ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

ভোলা জেলা

প্রার্থীরা মাঠে প্রচার শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছেন

হাসিব রহমান, ভোলা

প্রকাশিত: ০০:২১, ১ ডিসেম্বর ২০২৩

প্রার্থীরা মাঠে প্রচার শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছেন

উপকূলীয় দ্বীপজেলা ভোলায় নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের একমাত্র উপকূলীয় দ্বীপজেলা ভোলায় নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। গত কয়েক মাস ধরে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক প্রার্থী দলের মনোনয়ন পেতে ব্যাপক তদ্বিরে ব্যস্ত ছিলেন। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি (জাপা) দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকে এলাকায় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে আনন্দ উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে। হেভিওয়েট প্রার্থী থাকায় জাতীয় রাজনীতিতে ভোলা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। দলীয় প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করে নির্বাচনী মাঠে প্রচার শুরুর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এলাকায় চলছে আনন্দ উৎসব। তবে বিএনপি-জামায়াত, বিজেপি, ইসলামী আন্দোলন নির্বাচন বর্জন করে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি বাস্তবায়নে আন্দোলনে মাঠে রয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে তাদের আন্দোলন বলতে গেলে ঝিমিয়ে পড়েছে। আর রাজনৈতিক মাঠ দখলে রেখেছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রস্তুত হচ্ছেন জাপার প্রার্থীরা। তবে ভোলার চারটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা শক্ত অবস্থানে রয়েছেন।
ভোলা-১ (সদর উপজেলা) ॥ আসনটি একটি পৌরসভা ও ১৩ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এটি জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন।

স্বাধীনতার পর থেকে আসনটি বেশির ভাগ সময়ই আওয়ামী লীগের দখলে ছিল এবং সংসদ সদস্য ছিলেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সাবেক শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠনক তোফায়েল আহমেদ আবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি এর আগে আটবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
সর্বশেষ টানা তিনবার আওয়ামী লীগের আমলে তোফায়েল আহমেদের হাত ধরে দৃশ্যমান যে উন্নয়ন হয়েছে, স্বাধীনতার পর অন্য কোনো সরকারের সময় সেটি দেখা যায়নি। শুধু উন্নয়নই নয়, সাংগঠনিকভাবে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় আরও শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে তৃণমূল আওয়ামী লীগ। তাই এ আসনে আবারও জয়ের বিষয়ে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ শতভাগ নিশ্চিত মনে করছেন।
অপরদিকে সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোশারেফ হোসেন শাজাহানের পরিবার ও তাদের নেতৃত্ব ঘিরেই মূলত ভোলা-১ আসনের বিএনপির রাজনীতি। মোশারেফ হোসেন শাজাহানের পরিবারের নেতৃত্বেই চলছে বিএনপির সকল কর্মকা-। মোশারেফ হোসেন শাজাহানের মৃত্যুর পর তার ছোট ভাই গোলাম নবী আলমগীর গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন নেতাকর্মীদের কাছে। দলের হাল ধরে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বর্তমানে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক। এছাড়াও মাঠে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে দলের প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শফিউর রহমান কিরণ ও সদস্য সচিব রাইসুল আলমের।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রাইসুল আলম বলেন, তারা এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য এক দফা দাবিতে আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে রয়েছেন। তবে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম নবী আলমগীর, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য হায়দার আলী লেলিন, ব্যারিস্টার কাজী আক্তার হোসেনসহ একাধিক নেতা এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। 
এদিকে জাতীয় পার্টির (জাপা) ভোলায় তেমন কোনো কর্মকাণ্ড নেই বললেই চলে। এই আসনে জাপার মনোনয়ন পেয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি মো. শাহজাহান মিয়া। এরশাদের জাপা থেকে বেরিয়ে এসে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) গঠন করেন নাজিউর রহমান মঞ্জু। তার মৃত্যুর পর তার জ্যেষ্ঠপুত্র ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ দলের হাল ধরেন। তারাও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে দাবি জানিয়ে আসছেন। আসন্ন নির্বাচনে এ দলটিও অংশ না নিয়ে সরে দাঁড়িয়েছে।
ভোলা-২ (দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিন) ॥ আসনটি বলতে গেলে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই আসন থেকে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে এবং ১৯৯১ সালের নির্বাচনে তোফায়েল আহমেদ নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মতো তোফায়েল আহমেদ নির্বাচিত হন। এই আসনটি ১৯৮৬ থেকে আওয়ামী লীগের দখলে। আসনটিতে আলী আজম মুকুলের জনপ্রিয়তা ব্যাপক। বর্তমান সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুলই আবার মনোনয়ন পেয়েছেন।
এ আসনে হাফিজ ইব্রাহিমের নেতৃত্বেই চলছে বিএনপির সকল কর্মকা-। আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি না আসায় নির্বাচনী মাঠে তাদের কোনো কার্যক্রম নেই। এদিকে এ আসনে জাপার মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা জাপার আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান।
ভোলা-৩ (লালমোহন ও তজুমদ্দিন) ॥ এই আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা দলীয় মনোনয়নপত্র কিনে ব্যাপক তদ্বির করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মীবান্ধব নেতা নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। বর্তমানে শাওন ছাড়া অন্য কোনো দলের প্রার্থীর কোনো কার্যক্রম নেই। এমনকি নির্বাচনী মাঠেও নেই। স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ যদি নির্বাচন করেন তাকে মোকাবিলা করতে নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের বিকল্প নেই। 
এদিকে এই আসনে জাপা থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন মো. কামাল উদ্দিন। তবে তাদের তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। এদিকে ইসলামী আন্দোলনের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা মো. মোসলেহ উদ্দিন সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও তারা এবার নির্বাচনে এখন পর্যন্ত অংশ না নেওয়ার দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে তাদের কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি।
ভোলা-৪ (চরফ্যাশন ও মনপুরা) ॥ এই আসনেও আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা দলীয় মনোনয়ন পেতে লবিং করেন। কিন্তু এলাকার মানুষের কাছে ও দলের নেতাকর্মীদের কাছে উন্নয়নের প্রতীক আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব টানা চতুর্থবারের মতো দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। বর্তমানে তিনি ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর দলীয় কর্মকাণ্ড নেই। এলাকার নেতাকর্মীরা মনে করছেন, আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বিকল্প নেই। অপরদিকে এই আসনে বিএনপির তেমন কোনো কর্মকা- নেই বললেই চলে।

তারা সরকার পতনের এক দফা দাবিতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন ডাকসুর সাবেক এজিএস, সাবেক সংসদ সদস্য মো. নাজিম উদ্দিন আলম ও বিএনপি নেতা নুর ইসলাম নয়ন, চরফ্যাশনের কৃতী সন্তান হাইকোর্টের আইনজীবী মো. ছিদ্দিকুল্লাহ মিয়া। 
এদিকে জাপা থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন চরফ্যাশন উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান। ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন চরফ্যাশনের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ভোলা জেলার (দক্ষিণ) সভাপতি আলাউদ্দিন হাজী। কিন্তু নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য দলীয় সিদ্ধান্ত না আসায় তারা মাঠে নেই।

×