ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

টাঙ্গাইল-৮

আওয়ামী লীগ চায় ধরে রাখতে বিএনপি পুনরুদ্ধার

ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ০০:১৯, ১৭ আগস্ট ২০২৩

আওয়ামী লীগ চায় ধরে রাখতে বিএনপি পুনরুদ্ধার

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে টাঙ্গাইল জেলার রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে টাঙ্গাইল জেলার রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের হাওয়া বিরাজমান। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার পর জেলার আওয়ামী রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইলের কয়েকটি সংসদীয় আসনের মতো এই আসনেও এর প্রভাব বিদ্যমান।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার হিসেবে খ্যাত টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে কোনো রাজনৈতিক দলই এককভাবে টানা দীর্ঘদিন বিজয়ের সফলতা ধরে রাখতে পারেননি। আসনটি মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার হিসেবে খ্যাত থাকলেও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পাশাপাশি ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাই আসনটিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লক্ষ্য যে কোনো মূল্যে আসনটিকে ধরে রাখতে হবে। বিএনপিও এই আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আসনটিতে বিজয়ী হতে আওয়ামী লীগে মহাজোটবদ্ধ হওয়ার কথা ভাবছেন বলে দলীয় নেতাকর্মীদের সূত্রে জানা গেছে। তা ছাড়াও নির্বাচনী এলাকায় ভোটার ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝেও এ বিষয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার এ আসনটি তাঁর জন্য অস্তিত্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে এ নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছেন এই আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কারণেই এ আসনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে ভোটার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তবে কাদের সিদ্দিকী কোনো জোটভুক্ত হলে দ্বিমুখী অথবা আলাদাভাবে নির্বাচনে অংশ নিলেও ভোটের লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।  
জাতীয় সংসদের-১৩৭ টাঙ্গাইল-৮ আসনের মোট ভোটার দুই লাখ ৮৮ হাজার ১৭২ জন। সখীপুর উপজেলায় একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৭৬ হাজার ২৭৫ জন। বাসাইল উপজেলায় একটি পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়নের মোট ভোটার এক লাখ ১১ হাজার ৮৯৭ জন। 
জানা যায়, ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার সুবর্ণতলী গ্রামের অধ্যক্ষ হুমায়ুন খালিদ, ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মোর্শেদ আলী খান পন্নী, ১৯৮৬ সালে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কৃষিবিদ শওকত মোমেন শাহজাহান, ১৯৮৮ সালে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মোর্শেদ আলী খান পন্নী, ১৯৯১ সালে পঞ্চম এবং ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী হুমায়ুন খান পন্নী, ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, ১৯৯৯ সালের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কৃষিবিদ শওকত মোমেন শাহজাহান, ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের প্রতিষ্ঠিত কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ প্রার্থী বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, ২০০৮ সালে নবম এবং ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কৃষিবিদ শওকত মোমেন শাহজাহান নির্বাচিত হন। 

