ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

মতবিনিময়ে ডিএমপি কমিশনার

রাজধানীতে অনুমতি ছাড়া মিছিল-সভা করলে ব্যবস্থা

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ২ অক্টোবর ২০২৩

রাজধানীতে অনুমতি ছাড়া মিছিল-সভা করলে ব্যবস্থা

অনুমতি ছাড়া মিছিল-মিটিং করতে পারে না

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নবনিযুক্ত কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন, রাজধানীতে কোনো সংগঠন অনুমতি ছাড়া মিছিল-মিটিং করতে পারে না। অনুমতি না নিয়ে মিছিল-মিটিং করতে চাইলে কিংবা করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ডিএমপির অধ্যাদেশের যে নিয়ম-কানুন রয়েছে, সেগুলো যদি কেউ ভঙ্গ করে তাহলে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সোমবার সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় ও ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় নগরীর যানজট, আসন্ন নির্বাচন, মাদক, বিভিন্ন অপরাধ চক্র ও থানা পুলিশের সেবার মান নিয়ে এখনো অভিযোগ ওঠার বিষয়সহ নানান বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি।  
ডিএমপির কমিশনার বলেন, আমি যতটুকু জানি আজও ঢাকায় বিরোধী দলের একটি অনুষ্ঠান আছে। তারা অনুমতি নিয়েই কর্মসূচি পালন করছে। কোনো সংগঠন যদি অনুমতি ছাড়া কোনো কিছু করতে চায়, তাহলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। 
সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অক্টোবরে ব্যাপক আন্দোলনের শঙ্কাও রয়েছে। ডিএমপির প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচন হলো রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তি। সেটি যেন সুন্দর-সুষ্ঠুভাবে হয়, জনগণ যেন নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে, নিরাপদে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেন, ভোট দিতে পারেন, পুলিশ সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। শীর্ষ সন্ত্রাসী নাছির, লম্বু সোহেল, মামুনরা আন্ডারওয়ার্ল্ডকে অস্থির করে তুলেছে। সর্বশেষ তেজগাঁওয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। নতুন কমিশনার হিসেবে কী কৌশল গ্রহণ করবেন? জানতে চাইলে নবনিযুক্ত ডিএমপি কমিশনার বলেন, জামিন একটি বিচারিক প্রক্রিয়া।

একজন অপরাধী আদালত থেকে আইন অনুযায়ী জামিন পেতেই পারে। এ ক্ষেত্রে কিন্তু পুলিশের কিছু করার থাকে না। তবে পুলিশ যেটা করতে পারে সেটা হলো, যদি কেউ অপরাধে জড়িয়ে পড়ে কিংবা উদ্যত হয় বা অপরাধ সংঘটিত করতে না পারে সেই ব্যবস্থা নেওয়া। আমরা বদ্ধপরিকর অপরাধী ছোট কিংবা বড় কাউকে ছাড় নয়। ব্যবস্থা নিতে ডিএমপি বদ্ধপরিকর। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কঠোর মনিটরিং করতে সকল কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনকে ঘিরে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ গুরুত্বপূর্ণ। এসব বন্ধে পুলিশের দক্ষতা ও যোগ্যতা রয়েছে।

ভিসা নীতির বিষয়ে কমিশনার বলেন, একটি দেশ ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে, এটি তাদের নিজস্ব বিষয়। সেটি নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের চিন্তার কিছু নেই। আমি পুলিশের ভেতর এ ধরনের নীতি নিয়ে কোনো চিন্তা দেখিনি। এটি ব্যক্তি পর্যায়ের বিষয়। এটি সংগঠন পর্যায়ের কোনো ব্যবস্থা নয়। সংগঠন হিসেবে ডিএমপি নিরাপদ ঢাকা গড়ার জন্য যতকিছু দরকার তা করছে। 
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে চুরি ছিনতাই হচ্ছে। যে দিন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সেদিনও রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গণহারে ছিনতাই করেছে একটি চক্র। এ ছাড়া রাজধানীতে চুরি-ছিনতাই বেড়েই চলছে। এমন এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, পুলিশের কাছে যথেষ্ট তথ্য রয়েছে। মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় ঘটনাটি ঘটার পরপরই জড়িত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছিনতাই প্রতিরোধে প্রয়োজনে টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। 
থানা পুলিশের সেবার মান নিয়ে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়েই আমরা থানা পুলিশের সেবার মান বাড়াতে চাই। ঢাকা শহরকে পুলিশের মডেল হিসেবে যে কোনো সেবা প্রদান ও জবাব দিতে থানা পুলিশ প্রস্তুত থাকে, সেটি নিশ্চিত করা হবে।

