ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

জয়পুরহাট-১

আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে একাধিক প্রার্থী

তপন কুমার খাঁ, জয়পুরহাট

প্রকাশিত: ২৩:৪২, ১৪ জুন ২০২৩

আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে একাধিক প্রার্থী

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা জয়পুরহাট

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা জয়পুরহাট। খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলায় আলু, ধান, লতিকচু, মুরগি এবং নানা সবজির জন্য জয়পুরহাট জেলা অধিক পরিচিত। আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এখনো হয়নি। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের চলছে গ্রামে গ্রামে নির্বাচনী প্রস্তুতি, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। 
জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি নিয়ে গঠিত জয়পুরহাট-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট সামছুল আলম দুদু। তিনি এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি আগামীদিনে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আবারও নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্য নেতারাও আলাদাভাবেই জনসংযোগ করছেন।
অপরদিকে বিএনপির নেতৃবৃন্দকেও বিভিন্ন স্থানে সভা, সমাবেশ উঠোন বৈঠক করতে দেখা যাচ্ছে। যদিও বিএনপি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন করতে যাবে না বলছে। তারা বলছে শেখ হাসিনা সরকারকে সরিয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলেই নির্বাচনে যাব। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তারা নিজেদের ভোট ব্যাংক ধরে রাখতে ভোটারদের কাছে ধর্না দিচ্ছে। 
আওয়ামী লীগ, বিএনপি ছাড়া এই নির্বাচনী এলাকায় অন্য দলের নির্বাচন করার সক্ষমতা মাঠপর্যায় পর্যাপ্ত নেই বলে বর্তমানে দৃশ্যমান। যদিও জাতীয় পার্টির জয়পুরহাট-১ সংসদীয় আসনে জয়পুরহাট সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির জেলা সাধারণ সম্পাদক তিতাস মোস্তফার পরিচিতি এবং নির্বাচন করার প্রস্তুতি আছে।
জয়পুরহাট জেলায় দুইটি সংসদীয় এলাকা। জয়পুরহাট পাঁচবিবি নিয়ে জয়পুরহাট-১ এবং আক্কেলপুর, কালাই, ক্ষেতলাল উপজেলা নিয়ে জয়পুরহাট-২ সংসদীয় এলাকা। ৫টি উপজেলা, ৫টি পৌরসভা, ৩২টি ইউনিয়ন নিয়ে দুইটি সংসদীয় আসন। জয়পুরহাট সদর এবং পাঁচবিবি উপজেলা নিয়ে জয়পুরহাট-১ সংসদীয় আসন। এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৯ হাজার ২৪৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৯ হাজার ১৬০ জন এবং মহিলা ভোটার ২ লাখ ৮৫ জন। 
এই আসনে ১৯৯১ সালে বিএনপি থেকে গোলাম রব্বানী, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে দুইবার বিএনপির আব্দুল আলীম, ২০০৮ সালে বিএনপির মোজাহার আলী প্রধান, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের তৎকালীন জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুল আলম দুদু জয়লাভ করেন। এই আসনে ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ছয়টি সংসদ নির্বাচনে চারবার বিএনপি ও দুইবার আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচিত হয়। 
এই ছয়টি নির্বাচনী সময়কালে জয়পুরহাট সদর উপজেলা ও পাঁচবিবি উপজেলার কয়েকগুণ বেশি উন্নয়ন হয়েছে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সংসদ সদস্যর হাত ধরে। জেলার সড়ক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন, নতুন নতুন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে নির্বাচনী এলাকায়। যা বর্তমান সরকারের প্রতি এলাকাবাসী আস্থা বাড়িয়ে দিয়েছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকুক এই প্রত্যাশা এই দুই উপজেলাকে নিয়ে গঠিত সংসদীয় এলাকাবাসীর। 
