
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে টাঙ্গাইল-৫
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের রাজনীতি জমে উঠেছে। এই আসনে সব দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা কোমর বেঁধে নেমেছে নির্বাচনী মাঠে, চালাচ্ছেন গণসংযোগ। বড় দুই দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময়, নির্বাচনী এলাকার অলিগলিতে পোস্টার ও লিফলেট সেঁটে জনগণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। সেইসঙ্গে তৃণমূল নেতাদের সমর্থন ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সন্তুষ্ট করতে লবিং করছেন।
তবে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার পর জেলার আওয়ামী রাজনীতিতে নানামুখী আলোচনা চলছে। তবে এ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ছাড়া অন্যান্য দলের প্রার্থীদের তেমন কোনো তৎপরতা এখন পর্যন্ত নেই। বড় প্রায় সব দলেই একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী মনোনয়নের আশায় নির্বাচনী মাঠে সরব রয়েছেন।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে একাদশ সংসদ পর্যন্ত কাকতালীয়ভাবে এই আসনে বিজয়ী প্রার্থীর দলই সরকার গঠন করেছে। তবে, পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান জয়লাভ করলেও পরবর্তী সময়ে তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন। সে হিসেবে টাঙ্গাইল-৫ সরকার গঠনেরই আসন হিসেবে চিহ্নিত।
১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী আব্দুল মান্নান জয়লাভ করেছিলেন। এর পর যথাক্রমে বিএনপির আব্দুর রহমান (১৯৭৯), জাতীয় পার্টির মীর মাজেদুর রহমান (১৯৮৬), জাতীয় পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান (১৯৮৮), পরবর্তীতে বিএনপি থেকে মে. জে. (অব.) মাহমুদুল হাসান (১৯৯১), বিএনপির মে. জে. (অব.) মাহমুদুল হাসান (১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি), আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান (১৯৯৬ সালের ১২ জুন), বিএনপির মে. জে. (অব.) মাহমুদুল হাসান (২০০১), জাতীয় পার্টির আবুল কাশেম (২০০৮) এবং সবশেষ ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের ছানোয়ার হোসেন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা সীমাবদ্ধ থাকার সম্ভাবনা থাকলেও দু’টি দলেই রয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। আওয়ামী লীগের কোন্দল গোপনে হলেও বিএনপির এ সমস্যা তীব্র ও প্রকট। কিছুদিন আগেও তারা আলাদা আলাদা স্থানে সভা-সমাবেশ ও দলীয় কর্মসূচি পালন করেছে। গত বছরের ১ নভেম্বর গোপণ ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিয়ে হাসানুজ্জামিল শাহীনকে সভাপতি ও ফরহাদ ইকবালকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করার পর ধীরে ধীরে নিজেদের মধ্যে সমঝোতা হতে থাকে। কর্মীদের মধ্যে সমঝোতা হলেও নেতৃত্ব পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা এখনো ফিরে আসেনি। নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব বিদ্যমান রয়েছে। এজন্য জেলা বিএনপি সম্মেলনের নয় মাসের মধ্যেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি।
এদিকে, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ গত বছরের ৭ নভেম্বর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে দীর্ঘ ৯ মাস পর গত ৭ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করা হয়েছে। মাঝের এক সময় জেলা সদরের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করত ‘খান পরিবার’। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমদ হত্যা মামলার পর থেকেই কার্যত : বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ‘খান পরিবার’ এর রাজনীতি। তবে খান পরিবারের আলোচিত চার ভাই বাদ পড়লেও তাদের অনেক অনুসারী রয়ে গেছে। তারা নানাভাবে খান পরিবারের প্রভাবকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