২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে শওকত মোমেন শাহজাহান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরই তাঁর মৃত্যু হয় এবং উপনির্বাচনে তাঁরই ছেলে অনুপম শাহজাহান জয় বিজয়ী হন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। 
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা চলছে। রাজনৈতিক সচেতন মানুষ জানান, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বেশ আগে থেকে দুই উপজেলার আনাচে-কানাচে সভা-সেমিনার ও গণসংযোগে ব্যস্ত থাকলেও গত বছরের শেষদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তমের দেখা করার পর তাদের মধ্যে উদ্বেগ ও শঙ্কা বিরাজ করছে। কাদের সিদ্দিকী কি আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটে যোগ দিচ্ছেন, না এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন- এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের ঘরে-বাইরে। 
এ নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী তাঁর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে একীভূত হওয়ার সম্ভাবনার কথা চাউর হয়েছে নির্বাচনী এলাকায়। জেলার বিভিন্ন স্থানে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভা-সমাবেশে বঙ্গবীরের বক্তব্য সে ধারণাকে পাকাপোক্ত করে। মহাজোটে একীভূত হলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ একটি আসন পেলেও তা টাঙ্গাইল-৮ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে এই আসনে দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বা তাঁর মেয়ে ব্যারিস্টার কুঁড়ি সিদ্দিকী প্রার্থী হবেন। কুঁড়ি সিদ্দিকী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রণ্টের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। 
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম এই আসন থেকে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হলে ১৯৯৯ সালে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নামে তিনি নতুন দল গঠন করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ব্যানারে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার বড় কোনো রাজনৈতিক জোটের সঙ্গে গাঁটছড়া না বাঁধলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর সঙ্গেই তাঁকে নির্বাচনে লড়তে হবে। 
তবে আগামী নির্বাচনে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম আওয়ামী লীগের সঙ্গে যাবেন এমন গুঞ্জনের কারণে কিছুটা উদ্বেগে রয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এসব বিষয়ে স্থানীয় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নেতাকর্মীরা জানায়, তাদের নেতা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তই নেবেন। তারা সেই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে এই আসনে নিজ দল থেকে এককভাবে নির্বাচন করারও পূর্ণ প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। তারা জানায়, বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্যসহ তাদের বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। দল যাকেই মনোনয়ন দেবে এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন। 
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো জোটে যাব কি না জানি না। তবে বিএনপির সঙ্গে কোনো নির্বাচনী জোটে যাব না। আমি সব সময় গণমানুষের পক্ষে বা ন্যায়সঙ্গত কারণের পক্ষে কথা বলে থাকি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলে পৃথিবীর কোথাও কোনো সরকার নেই। কিন্তু বাংলাদেশে হয়েছিল। এখন সংবিধানে নেই। এরশাদকে বাধ্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার করা হয়েছিল। রাজনীতিতে আন্দোলনের মাধ্যমে বাধ্য করতে পারলে সেখানে সবই আইন। আর না পারলে সবটাই বেআইনি। এখন দেখতে হবে বিএনপি যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনতে পারে তাহলে দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আবার হবে, আর না হলে আমার বোনের (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) অধীনেই নির্বাচন হবে- এর কোনো বিকল্প আপাতত নেই।
টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের। তিনি টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় মেয়াদের সাধারণ সম্পাদক। এবারও তিনি এ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি সুযোগ পেলেই এলাকায় আসছেন- মানুষের সুবিধা-অসুবিধার কথা শুনছেন। সভা-সমাবেশ ও সাংগঠনিক কর্মসূচিতে সরকারের উন্নয়নের বিশদ বর্ণনা দিচ্ছেন। উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকাকে বিজয়ী করতে উদ্বুদ্ধ করছেন। তাঁর সমর্থকদের দাবি- নির্বাচনে উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে একমাত্র তাঁর নেতৃত্বেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার বিজয় ধরে রাখা সম্ভব। তাই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনিই দলীয় মনোনয়ন পাবেন। এ ছাড়া তিনি এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ করে চলেছেন। 
এদিকে সখীপুর ও বাসাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে সখীপুর ও বাসাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। বাসাইল-সখীপুরের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনসহ স্থানীয় নির্বাচন ও আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনে জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের চরম আত্মীয়করণ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমপির এমন আত্মীয়করণের কারণেই সখীপুর ও বাসাইল উপজেলাতে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে পৌঁছেছে। বাসাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর ৭৩ সদস্যের নতুন কমিটিতে পূর্বের ত্যাগী ৫০ জন নেতাকে বাদ দিয়েছেন। এ ছাড়া সখীপুর ও বাসাইল এই দুই উপজেলার ইউনিয়ন, পৌর কমিটিগুলোতে অজনপ্রিয়, জনবিচ্ছিন্নদের নিয়ে এমপি জোয়াহের কমিটি দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 
এসব বিষয়ে এমপি জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের বলেন, প্রতিপক্ষরা নানা অপবাদ ছড়াবেই। সকল বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করেই ছাত্রজীবন থেকে মানুষের সেবায় নিয়োজিত রয়েছি। নেত্রীর নির্দেশে এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে তাঁকে আবারও মনোনয়ন দিলে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে সাধারণ একজন কর্মী  হিসেবে জনগণের সেবা করে যাব।
এ আসনের চারবারের এমপি কৃষিবিদ শওকত মোমেন শাহজাহানের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে তাঁরই ছেলে অনুপম শাহজাহান জয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সখীপুর-বাসাইলের ব্যাপক উন্নয়ন করেন। অনুপম শাহজাহান জয় বয়সে তরুণ ও রাজনীতিতে নবীন হলেও দল ও সরকার বিতর্কিত হয় এমন কর্মকা- থেকে নিজেকে মুক্ত রাখেন। তরুণ সমাজসেবক হিসেবে তিনি জনগণের কাছের মানুষ হিসেবে পরিগণিত। সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনুপম শাহজাহান জয় এলাকার সন্তান হিসেবে নিয়মিত প্রত্যেকটি এলাকায় আসা-যাওয়া করছেন। বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে গিয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ের কথা তুলে ধরছেন। 
এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সদস্য ও সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনুপম শাজাহান জয় বলেন, বাসাইল-সখীপুরের উন্নয়ন ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সর্বদা কাজ করে যাব। এখন এমপিদের পেছনে মানুষ ঘুরে। আর আমি এমপি নির্বাচিত হলে মানুষের পেছনে ঘুরব, তাদের সেবা ও এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাব। উন্নয়ন, আলোকিত, উন্নত শিক্ষা নগরী, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও আধুনিক বাসাইল-সখীপুর গড়াই আমার লক্ষ্য। এই দুই উপজেলার মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। যেহেতু কোনো উন্নয়নই করতে পারেননি এমপি সাহেব।