এই আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সামসুল আলম দুদু ছাড়াও সাবেক জেলা সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক, বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম সোলায়মান আলী, আক্কেলপুর উপজেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বার সমিতির নবমবারের সভাপতি, জয়পুরহাট প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট নৃপেন্দ্রনাথ মণ্ডল, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জয়পুরহাট জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত আব্বাস আলী মণ্ডলের পুত্র আরিফুর রহমান রকেট, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের মূল সংগঠক ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়পুরহাট ডিগ্রি কলেজের ছাত্র সংসদের জিএস শহীদ মহাতাব উদ্দিনের পুত্র জাকির হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক ও জয়পুরহাট পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, পাঁচবিবি পৌরসভার মেয়র ও পাঁচবিবি সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সংগঠক হাবিবুর রহমান হাবিব। 
এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সামছুল আলম দুদু জানান, বিগত দুটি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় জয়পুরহাট ও পাঁচবিবির নানা উন্নয়নমুখী কর্মকা- সম্পন্ন করেছি এবং আরও উন্নয়ন কর্ম চলমান রয়েছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে এ আসনের উন্নয়নে আমি আবারও নির্বাচন করে জয়ী হতে চাই। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে অবশ্যই আমি দলের ঘরে বিজয়ের ফসল তুলে দেব।
অপরদিকে, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য যুদ্ধাপরাধের দায়ে দ-িত হয়ে কারাগারে থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী গোলাম রব্বানী এবং জেলা বিএনপির সাবেক জেলা সভাপতি মোজাহার আলী প্রধানের মৃত্যুর পর দলটির নির্বাচনের মাঠে এখন পরিচিত মুখ জয়পুরহাট পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও মেয়র, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ ফজলুর রহমান। তিনি গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু প্রতিপক্ষের একটি বিরোধীতার কারণে তিনি নির্বাচন করতে পারেন নাই। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে তিনি প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী। 
দলের অপর প্রার্থী হবেন বিশিষ্ট শিল্পপতি জেলা বিএনপির প্রবীণ নেতা মমতাজ উদ্দিন ম-লের পুত্র জেলা বিএনপির সদস্য জয়পুরহাট চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি শিল্পপতি মো. আনোয়ারুল হক। তিনি বিএনপির নানা কর্মকা-ে সক্রিয় রয়েছেন বলে জানান। দল নির্বাচন করলে তিনি প্রার্থিতা চাইবেন। এছাড়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মোজাহার আলী প্রধানের পুত্র জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক রানা প্রধানও প্রার্থিতা চাইবেন বলে জানা যায়। 
এদিকে, গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জেলা সম্পাদক তিতাস মোস্তফা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এবারের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দল অংশ নিলে তিনি প্রার্থী হবেন। দল তাকে মনোনয়ন দিয়েছে এমন সিদ্ধান্ত আছে বলে তিনি জানান। এছাড়া জামায়াতে ইসলাম একইভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলন করছে। জামায়াতের নির্বাচনে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করা হয়েছে এমন কথা জানিয়ে জেলা জামায়াতের আমির ডা. ফজলুর রহমান বলেন, যদি আদালতে সুরাহা না হয় তবে জামায়াত তো দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারবে না। সেখানে স্বতন্ত্র হিসেবে অন্য প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে। অথবা অন্য কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নির্বাচন করবে। 
তিনি জানান, জামায়াতের কেন্দ্রীয় সুরার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জয়পুরহাট-১ আসনে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমি জয়পুরহাট পাঁচবিবি নির্বাচনী এলাকায় দলের হয়ে বিভিন্ন সভা সমাবেশ করছি। 
অপরদিকে কমিউনিস্ট পার্টির জেলা কমিটির সভাপতি দেওয়ান মো. বদিউজ্জামান বলেন, যদি দল নির্বাচন করে তবে জয়পুরহাট-১ সংসদীয় আসনে জেলা সভাপতি শ্রমিক নেতা হিসেবে আমি এবং সাধারণ সম্পাদক রমজানুজ্জামান প্রার্থিতা চাইব। জয়পুরহাট-১ সংসদীয় এলাকায় প্রার্থী মনোনয়নে দল সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে ভোটাররা খুশি হবে বলে মাঠ পর্যায়ের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে। 

×