
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ীই পরিচালনা করা হবে বহুল আলোচিত থার্ড টার্মিনাল
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ীই পরিচালনা করা হবে বহুল আলোচিত থার্ড টার্মিনাল। এটি পরিচালিত হবে পিপিপি-এর আওতায় জাপানের নেতৃত্বে সুদক্ষ ব্যবস্থাপনায়। বর্তমানে এই টার্মিনালের ৮৯ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে পুরোপরি চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবলও তৈরি করা হচ্ছে।
সোমবার নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান। এ সময় তিনি আরও জানান, বিগত ২০২০ সালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের চুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ১ হাজার ৪৭১ দিনের মধ্যে সফট ওপেনিং করার কথা ছিল। আজকে চুক্তি অনুযায়ী ১ হাজার ২৪১ দিন। আগামী ৭ অক্টোবর সফট ওপেনিং হবে। প্রধানমন্ত্রী সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন সফট ওপেনিং এ উপস্থিত থাকবেন। নির্ধারিত সময়ের আগে সফট ওপেনিং হতে যাচ্ছে তৃতীয় টার্মিনালের। সফট ওপেনিংয়ের অনুষ্ঠান তৃতীয় টার্মিনালের ভেতরে অনুষ্ঠিত হবে।
সারা দেশের মানুষ যেন উদ্বোধনের দিন গণমাধ্যমে এই টার্মিনাল দেখতে পারেন, সে জন্য আমরা ভেতরে উদ্বোধন অনুষ্ঠান আয়োজন করেছি। তৃতীয় টার্মিনালের কাজের অগ্রগতি নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল সফট ওপেনিংয়ের আগে ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করা। বর্তমানে প্রায় ৮৮ শতাংশের ওপরে অর্থাৎ ৮৯ শতাংশের কাছাকাছি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি ওপেনিংয়ের আগে ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে যাবে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে যাত্রীদের জন্য টার্মিনালটি পূর্ণাঙ্গ সক্রিয় করার। তবে আমাদের কাজ নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক আগে শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করছি। নির্ধারিত সময়ের আগে যাত্রীদের জন্য টার্মিনালটি পূর্ণাঙ্গ সচল হবে। এই টার্মিনাল থেকে বছরে এক কোটি ২০ লাখ যাত্রী সেবা পাবেন।
নতুন টার্মিনাল পুরোপুরি কার্যকর হলে সেবার মান বৃদ্ধি পাবে কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এই টার্মিনাল করা হয়েছে যাত্রী সেবার মান উন্নয়নের জন্য। এভিয়েশন হাব হওয়ার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য এই তৃতীয় টার্মিনাল করা হয়েছে। যাত্রী সেবা নিশ্চিত করার জন্য বিদেশী একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে বিদেশী সংস্থা কাজ করলেও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব থাকবে আমাদের হাতে। বিদেশী সংস্থাকে বলে দেওয়া হবে যেন যাত্রী সেবার মান সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দর অথবা সমমানের বিমানবন্দরগুলোর মতো হয়। যাত্রীসেবার মান সুনিশ্চিত করতে পারবে, এ বিষয়গুলো নিশ্চিত হওয়ার পরে আমরা বিদেশী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করব। এছাড়া আমাদের দেশীয় স্টেকহোল্ডার যারা রয়েছে তাদেরও বলা হয়েছে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। নতুন টার্মিনালে যাদের যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু অফিস স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন সদস্য (অপস) এয়ার কমোডর সাদিকুর রহমান চৌধুরী, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম, বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মালেক, মেম্বার (এটিএম) এয়ার কমোডর রিয়াদাত হোসেন, এভসেক পরিচালক উইং কমান্ডার মিরন মৃধাসহ অন্যরা।
নতুন তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনার জন্য থার্ড টার্মিনাল প্রস্তুত কি না বা পারবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, এটা কোনো একক কাজ না। আমরা সবাই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনা করব, দেশের অন্যান্য বিমানবন্দরের মতো।
চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মো. মুফিদুর রহমান বলেছেন, অনেকের প্রশ্ন, সফট ওপেনিংয়ের পরে আমরা কি পেতে যাচ্ছি! আসলে সফট ওপেনিংয়ের মাধ্যমে আমাদের যে পরিকল্পিত কাজ, সেটা শেষ হলো। এবং এর মাধ্যমে আমাদের সুবিশাল টার্মিনালটা প্রস্তুত হয়ে গেছে। ইক্যুইপমেন্টগুলো লেগে গেছে। আমাদের চেকের থেকে শুরু করে ইমিগ্রেশন, তারপরে সিকিউরিটি, সব ধরনের যন্ত্রপাতি লেগেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মো. মুফিদুর রহমান বলেন, অনেক বিশাল-বিশাল এস্কেলেটর, লিফট লেগে গেছে। এখানে ব্যাগেজ হ্যান্ডেলিং সিস্টেম লেগে গেছে। এবং এখানে যে ইমিগ্রেশনের সঙ্গে অন্যান্য ইনফরমেশন আদান-প্রদান, এগুলোর ইক্যুইপমেন্টগুলো লেগে গেছে। এবং অনেকগুলো বোর্ডিং ব্রিজ বসে যাচ্ছে। এবং কিছু-কিছু জায়গায় সংস্থাপন পর্যায়ে আছে। আমাদের ফিজিক্যাল কাজ কিন্তু শেষ। এখন বাকি ১০ শতাংশ কাজের মধ্যে কিন্তু এই পার্টগুলো আসে। কিছু-কিছু ইন্টেরিয়রের কাজ বাকি আছে। এই কাজগুলো আসবে। এই কাজগুলো আমরা সফট ওপেনিংয়ের পর শুরু করব। এই ইন্টেরিয়রের পার্ট, ক্যালিব্রেশনের পার্ট, ফাংশনাল পার্ট এগুলো আমরা করব।
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা জানেন, এই বিমানবন্দরের দায়িত্ব আপাতত আমরা ঠিকাদারের কাছ থেকে বুঝে নেব।
এরপর, টার্মিনাল ১ এবং ২ থেকে আমাদের যে অপারেশনটা, কীভাবে এই বিমানবন্দরটা অপারেশন শুরু করা যায় সেই প্রক্রিয়াটা আমরা শুরু করব। এই প্রক্রিয়াটার নাম অরাট (অপারেশনাল রেডিনেস অ্যাক্টিভেশন অ্যান্ড ট্রানজিস্টন)। এই প্রক্রিয়াটা আমরা সফট ওপেনিংয়ের পর চালু করব। আমরা যদিও বলছি আগামী বছরের শেষ নাগাদ এটা ফাংশনাল করব, আমাদের চেষ্টা থাকবে তার আগেই এই বিমানবন্দরটা যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত করতে পারব।
তিনি আরও জানান, আমাদের এখানে আমদানি-রফতানি কার্গো টার্মিনাল হয়েছে, পাশাপাশি থাকবে বিশাল অ্যাপ্রোন। যেখানে বিমান থাকবে। পরশুদিন থেকে দেখবেন এখানে বিমান রাখা হবে। এরপর আমরা এখানকার রানওয়ের ব্যবহার শুরু করেছি। সফট ওপেনিং হওয়ার পরে আমরা এগুলোকে অপারেশনাল করার জন্য অফিসিয়ালি কাজ শুরু করব। চেয়ারম্যান বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই আমরা প্রকল্প উদ্বোধন করতে যাচ্ছি। যখন প্রকল্প শুরু হলো, তখন মহামারি শুরু হয়ে গেল। এই মহামারি চলাকালীন এই প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন থেকে সরে যাইনি। এ সময় নির্মাণকাজে জড়িত সকল প্রতিষ্ঠানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
বেবিচক চেয়ারম্যান জানান, টার্মিনাল চালু হতে এক বছর লাগলেও এর পার্কিংসহ অন্যান্য স্থাপনা ক্রমেই ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া কিছুদিনের মধ্যেই টার্মিনালের পার্কিংয়ে প্লেন রাখা হবে। এখানে এক সঙ্গে ৩৭টি প্লেন রাখা যাবে। এ টার্মিনালের সঙ্গে যোগাযোগ বা যাতায়াতের সুবিধা থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন থার্ড টার্মিনালের সঙ্গে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যুক্ত হয়েছে। প্রস্তাবিত কাওলা মেট্রোরেল স্টেশনের সঙ্গে টানেল নির্মাণ করা হবে। এখন টার্মিনাল অংশে টানেল তৈরি আছে। বিআরটি লাইনের সঙ্গেও যাতে সংযোগ দেওয়া যায়, সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
সুদীর্ঘ চাকরি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এত বড় একটা প্রকল্প সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করার অনুভূতি কেমন দৈনিক জনকণ্ঠের এমন প্রশ্নের জবাবে এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, এটা অবশ্যই আনন্দের ও গর্বের। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শত প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেই আজকের পর্যায়ে আসতে পারার বিষয় অবশ্যই ভালো লাগার। এজন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞ আমরা।
থার্ড টার্মিনাল আগামী এক বছরের মধ্যে পুরোপরি চালুর মতো প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে দেশী বিদেশী দক্ষ জনবলই দায়িত্ব পালন করবে। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই সকলের সমন্বয়ে গড়া নির্ভরযোগ্য টিম দিয়েই থার্ড টার্মিনাল চালানো হবে।