অপরদিকে, জেলার আওয়ামী রাজনীতিতে যোগ হয়েছেন খান পরিবারের বিপক্ষ শক্তি হিসেবে রাজপথে পরিচিত টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জামিলুর রহমান মিরন এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য এ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ মামুন। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছানোয়ার হোসেন খান পরিবারের অনুসারী হওয়ায় তাদের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছেন। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী খান পরিবারের মনমতো না হলে তাদের অনুসারীরা দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করবে অনেকেই এ রকম ধারণা পোষণ করেন।
তবে এই আসনের বর্তমান এমপি ছানোয়ার হোসেন খান পরিবারের অনুসারী হলেও তার কর্মকা-ে খান পরিবারের প্রভাব দেখা যায়নি। দশম ও একাদশ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে এমপি ছানোয়ার হোসেন ক্যাডারমুক্ত থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি আগামী নির্বাচনেও মনোনয়ন চাইবেন। খান পরিবারের অনুসারী হওয়ায় তার ক্লিন ইমেজে প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তিনি আওয়ামী রাজনীতির মূলধারায় নিজের অবস্থানকে ধরে রাখতে সচেষ্ট রয়েছেন।
এসব ব্যাপারে গত দু’বারের সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষরা বিভিন্ন অপবাদ ছড়ান। দীর্ঘদিন পর এই সদর আসন আওয়ামী লীগের হাতে এসেছে। অতীতে এখান থেকে যারাই এমপি, মন্ত্রী হয়েছেন তাদের সঙ্গে ঢাকায় গিয়ে কর্মীদের দেখা-সাক্ষাৎ করতে হয়েছে। আর বর্তমান এমপি কর্মী, সমর্থক ও জনগণের দোড়গোড়ায় গিয়ে কড়া নাড়ে। প্রতিটি কর্মকা-ে সাধারণ মানুষ আমাকে কাছে পাচ্ছে। সদর আসনের পথে প্রান্তরে আমি নিজে গিয়ে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত অনুযায়ী উন্নয়মূলক কর্মকা- করে যাচ্ছি। শতভাগ সফল হয়েছি বলব না। তবে এই উন্নয়নধারাকে অব্যাহত রাখতে আগামীতে মনোনয়ন পেলে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এই সদর আসনটি আবারও উপহার দিতে পারব।
এদিকে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ মামুন মনোনয়নের প্রত্যাশায় ব্যাপকভাবে গণসংযোগ করছেন। তিনি টাঙ্গাইলের রাজনীতিতে পরিচিত ও পুরনো মুখ। টাঙ্গাইলে ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে বর্তমান কেন্দ্রীয় যুবলীগের নেতৃত্বদানের মধ্য দিয়ে দল ও কর্মীদের কাছে পরীক্ষিত নেতা। তিনি মাঝে বেশকয়েক বছর রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে দেশ ছাড়েন। পরে দেশে এসে আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মনোনীত হন। দীর্ঘদিন টাঙ্গাইলের রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও ইদানীং টাঙ্গাইলের বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও দলীয় সকল কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। দলীয় মনোনয়ন পেতে সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরছেন। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন, গণমানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।
এ বিষয়ে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ মামুন বলেন, সাধারণ মানুষ পরিবর্তন ও উপযুক্ত প্রতিনিধি চাচ্ছে। দীর্ঘ ১৫ বছর আগে জননেত্রী শেখ হাসিনা টাঙ্গাইলে এসে একটি চারাগাছ বুনে গিয়েছিলেন, সেই চারাগাছ আমি। আমার সঙ্গে জনগন আছে। যেখানেই যাই সেখানেই মানুষ আমার কাছে আসে। জনগনের ভালবাসায় ও নেত্রীর নির্দেশে সদর উপজেলায় নিবেদিত, পরীক্ষিত মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্মার্ট টাঙ্গাইল গঠনে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। আমার বিশ্বাস দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দেবেন।
এ ছাড়া প্রার্থী হিসেবে টাঙ্গাইল পৌরসভার কয়েকবারের সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জামিলুর রহমান মিরন নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনিও টাঙ্গাইলের রাজনীতিতে পরিচিত মুখ। গত পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর থেকেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের জন্য সদর উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে ছুটে চলেছেন।