আমি মনে করি অচিরেই দেশের মানুষ সেটা দেখতে পারবেন। ঢাকা রেঞ্জে থাকার সময় থানা পুলিশের কার্যক্রম যেভাবে মনিটরিং করা হয়েছে, গারদখানায়ও সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে মনিটরিং করা হয়েছে, ডিএমপিতে থানা পুলিশের কার্যক্রমও একইভাবে মনিটরিং করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নগরবাসীকে সেবা দিতে এর চেয়ে যদি আরও বেশি কিছু লাগে সেটা করা হবে। কারণ নগরবাসীকে সেবা নিশ্চিত করতে প্রথম ধাপ হচ্ছে থানা। নগরবাসীর একটি লোকও যেন কখনোই বলতে না পারেন যে, সমস্যার সমাধান চেয়েও পাইনি। সেটি আমরা হতে দিতে চাই না। কোনো নাগরিককে যেন তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে থানা থেকে বের হতে না হয় সেজন্য থানা পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, মোটিভেশন করা হবে এবং তাদের আচরণগত দিক পরিবর্তনের জন্য যা যা করার সব করা হবে। 
তারপরও থানা পুলিশের সেবা নিয়ে কখনো কখনো অভিযোগ পেয়ে থাকি। সে সব অভিযোগের যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না তা কিন্তু নয়। থানায় যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই জোনাল অফিসার আছে, এডিসি আছে ডিসি আছে, জয়েন কমিশনার আছে। কমিশনার পর্যন্ত যেন কোনো অভিযোগ না আসে সে জন্য আমি নির্দেশনা দিয়েছি। 
নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে একটি নম্বর চালু করা হবে। যে নম্বরে সরাসরি কমিশনারের কাছে অভিযোগ করা যাবে। ঢাকার একটি নাগরিকও যেন পুলিশের সেবা থেকে বঞ্চিত না হয় উল্লেখ করে নবনিযুক্ত কমিশনার বলেন, বিধিমালা করে খুব শীঘ্রই নম্বরটি চালু করা হবে। সেখানে ‘ম্যাসেজ টু কমিশনার’ সরাসরি অভিযোগ করতে পারবেন।

সাধারণ মানুষকে তল্লাশির নামে পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে দেওয়া, মামলা ছাড়া ধরে এনে টাকা-পয়সা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ডিএমপির কোনো সদস্য অপরাধে জড়ালে আপনি কী উদ্যোগ নেবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, অপরাধী পুলিশ হোক আর পুলিশের বাবা, পরিচয় সে অপরাধী। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
ঢাকা শহরে যানজট নিরসনে পদক্ষেপ নিয়ে কমিশনার বলেন, আমাদের প্রধান সমস্যা ট্রাফিক। আমি কমিশনার হিসেবে যোগদান করার পরে প্রথমেই মিটিং করেছি ট্রাফিকের সঙ্গে। ট্রাফিক সমস্যা সমাধানে সবার সহযোগিতা চাই।

যেসব এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়, সেসব এলাকা ধরে ধরে আমরা গবেষণা করব। কী সমস্যা সেটি চিহ্নিত করে যানজট নিরসনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনেক সময় দেখা যায়, স্টপে এসে বাসগুলো রাস্তার মাঝে আড়াআড়িভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, এক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। এ জন্য চালকদের ট্রেনিং দেওয়া হবে, তাদের নিয়ে কর্মশালা করা হবে। সিগন্যাল বাতির মাধ্যমে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে। এ ব্যাপারে দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলাপ হয়েছে এবং কো-অর্ডিনেশন কমিটি গঠন হয়েছে। খুব অল্প দিনের ভেতরে আমরা ট্রাফিক বাতি চালু করা হবে। যেন সিগন্যাল বাতি অনুযায়ী ট্রাফিক কার্যক্রম করা যায়। ঢাকা শহরে যে ট্রাফিক সমস্যা তা ট্রাফিক পুলিশ একার পক্ষে সমাধান সম্ভব নয়। 
ফুটপাতে অবৈধ দোকানের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠনের অফিস-এসব উচ্ছেদে কিংবা ব্যবস্থা নিতে নিশ্চয় কমিশনার হিসেবে আপনাকে কাউকে জবাবদিহি করতে হবে না- এমন প্রশ্নের উত্তরে হাবিবুর রহমান বলেন, এমনটি হচ্ছে। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড়ের ট্রাফিক যানজটের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, স্পট ধরে ধরে সমাধান করা হবে। মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড় এখনই ট্রাফিকের এডিশনাল কমিশনারকে বলব জায়গাটা টুকে রাখতে। আজকে বিকেলে ওই জায়গা এডিসি-এসি ভিজিট করবে এবং রিপোর্ট দেবে। আগামীকাল থেকে সেটির সমাধান চাই। 
নতুন নতুন মাদক ও মাদকের চালান নিয়ে কমিশনার বলেন, ইয়াবাসহ যেসব মাদক জব্দ করা হয় এসব বাংলাদেশে তৈরি হয় না। আর পুলিশ সীমান্তে কাজ করে না। ডিএমপির প্রতিটি থানায় নিয়মিত মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়, মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তার ও মাদক জব্দ করা হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরও মাদক নির্মূলে কাজ করছে। তবে সামাজিকভাবে যদি মাদকের চাহিদা কমানো সম্ভব হয় তাহলে এমনিই মাদকের চালান কম আসবে। 
নির্বাচনে এবং পূজাসহ বিভিন্ন বড় বড় উৎসবে গুজব রটিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করা হয়, এ বিষয়ে পুলিশের প্রস্তুতি কী- জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, অনেকে ইউটিউব, ফেসবুক আইডি খুলে দেশে ও বিদেশে বসে গুজব রটিয়ে, উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে থাকে। এ বিষয়ে ইউটিউব ও ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। এ ছাড়া আমাদের সাইবার ইউনিট রয়েছে। তারা এসব গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছে। 
সম্প্রতি এডিসি হারুনকা-ের বিষয়ে নবনিযুক্ত কমিশনার বলেন, যার যতটুকু অপরাধ, ঠিক ততটুকু শাস্তি দেওয়া হবে। আমি মনে করি, জড়িত দুজন সরকারি ডিপার্টমেন্টের ও দুজনই ক্যাডার কর্মকর্তা। সেখানে দুজনের নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ রয়েছে। 
যার যার দায়িত্ব সে সে পালন করবে আমি মনে করি। আমাদের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটির রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করে পুলিশের পক্ষ থেকে অপরাধ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

×