ভোটারদের আশার কোনো প্রতিফলন হয়নি। যিনি জনবান্ধব ও কর্মীদের মূল্যায়ন করবে দল তাকেই মনোনয়ন দেবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি এই দুই উপজেলাকে স্মার্ট উপজেলা উপহার দেব।
সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পরপর দুবারের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত শিকদার দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। এর আগেও দলের কাছে তিনি মনোনয়ন চেয়েছেন। মনোনয়ন পেতে তিনি দুই উপজেলাকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে শতভাগ আশাবাদী তিনি ও তাঁর অনুসারী দলীয় নেতাকর্মীরা। 
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের ভাইস-চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আতাউল মাহমুদ আগেও মনোনয়ন চেয়েছেন। তিনি নতুন সখীপুর-বাসাইল গড়ার প্রত্যয় নিয়ে দলীয় মনোনয়নের আশায় গণসংযোগ করছেন। তিনি একজন পরিচ্ছন্ন ও মেধাবী রাজনীতিক। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে এ রকম মেধাবী রাজনীতিককেই দল মনোনয়ন দেবেন বলে তাঁর অনুসারীদের দাবি। 
অপরদিকে, সখীপুর-বাসাইল উপজেলায় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে অনেকটা হতাশ স্থানীয় বিএনপি। সখীপুরে গত পৌর নির্বাচন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন এবং স্থানীয় কমিটির পদ-পদবি নিয়ে ঘরোয়া কোন্দলে বিএনপির অবস্থা জীর্ণশীর্ণ। নানা কারণে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ বিএনপির রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দাবি, সখীপুর-বাসাইলে বিএনপির নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ভোট হলে এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল ভুলে দুই উপজেলায় সম্মিলিতভাবে দলীয় প্রার্থীর জন্য কাজ করলে অবশ্যই বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হবেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খানের মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত বলে মনে করছেন তাঁর কর্মী-সমর্থকরা। 
আযম খান ছাড়াও জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন শিল্প বিষয়ক সম্পাদক ও সখীপুর উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোহাম্মদ হাবিব দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রিয়মুখ। জনগণের নানা সমস্যায় তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে অংশ নেন- সমাধানের চেষ্টা করেন। এ অবস্থানের কারণে তিনি জনগণের দোরগোড়ায় একটা জায়গা করে নিয়েছেন। তাকে মনোনয়ন দিলে তৃণমূলের ভোটে অতি সহজেই নির্বাচিত হয়ে এ আসনটি রক্ষা হতে পারে বলে তার কর্মী-সমর্থকরা মনে করেন। 
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কৃষক দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কৃষিবিদ শেখ মোহাম্মদ শফি শাওন ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন দিয়ে এলাকায় ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন।

কেন্দ্রেও তার জোর লবিং এবং সখীপুরের সন্তান হওয়ায় তিনি মনোনয়ন পেতে পারেন বলে তার অনুসারীরা মনে করেন। এ ছাড়া বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ওবায়দুল হক নাসিরও এ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে তার সমর্থিতরা জানিয়েছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির (এরশাদ) কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা কাজী আশরাফ সিদ্দিকী নিজ দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন। 
তবে সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ আসনে তিন দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে কারও জন্যই নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া সহজ হবে না। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে হবে।

×