
গুরুত্বপূর্ণ খুলনা-সাতক্ষীরা আঞ্চলিক মহসড়কের পিচ ও খোয়া উঠে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধত
বিভাগীয় শহর খুলনা হয়ে ডুমুরিয়া, পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলা এবং সাতক্ষীরা হয়ে ভোমরা স্থলবন্দরে সরাসরি যোগাযোগের একমাত্র সড়ক খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক। এ ছাড়া যশোরের কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলার মানুষ চলাচল করে এই রাস্তা দিয়ে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকাসহ সারা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম হওয়ায় মহাসড়কটির গুরুত্ব বেড়ে গেছে আরও কয়েকগুণ।
দ্বিগুণ হয়েছে চলাচলকারী যানবাহনের সংখ্যা। এমন গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কটির বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন না হওয়া, ইটবালুর ব্যবসা, অতিরিক্ত লোডের যানবাহন চলাচলসহ নানাবিধ কারণে ১৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে পুনর্নির্মিত রাস্তাটি এখন বেহাল। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রোদের সময় ধুলাবালি আর বৃষ্টি হলেই কাদাপানিতে চলাচলই দায় হয়ে পড়ে। ফলে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে হাজার হাজার যানবাহন।
জানা গেছে, খুলনা-সাতক্ষীরা আঞ্চলিক মহাসড়কের মোট দৈর্ঘ্য ৬৪ কিলোমিটার। সড়কটি পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে, যা শেষ হয় ২০২০ সালের জুনে। খুলনার জিরো পয়েন্ট থেকে ডুমুরিয়া উপজেলার আঠারোমাইল পর্যন্ত সড়কটি সওজ খুলনা কার্যালয়ের অধীন। এই অংশের ৩৩ কিলোমিটার সড়ক পুনর্নির্মাণ ও প্রশস্ত করার জন্য ব্যয় হয় ১৬০ কোটি টাকা। সড়কটি ১৮ ফুট থেকে ৩৬ ফুটে প্রশস্ত করা হয়। এ ছাড়া বালু, খোয়া ও পাথরসহ বিভিন্ন উপাদান দিয়ে সড়কের পুরুত্ব করা হয় প্রায় তিন ফুট।
সরেজমিনে দেখা যায়, জিরো পয়েন্ট এলাকায় সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে গর্ত তৈরি হয়েছে। পিচ সরে গিয়ে পাশে উঁচু ঢিবিতে রূপ নিয়েছে। রাজবাঁধ এলাকার বিদ্যুৎ অফিসের সামনে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কিছু কিছু স্থান আবার ঢেউ খেলানো। এ ছাড়া কৈয়া বাজার, ডুমুরিয়া বাজার, চুকনগর বাজারের আগে ও পরে সড়কের অবস্থা জরাজীর্ণ। সেসব স্থানে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
স্থানীয়রা জানায়, নির্মাণের প্রথম দুই বছর স্বস্তিতে চলাচল করলেও এখন অনেক ধকল সহ্য করতে হয়।
কৈয়া বাজার এলাকার মোটরসাইকেল চালক নিশিকান্ত মন্ডল বলেন, কোথাও কোথাও রাস্তার দু’পাশ বসে গিয়ে সরু নালায় পরিণত হয়েছে। কোনো যানবাহন অতিক্রম করতে গেলে পড়ে যেতে হয়। আতঙ্কে থাকতে হয় কখন থ্রি হুইলারটি উল্টে যায়। জিরোপয়েন্ট এলাকার মোবারক জব্বার বলেন, বৃষ্টির সময়ে সড়কের গর্তে পানি জমে থাকে। দোকানে কাদাপানির ছিটে এসে মালামাল নষ্ট হয়। আবার রোদের সময়ে ধুলায় কিছুই দেখা যায় না।
বাস চালক হাবিবুল মোল্লা বলেন, অনেক সময় দূর থেকে সড়কের খারাপ অবস্থা বোঝা যায় না। বিশেষ করে রাস্তা দেবে গিয়ে ঢেউয়ের মতো হওয়ায় গাড়ির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা যায় না। মাঝে-মধ্যেই গাড়ি উল্টে খাদে পড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। আবার মানুষ রাস্তার কোন অংশ দিয়ে হাঁটছে ধুলাবালিতে সেটাও দেখা যায় না।
সওজ খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর মহাসড়কে যান চলাচল দ্বিগুণ হয়েছে। ২২ টন লোড নেওয়ার ক্যাপাসিটি থাকলেও ৫০ থেকে ৭০ টন লোডের গাড়ি চলাচল করে এখানে। তাই গুরুত্ব বিবেচনায় আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে জানুয়ারি মাসে জাতীয় মহাসড়কের অনুমোদন মিলেছে। এখন এটিকে জাতীয় সড়কের অবকাঠামো অনুযায়ী উন্নীত করতে প্রকল্প তৈরি করা হবে। তবে খারাপ স্থানগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামত করা হবে।