হতে শুরু করেছে। এই নিয়ে বেশ চিন্তিত তিনি। তবে কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে তিনি সকাল-সন্ধ্যায় পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখছেন।
মিঠাপুকুর জায়গীর এলাকার কৃষক সবুর মিয়া জানান, ২৪ শতক জমির জন্য চারা কিনতে দাম পড়ে সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। বীজতলা নষ্ট হলে দাম আরও বেড়ে যাবে। তাই তিনি জমিতে রোপণ না করা পর্যন্ত বীজতলার পরিচর্যা অব্যাহত রেখেছেন।
বগুড়াতেও বীজতলার চারা মারা যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। একই অবস্থা চুয়াডাঙ্গার কৃষকদের। এ জেলার কৃষকরাও তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশাকে উপেক্ষা করে প্রতিদিন বোরো ধানের বীজতলা যত্ন ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কিন্তু ঠান্ডা ও কুয়াশার কারণে চারার ক্ষতির শঙ্কা রয়েই গেছে। কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, এবার বোরো বীজতলা তৈরিতে খরচ অনেক বেশি। তাই বীজতলায় ক্ষতি হয়ে গেলে চারা রোপণের সময় অনেকটা দুর্ভোগে পড়ব। বীজতলায় ক্ষতি এড়াতে চারার যত্ন পরিচর্যা করছি। আরেক কৃষক আব্দুল হাই বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে বীজতলায় ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাতা হলুদ রঙের হয়ে গেছে। ফলে ধানের যে লক্ষ্যমাত্রা তা উঠবে কি না তা নিয়ে পড়েছি দুশ্চিন্তায়।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার বাঁধাইড় গ্রামের কৃষক বারিউল ইসলাম বলেন, তীব্র শীত ও কুয়াশায় বীজতলার চারাগুলো হলুদ রং ধারণ করেছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে বীজতলা পরিচর্যা করছি, কিন্তু চারা সেভাবে বড় হচ্ছে না। ৫০ কেজি ধানের বীজ জমিতে ছিটিয়েছি। তার মধ্যে ২০ কেজি ধান নষ্ট হয়ে গেছে। তাই আবার বীজতলা তৈরি করতে হচ্ছে। এতে খরচও বেড়ে গেছে।

চারা নষ্ট হয়ে জমিতে সময়মতো রোপণ করতে না পারায় দেরিতে ফসল ফলবে। কালবৈশাখীর আগে ঘরে তুলতে না পারলে মাঠে পাকা ধান নষ্ট হতে পারে, এমন আশঙ্কা এই কৃষকের। এ ছাড়া আগেভাগে বাজারে তুলতে না পারলে ভালো দাম না পাওয়ার শঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি।
এ জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার কৃষক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, কত দিনে ধান লাগানো শেষ হবে, তা নিয়ে এখনো নিশ্চিত নই আমরা। আমরা যদি দেরি করে ধান রোপণ করি, তা হলে ফসল উৎপাদনও দেরিতে হবে। মৌসুমের শেষে ধানের দাম কমে যায়। তাতে দেখা যাবে, আমরা কাক্সিক্ষত দাম পাব না। তিনি বলেন, বোরো ধানের বীজতলার অর্ধেকই শীত ও কুয়াশায় বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে।

এ অবস্থা চলতে থাকলে নতুন করে আবার বীজতলা তৈরি করতে হবে। যারা পৌষের শুরুর দিকে বীজতলায় বীজ ফেলেছে, তারা বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখে শীত ও কুয়াশা থেকে রক্ষার চেষ্টা করছে। কুয়াশা কমছে না, তাই দুশ্চিন্তায় আছি।
দিনাজপুর সদর উপজেলার শেখপুরা এলাকার কৃষক পরেশ চন্দ্র বলেন, ‘প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে বোরোর বীজতলা ও আলুর গাছগুলো মারা যেতে শুরু করেছে। ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাস। বালাইনাশক স্প্রে করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। রোদ না হলে তো গাছগুলো টেকানো যাবে না। এতে করে ভালো ফলন পাওয়া যাবে না।’
এ বছর কুয়াশার সঙ্গে তীব্র শীত অনুভূত হলেও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শীত পড়েছিল ২০১৮ সালে। ওই বছরের ৮ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নেমেছিল দুই দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড। সে বছর সারাদেশে দফায় দফায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহও দেখা গিয়েছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এ বছর জানুয়ারি মাসজুড়েই ঘন কুয়াশা থাকতে পারে। সে কারণে শীতের এমন অনুভূতিও অব্যাহত থাকতে পারে।

