
বাস উল্টে পুকুরে। ছবি : জনকন্ঠ
ঝালকাঠিতে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ১৭জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে ৩০/৩২জন। আহতদের ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ভর্তি করা হয়েছে ও কয়েকজনকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৭জন শিশু ও ৪জন নারী রয়েছে।
শনিবার (২২ জুলাই) সকাল ১০ টায় ঝালকাঠি সদর উপজেলায় বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কে গাবখান ধানসিড়ি ইউনিয়ন পরিষদ সামনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি পুকুরে পড়ে যায়। বাসটি পুকুরের পানিতে সম্পূর্ণ ডুবে যাওয়ায় নিহতরা পানিতে ডুবেই মারা গেছেন বলে ধারনা করা হচ্ছে।
আহত প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, চালক গাড়ি চালানো সময় সাইড টক করছিলেন। বাসটি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থেকে বরিশাল যাচ্ছিল। দূর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছিল। এ সময় মোঃ আল আমীন (২৬) নামে ফায়ার ফাইটার উদ্ধারকারী আহত হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে তারিক (৫৫), একই এলাকার আঃ ছালাম মোল্লা (৫০), শাহীন মোল্লা (৩০), আব্দুল্লাহ (৭) পূর্ব ভান্ডারিয়া এলাকার সুমাইয়া (৫), রহিমা(৬০), আবুল কালাম হাওলাদার(৫০), মেহেন্দীগঞ্জের রিপা মানি(৩) একই পরিবারে আইরিন (২২) রাজপুর উপজেলার নয়ন (১৬), খুশবু (১৯), খাদিজা(৫৫), ভান্ডারিয়ার রাবেয়া (৬০) সাহিবাহ আক্তার (৪৫), জাহাঙ্গির খান (২৮), কাঠালিয়ার মিতা (৪০) এদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে এবং পরিবারের কাছে পুলিশ সুরতহাল করে ময়না তদন্ত ব্যাতিত মৃতদেহ হস্তান্তর করেছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সুরত হালে এদের শরীরে কোন ধরণে আঘাতের চিহ্ন ছিল না এবং এদের চিকিৎসকদের মতে পানিতে ডুবে থাকার কারণে হয়েছে। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত ডাঃ বৈশাখী বড়াল নিশ্চিত করেছেন। যাত্রী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৭০জন যাত্রী নিয়ে বাসটি সকাল ৯ টায় ভান্ডারিয়া বাসস্টান্ড থেকে ছেড়ে আসে।
ঝালকাঠি থানার অফিসার ইনচার্জ নাসির উদ্দিন সরকার জানান, বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে পুকুরে উল্টে পরে এবং এ কারণে অনেক যাত্রী বাস থেকে সহজে উঠতে পারে নাই তারা পানিতে ডুবে মারা যায়। ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার কর্মী আল আমিন জানিয়েছেন তিনি বেশ কয়েকজনকে ডুবন্ত বাসের জানালা থেকে তুলে এনেছেন এবং এক পর্যায়ে বার বার ডুব দেয়ার কারণে সে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পরে। পরবর্তীতে ফায়ার ফাইটারকে পুকুর থেকে উদ্ধার করে তাকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ বাসে পরিবারের সাথে আসছিলেন যাত্রী আজাদ হোসনে তিনি জানান, বাস চালক সে সঠিকভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলেন না বার বার হেলপার কন্ট্রাকটার ও যাত্রিদের সাথে ভাড়া নিয়ে সাইডটক করছিলেন। বাসটি রাস্তার পাশে টার্ন করে চলে আসার মুহুর্তে সে দ্রুত ডানে স্টিয়ারিং গুরিয়ে দিলে বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে পুকুরে পরে।
এ খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম ঘটনাস্থলে যান এবং উদ্ধার কাজ তদারকি করেন। ফায়ার সার্ভিসের একাধিক পাম্প মেশিন বসিয়ে পানি অপসারণ করে লাশ উদ্ধারের নির্দেশনা দেন। পরে খবর পেয়ে বিভাগী কমিশনার মোঃ শওকত আলী, ডিআইজি মোঃ আখতারুজ্জামান, স্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগী পরিচালক ও ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডাঃ এইচ এম জহিরুল ইসলাম ডাক্তারদের নিয়ে আহত রোগীদের চিকিৎসার তত্বাবধান করেছেন। এই ঘটনায় ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মামুন শিভলীকে প্রধান করে ৫ সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি ৩ দিনে মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করবে।
ঝালকাঠি পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল জানান, পুলিশ বিভাগকে ডিআইজি নিহতদের দাফন ও সৎকারের জন্য জন প্রতি ১ লক্ষ টাকা প্রদানের ঘোষনা দিয়েছেন এবং নিহত পরিবারে কাছে তা পৌঁছে দেয়া হবে।
তিনি আরও জানান, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন মামলা করার জন্য কেহ আগ্রহী নন। তবে, নিহতদের পরিবারে পক্ষ থেকে কেহ কোন অভিযোগ না করলেও পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবেন। এই ঘটনার চালক, কনট্রাক্টর ও হেলপারদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শওকত আলী জানান, এই মুহুর্তে এই ঘটনা নিহতদের জন্য সরকারে পক্ষ থেকে ক্ষতিপুরনের সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে, যে সকল জেলার ব্যক্তি বর্গ এই ঘটনায় নিহত হয়েছেন সে সকল জেলার জেলা প্রশাসকরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল সহ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।
এস