দলীয় মনোনয়নের দাবি রেখে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ক্লিন ইমেজের নেতা মির্জা মঈনুল হোসেন লিন্টু। তার পিতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপদেষ্টা সদস্য, সংবিধান প্রণেতা কমিটির সদস্য, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সম্পাদক, টাঙ্গাইল-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, টাঙ্গাইলের রাজনীতির গুরু, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মরণোত্তর একুশে পদকপ্রাপ্ত মির্জা তোফাজ্জল হোসেন মুকুল।
টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মির্জা মঈনুল হোসেন লিন্টুর রয়েছে বিশাল রাজনৈতিক ইতিহাস ও ঐতিহ্য। আওয়ামী লীগের অনেক তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দ্বন্দ্ব, বিভেদমুক্ত ও ক্লিন ইমেজের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে মির্জা মঈনুল হোসেন লিন্টুকেই সমর্থন করছেন।
এদিকে, বহুদিন থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন টাঙ্গাইলের এক সময়ের প্রতাপশালী সিদ্দিকী পরিবারের অন্যতম সদস্য মুরাদ সিদ্দিকী। তিনি এ আসনে শক্ত একজন প্রার্থী। এর আগে তিনি এ আসন থেকে বারবার সংসদ নির্বাচন করেছেন। প্রতিবারই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভোট পেয়েছেন। মুরাদ সিদ্দিকীর সমর্থকদের ধারণা তার প্রাপ্ত ভোটগুলো আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাপার বাইরের। তাকে যদি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় তা হলে দলীয় ভোটের সঙ্গে তার ভোট যুক্ত হলে তিনি অনায়াসে এমপি নির্বাচিত হবেন।
আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মুরাদ সিদ্দিকী এলাকায় সভা, সমাবেশ ও উঠান বৈঠক করছেন। সাধারণ জনগণের মাঝে রয়েছে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা। তবে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এ প্রসঙ্গে মুরাদ সিদ্দিকী বলেন, আমি আওয়ামী পরিবারের সন্তান। এর বাইরে কখনোই ছিলাম না। ১৯৯৮ সাল থেকে সদর আসনে নির্বাচনের মাঠে রয়েছি। তিনবার নির্বাচন করে সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরেছি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচনে তো আমাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। সদর উপজেলার সাধারণ মানুষ আমার সঙ্গে রয়েছে। তাদের শক্তিই আমার শক্তি। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার নেত্রী। দেশের সফল নেত্রী যদি আমাকে দলে যোগদান করার সুযোগ দেন তা হলে একজন কর্মী হিসেবে এলাকার জনগণের সেবা করার পথ সুগম হবে।
অপরদিকে, জেলা শহরে বিএনপির কোন্দল নয়া কমিটি গঠনের পর কিছুটা কমে এলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় আবারও মাথাচারা দিচ্ছে- এর বিরূপ প্রভাব নির্বাচনে পড়বে এটা স্পষ্ট। নবগঠিত জেলা বিএনপির কমিটি সম্মিলিতভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচিগুলো পালন করছে।
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী যুব দলের সভাপতি সুলতান সাউদ্দিন টুকু সদর আসন থেকে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করায় স্থানীয় নেতৃত্ব নড়েচড়ে বসেছে। সুলতান সালাউদ্দিন টুকু টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে দলীয় মনোনয়ন পান- ভেতরে ভেতরে স্থানীয় নেতৃত্ব এটা চায় না। তবে কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এ আসনের প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করেন, মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান এই আসনের হেভিওয়েট প্রার্থী, তবে তিনি বয়সের ভারে ন্যূব্জ। ইতোপূর্বে এ আসন থেকে তিনি চার বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন, মন্ত্রীও হয়েছেন। তাঁর ছেলে প্রকৌশলী রাশেদ হাসান মনোনয়ন চাইতে পারেন। গেল শীত মৌসুমে তাকে গণসংযোগ ও শীতবস্ত্র বিতরণ করতে দেখা গেছে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল এ আসনে বিএনপির শক্ত প্রার্থী। দলীয় মনোনয়ন পেতে তিনি গণসংযোগের পাশাপাশি দুস্থদের সহায়তাও করছেন। তিনি দলের ত্যাগী নেতাদের একজন। দলের সকল কর্মসূচিতে তাকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। দলের নেতাকর্মীদের বিপদে-আপদে তিনি নিজ উদ্যোগে এগিয়ে আসেন।