২০১৮ সালে শীতের তীব্রতা বেশি থাকলেও এবার কুয়াশার পরিমাণ বেশি। এবার দীর্ঘ সময় ধরে কুয়াশা পড়ছে। অন্য বছরের তুলনায় এবার কুয়াশার ঘনত্বও বেশি দেখা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত কুয়াশা থাকছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর এই দীর্ঘ সময়ের কুয়াশার কারণে রোদের সময় কমে আসছে। অর্থাৎ সূর্য বেশিক্ষণ আলো দিতে পারছে না। স্বাভাবিক সময়ে সূর্যের কিরণকাল ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা হলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে তিন থেকে চার ঘণ্টায়। 
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের প্রধান ধান ফসল হচ্ছে বোরো। দেশে যে পরিমাণ ধান উৎপাদন হয় তার সিংহভাগ আসে বোরো থেকে। এ সময়ের ধানের ফলনও তুলনামূলক বেশি হয়। যেখানে প্রতি হেক্টর জমিতে আউশ ও আমনের ফলন যথাক্রমে ২.৫৫ ও ২.৫০ মেট্রিক টন, সেখানে বোরোর গড় ফলন ৪ মেট্রিক টনেরও বেশি। বোরোর উৎপাদন কমলে সেটা পুরো বছরের সার্বিক উৎপাদনে দারুণ নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই বিষয়টি অধিক গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।  
এ প্রসঙ্গে কৃষি বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকসের প্রধান নির্বাহী ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রতি বছরই শীতে কুয়াশা থাকে। তবে এই বছর কুয়াশা বেশি। এটা চারার ক্ষতি করেছে। এতে বোরোর আবাদ  ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ 
তিনি বলেন, ‘বোরোর ওপর সবাই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কারণ দেশের মোট চাল উৎপাদনের ৫৪ শতাংশ আসে বোরো থেকে। চারার কিছু ক্ষতি সত্ত্বেও আশা করছি, এ বছর বোরো পুরোপুরি আবাদ হবে। এক্ষেত্রে নজর রাখতে হবে সারের যাতে সংকট না হয়।’ 
ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এখচ চাহিদা মেটাতে আমাদের ৮০ শতাংশ সারই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আগে ২০ শতাংশ আমদানি করতে হতো। সম্প্রতি গ্যাস সংকটে দেশের সার কারখানাগুলো ঠিকমতো চলছে না ভালোমতো। ফলে আমদানি  করা সার মাঠে পৌঁছাতে গিয়ে দাম বেড়ে যায় কিনা সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বোরো মৌসুমে ৬৫ শতাংশ সেচ দেওয়া হয় ডিজেলে। কিন্তু দেশে বিদ্যুতের সেচে ভর্তুকির ব্যবস্থা আছে। ডিজেলের সেচে নেই। ফলে ডিজেল দিয়ে সেচ দেওয়ার কারণে উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে। তাই সেচের ডিজেলে ভর্তুকি দেওয়া কিনা চিন্তা করতে হবে। এক্ষেত্রে অন্তত ২০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া দরকার। এটি কৃষকদের ব্যাংক হিসেবে নগদ সহায়তা হিসেবে দেওয়া যেতে পারে।’ 
উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা বলছেন, ‘শৈত্যপ্রবাহের সময় বাড়তি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। তা না হলে এর প্রভাব সামগ্রিক বোরো উৎপাদনে পড়বে। মাঠপর্যায়ে শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব থেকে বাঁচতে বীজতলায় নলকূপের পানি দিয়ে তা ধরে রাখতে হবে। এ ছাড়া বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা যেতে পারে। শিশির পড়লে তা ঝরিয়ে দিতে হবে। এর সঙ্গে ছত্রাকনাশক এবং প্রতিশতক জমিতে ২৮০ গ্রাম করে ইউরিয়া সার দিতে হবে বলে নির্দেশনা প্রদান করেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ঘন কুয়াশা ও তীব্র ঠান্ডায় কৃষকদের বোরো আবাদে বিলম্বিত হচ্ছে। তবে তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে চারা খাদ্য গ্রহণ করতে না পারায় পাতা হলুদ হয়ে যায়। তাই বীজতলা নষ্টের হাত থেকে বাঁচতে কৃষকদের বাড়তি যতœ ও ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর ৫০ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চাল আকারে বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাতা ধরা হয়েছে ২ কোটি ১৫ লাখ টন। গত ২০২২-২৩ সালে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৯ লাখ ৭৬ হাজার হেক্টর। আর আবাদ হয়েছিল  ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার হেক্টর জমিতে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বোরো উৎপাদনের তথ্যে দেখা গেছে, এই অর্থবছরে দুই কোটি সাত লাখ টন বোরো চাল উৎপাদিত হয়েছে। এটি এর আগের অর্থবছরের তুলনায় তিন শতাংশ বেশি।

×