ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

১৭ জেলায় বিএনপির সমাবেশ ॥ সংঘর্ষ, আহত ৮

কেরানীগঞ্জে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৪০, ২৬ মে ২০২৩

কেরানীগঞ্জে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর

জিনজিরায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে শুক্রবার ঢাকাসহ ১৭ সাংগঠনিক জেলায় জনসমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। এদিকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে বিএনপি নেতা নিপুন রায় চৌধুরীসহ ৮ জন আহত হয়। পরে বিএনপি নেতাকর্মীরা স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা করে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার শহীদ ফারুক সড়কে জনসমাবেশ কর্মসূচি পালন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ আগুন নিয়ে খেলছে।

শুক্রবার বেলা ১১টায় ঢাকা জেলা বিএনপি জিনজিরায় জনসমাবেশ আয়োজন করে। একপর্যায়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা জেলা সাধারণ সম্পাদক নিপুন রায়সহ ৮ জন আহত হয়। নিপুন রায়কে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাকর্মীরা স্থানীয় আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর করে। সংঘর্ষের পরও ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে জনসমাবেশ করে বিএনপি। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
হামলার অভিযোগ করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোজাদ্দেদ আলী বাবু সাংবাদিকদের জানান, জনসমাবেশ চলাকালে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল মারতে থাকে। এ সময় নিপুন রায়সহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। 
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক সাংবাদিকদের জানান, আওয়ামী লীগের হামলায় নিপুণ রায়সহ বেশ ক’জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বিএনপির সমাবেশের ওপর হামলা করলেও পুলিশ প্রথমে নীরব ভূমিকা পালন করে। তারা বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। যদিও পুলিশ পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। হামলায় ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায়ের মাথায় বেশ কয়েকটি সেলাই করতে হয়েছে। তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এদিকে ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীর নেতৃত্বে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ে হামলা করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক  ম ই মামুন। তিনি জানান, শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। এতে ১৫ জন আহত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বিএনপি নেতাকর্মীরা সভা শেষ করে যাওয়ার সময় আওয়ামী লীগ অফিসে ইটপাটকেল  ছোড়ে এবং  অফিসে ঢুকে আমাদের লোকদের ওপর হামলা করে। এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজও আছে আমার কাছে। সেখানে দেখা যায় নিপুণ রায়সহ অন্যান্যরা ইটপাটকেল ছুড়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছেন।
এদিকে কেরানীগঞ্জে বিএনপির জনসমাবেশে হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার বেলা ২টার দিকে  নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে দলটির নেতাকর্মীরা। এ মিছিলে নেতৃত্ব দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। 
মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে রুহুল কবির রিজভী বলেন, কেরানীগঞ্জে পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যে বিএনপির শান্তিপূর্ণ জনসমাবেশে হামলা করা হয়েছে। এই হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, হামলা করে বিএনপির গণতান্ত্রিক আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে দেশব্যাপী যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে সে আন্দোলন আরও তীব্র হবে। বর্তমান সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবশ্যই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে। 
মিছিলে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, যুবদলের কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক পার্থ দেব ম-ল, ছাত্রদলের  সাবেক সহসভাপতি ওমর ফারুক কাওসার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লা প্রমুখ। 
যাত্রাবাড়ীর জনসমাবেশে রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা যদি বলে তারা পশ্চিম দিক থেকে এসেছে বুঝবেন যে দক্ষিণ থেকে এসেছে। যদি বলে ট্রেনে এসেছে ধরে নিবেন তারা বাসে এসেছে। কারণ তাদের কথার কোনো মিল নেই। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগ। আন্দোলন দমানো নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের মাঠে নেমে বিএনপির হাত-পা ভেঙে দেওয়ার কথা বলেছেন। সেজন্যই তারা কেরানীগঞ্জে দলীয় ক্যাডার দিয়ে হামলা চালিয়েছে বিএনপির সংগ্রামী নেত্রী ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুন রায় চৌধুরীর ওপর। তার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। 
রিজভী বলেন, আসলে তাদের উদ্দেশ্য- হাত-পা নয়; মাথায় আঘাত করা, বিএনপি ও বিরোধীদল শূন্য করা, যাতে তাদের পদত্যাগের আওয়াজ না ওঠে। তারা নিপীড়ন-নির্যাতন করে গলার কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করতে চায়। তাদের উদ্দেশ্য অমানবিক ও অমানসিক। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন- কেরানীগঞ্জে নাকি বিএনপি আক্রমন করেছে? তা হলে নিপুন হাসপাতালে কেন? তারা আগুন নিয়ে খেলছে। এই আগুনেই পুড়ে ছারখার হবে আওয়ামী লীগ।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক লিটন মাহমুদের পরিচালনায় জনসমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ, রকিবুল ইসলাম বকুল, আজিজুল বারী হেলাল, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নেতা নবীউল্লাহ নবী, ইউনুস মৃধা, তানভীর আহমেদ রবিন, আ ন ম সাইফুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সভাপতি  সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু প্রমুখ। 
আজ ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের প্রতিবাদ সমাবেশ ॥ ১০ দফা দাবিতে আজ শনিবার রাজধানীতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের প্রতিবাদ সমাবেশ। বেলা আড়াইটায় নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম। 
খাগড়াছড়ি ॥ খাগড়াছড়িতে আওয়ামীলীগ-বিএনপি কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় উভয়পক্ষের ১৫ জন আহত হয়েছেন। এ সময় বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল নোমানের গাড়ির কাঁচ ভাঙচুর করা হয়েছে । শহরের কলেজ রোড এলাকায় নারিকেল বাগানে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ এ ঘটনার জন্য পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছেন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আবছার জানান, পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসা কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমানকে গাড়িবহর যোগে নিয়ে আসার সময় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যানের গাড়িতেও হামলা চালানো হয়। হামলায় তিনি রক্ষা পেলেও জেলা বিএনপির সহসভাপতি ক্ষেত্র মোহন রোয়াজাসহ  পাঁচজন আহত হয়েছেন।

অন্যদিকে, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কেএমএইচ ইসমাইল হোসেন বলেন, বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের প্রতিবাদে পূর্ব নির্ধারিত শান্তি সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীরা অফিসে বিশ্রাম নেওয়ার সময় বিএনপির গাড়িবহর থেকে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের দিকে বিএনপির উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীরা উস্কানিমূলকভাবে ইট ও পাটকেল ছুড়তে থাকে। এতে করে উভয় দলের মধ্যে  ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে আমাদের ১০ জন কর্মী আহত হয়েছেন।
পুলিশ সুপার নাইমুল হক জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে উভয়পক্ষের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।

×