ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

ঝালকাঠি-১

নানা কৌশলে প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা

মানিক রায়, ঝালকাঠি

প্রকাশিত: ০০:১৮, ২৭ আগস্ট ২০২৩

নানা কৌশলে প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা

অপার সৌন্দর্যমণ্ডিত পরিপাটি জেলা ঝালকাঠি

সবুজ মাঠ, গাছ-গাছালি, নদী-নালা, খাল-বিল নিয়ে অপার সৌন্দর্যমণ্ডিত পরিপাটি জেলা ঝালকাঠি। কবি জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কবিতা ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার ধানসিঁড়ি নদীটিও এ জেলায় অবস্থিত। এ জেলার আছে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। জেলাটি দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত হলেও এর কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সুগন্ধা, বিশখালি ও ধানসিঁড়ির মতো বিখ্যাত নদী এ জেলার বুকচিরে প্রবাহিত। ওষুধ শিল্প, অটো রাইস মিল, ইটভাঁটি, শীতলপাটি, গামছা ও মৃৎশিল্প ঝালকাঠি জেলাকে সমৃদ্ধ জেলায় রূপায়িত করেছে।
দুটি সংসদীয় আসন রয়েছে ঝালকাঠিতে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এই দুটি নির্বাচনী আসনেই বইছে নির্বাচনী হাওয়া। বড় দলগুলোর একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী নির্বাচন সামনে রেখে ভোটারদের কাছে ধরনা দিতে শুরু করেছেন। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতিও। ব্যানার-ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড দিয়ে নিজেদের প্রার্থিতার জানান দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ভোটারদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন সব দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। 
রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া উপজেলা নিয়ে ঝালকাঠি-১ আসন গঠিত। এই আসন থেকে টানা তিনবার নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আওয়ামী লীগের বজলুল হক হারুন। আগামী নির্বাচনেও তিনি দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে আগামী নির্বাচনে বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থীর বিরুদ্ধে নৌকার জয়রথের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল-বিবাদ। তাই আসনটি ধরে রাখতে আওয়ামী লীগের প্রবীণ ও বর্ষীয়ান নেতা আমির হোসেন আমুকে ঝালকাঠি-২ এর পাশাপাশি ঝালকাঠি-১ আসনেও মনোনয়ন দেওয়ার দাবি উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশের পক্ষ থেকে।
নির্বাচন নিয়ে বিএনপির প্রার্থীদের আগ্রহ কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে নির্ভর হলেও আওয়ামী লীগের একাধিক প্রবীণ-তরুণ মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছে। এদের মধ্যে তরুণ মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নির্বাচনী এলাকায় ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড টাঙিয়ে নানা কৌশলে তাদের প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন।
কাঁঠালিয়া উপজেলায় ভোটার কম হলেও আওয়ামী লীগের সমর্থক বেশি রয়েছে। কাঁঠালিয়ায় মোট ভোটার এক লাখ চার হাজার ৩৮৫ জন এবং রাজাপুর উপজেলায় বিএনপির প্রভাব কিছুটা বেশি। এই উপজেলায় ভোটার এক লাখ ২৪ হাজার ৭০ জন। বিএনপির এই আসনে শক্ত প্রার্থী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম এবং তিনি একাধিকবার এই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।
এই আসনের দুটি উপজেলায়ই স্থানীয় আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও গ্রুপিং থাকায় স্থানীয় নেতাকর্মী ও উল্লেখযোগ্য ভোটাররা মনে করছেন, অভ্যন্তরীণ বিবাদ না মিটিয়ে নির্বাচনে গেলে সে ক্ষেত্রে নৌকার বিজয় ধরে রাখাই কষ্টকর হবে। সেক্ষেত্রে ঝালকাঠির অভিভাবক বর্ষীয়ান জননেতা আলহাজ আমির হোসেন আমুকে ঝালকাঠি-১ আসনেও প্রার্থী করা হলে এই গ্রুপিং ও কোন্দল মিটে যাবে, নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত হবে বলেই তাদের অভিমত।
এই আসনে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বিজয়ী হয়েছিলেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর বীর উত্তম দ্বিতীয় হয়েছিলেন। ফলে আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশ নেয়, তা হলে ভোটের মাঠে লড়াই হবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর বীর উত্তমের সঙ্গেই। 
ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসন থেকে গত তিনবার নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বজলুল হক হারুন। দুই উপজেলা যোগাযোগ, মডেল মসজিদ, আমুয়া, পুটিয়াখালী ব্রিজ ও রাজাপুর-কাঁঠালিয়া সড়কসহ বিভিন্ন উন্নয়নে তার অবদান রয়েছে। এ কারণে আগামী নির্বাচনেও তিনি দলের প্রধান মনোনয়নপ্রত্যাশী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান এমপি বজলুল হক হারুনের সঙ্গে তৃনমূলের একাংশ নেতাকর্মীর সঙ্গে তার বৈরি সম্পর্কের বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট। দুই উপজেলার মূলধারার নেতাকর্র্মীদের সঙ্গে যথাযথভাবে যোগাযোগ বা সুসম্পর্ক নেই বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগের এই অংশে থাকা নেতাকর্মীদের। তবে বর্তমান এমপির সমর্থকরা দৃঢ়ভাবে আশাবাদী, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন পাবেন বজলুল হক হারুন। 
এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে অন্য যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খান সাইফুল্লাহ পনির, কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান মনির, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম ড. এমএ হান্নান ফিরোজের সহধর্মিণী স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ফাতিনাজ ফিরোজ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব মোহাম্মদ ইসমাইল, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবুল কাসেম সীমান্তসহ আরও কয়েকজন।
তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী তরুণ নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন মো. মনিরুজ্জামান মনির। মনোনয়নপ্রত্যাশায় দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন। 
অপরদিকে, বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেনÑ সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী রফিকুল ইসলাম জামাল, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আজম  সৈকতসহ আরও কয়েকজন।
তবে এই আসনটিতে ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর বীর উত্তমের একটা শক্ত অবস্থান রয়েছে। তবে এলাকায় তার যোগাযোগ কম এবং কম আসায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তার সম্পর্কে কিছুটা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ কিংবা বর্জন। এ দোটানার কারণে আসন্ন নির্বাচন ঘিরে বিএনপির তেমন তৎপরতা নেই বললেই চলে।
ফিরোজ আলম, শাহিন হাওলাদার, রাজ্জাক মিয়া ও সোহরাব হোসেনসহ নির্বাচনী এলাকার সাধারণ ভোটাররা জানান, আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়ন করেছে সত্য। কিন্তু  দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণের একদমই বাইরে। সাধারণ জনগণ ও খেটে খাওয়া মানুষ এ জন্য নাভিশ্বাস  পরিস্থিতি। এ ছাড়া তারা বাজার নিয়ন্ত্রণের দাবির পাশাপাশি নির্বিঘেœ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে চান বলে জানিয়েছেন।
ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খান সাইফুল্লাহ পনির জানান, আগামী নির্বাচনে নৌকায় যাতে জনগণ ভোট দেয়, সেজন্য গত সাড়ে ১৪ বছরে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা-ের প্রচার চালানো হচ্ছে। প্রত্যেক সভা-সমাবেশেই উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে সাবেক সফল শিল্পমন্ত্রী আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু সকলকে তৃণমূল পর্যায় থেকে  নেতাকর্মীদের কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী সকলে মিলে কাজ করে যাচ্ছে, আগামী নির্বাচনেও ঝালকাঠি দুটি আসনেই নৌকা প্রতীক বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। 
অন্যদিকে, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শাহাদাৎ হোসেন জানান, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বার্তা রয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে। এ কারনে আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ করা বা না করা সবকিছুই নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ওপর।

×