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল বলেন, বর্তমানে আমাদের দাবি ও আন্দোলন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করা। এর মধ্য দিয়েই জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেবে ও প্রার্থীকে বেছে নেবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া নয়। উদ্দেশ্য ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া, তবেই আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। ইতোপূর্বের কোনো নির্বাচনেই আমি অংশগ্রহণ করিনি। দীর্ঘ ৩৫ বছর যাবৎ সদরে অবস্থান করে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে এই আসন খালেদা জিয়াকে উপহার দেব।
বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য খন্দকার আহসান হাবিবও এই আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। টাঙ্গাইলের সব সময়ের প্রার্থী সৈয়দ খালেদ মোস্তফা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় শহর ও গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পায়ে হেঁটে প্রচার চালাচ্ছেন, ভোট প্রার্থনা করছেন। স্বীয় প্রচারের অংশ হিসেবে তিনি নিজের হাতে ব্যানার টাঙান, দেওয়ালে চিকা মারেন, পায়ে হেটে গ্রামে গ্রামে, মহল্লায় মহল্লায় দ্বারে দ্বারে গিয়ে দোয়া ও ভোট প্রার্থনা করছেন। এ ধরণের কর্মকান্ডের মাধ্যমে তিনি সারা বছরই মানুষের কাছে ভোট প্রার্থনা করে থাকেন।
অপরদিকে, রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ও জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি জেলায় আলাদা আলাদা আহ্বায়ক সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি দেওয়ায় জেলায় জাপার রাজনীতিতে ধূ¤্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে মনোনয়ন চাইবেন ক্লিনম্যান হিসেবে পরিচিত শিল্পপতি আবুল কাশেম, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস সালাম চাকলাদার ও জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আবুল কাশেম মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। কিন্তু পুরো সময় তিনি সংসদ সদস্য থাকতে পারেননি। ঋণ সংক্রান্ত বিষয়ে দায়ের করা মামলায় তিনি সংসদ সদস্য পদ হারান। দীর্ঘদিন জেলার রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকলেও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল কাশেম মনোনয়নের প্রত্যাশায় সক্রিয় হয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে আবুল কাশেম বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জনবন্ধু জি এম কাদের আমাকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আগাম মনোনয়ন দিয়েছেন। নির্বাচনের লক্ষ্যে নেতাকর্মীদের নিয়ে মজবুত করে সংগঠনের কাজ করে যাচ্ছি। অতীতে জনগণ রেকর্ড ভঙ্গ করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করেছিলেন। আমি জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করে অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভঙ্গ করে এলাকার উন্নয়ন করেছি। যা ছিল সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত। আল্লাহ চাইলে আগামীতে তা অব্যাহত রাখতে চাই।
টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কোনো প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে না। একইভাবে জাকের পার্টি, খেলাফত মজলিশসহ ছোটখাটো দলগুলোর প্রার্থীরা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাঠে এখনও তৎপরতা শুরু করেননি। জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, জাতীয় সংসদের ১৩৪ টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৮০ হাজার ২৭৯ জন। এরমধ্যে নারী ভোটার এক লাখ ৯১ হাজার ৭৩৬ জন ও পুরুষ ভোটার এক লাখ ৮৮ হাজার ৫৪৩ জন।