ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৪ মার্চ ২০২৩, ৯ চৈত্র ১৪২৯

monarchmart
monarchmart

পিঠা পুলির আয়োজনে উদ্যোক্তা সোনিয়া

নাজনীন বেগম

প্রকাশিত: ০২:২৪, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

পিঠা পুলির আয়োজনে উদ্যোক্তা সোনিয়া

দিনাজপুরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া সোনিয়া আকতার বড় হয়েছেন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য এবং স্বাধীনভাবে

দিনাজপুরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া সোনিয়া আকতার বড় হয়েছেন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য এবং স্বাধীনভাবে। বাবা নাজমুল হক একজন ব্যবসায়ী। মা তাহমিনা গৃহিণী। ১ ভাই ১ বোন এবং বাবা-মার সংসার ছাড়াও নিজেকে গড়ে তুলেছেন বিশাল এক একান্নবর্তী পরিবারে। অর্থাৎ দাদা, দাদি, চাচা, চাচি ও ফুফুদের নিকট সান্নিধ্যে তৈরি হওয়া সোনিয়া এখনো মনে করেনÑ যৌথ পরিবারের মতো নির্মল আনন্দ, সাহচর্য আর ভালো-মন্দের ফারাক বুঝতে এর চেয়ে দামি আর কিছুই হতে পারে না। মামার বাড়ির সঙ্গেও ছিল এক সুদৃঢ় বন্ধনের অনবদ্য মিলনমেলা।
দিনাজপুর কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হয়েছেন রংপুর কারমাইকেল কলেজে। সেখান থেকে সমাজবিজ্ঞানে ¯œাতক (সম্মান) ¯œাতকোত্তরে উত্তীর্ণ হয়ে নিজের শিক্ষা কার্যক্রমকে চালিয়ে নিয়েছেন। না, রান্নার প্রতি কোনো আগ্রহ কিংবা উৎসাহ কখনোই ছিল না। তবে মায়ের হাতের সুস্বাদু রান্না খেতে ভালোই বাসতেন এই আধুনিক রন্ধন শিল্পী। দশ বছর বয়স থেকে সংগীতের চর্চা করা এই সাংস্কৃতিক বোধিসত্তা সব ধরনের গানের তালিম নিলেও পছন্দের তালিকায় স্থান দিয়েছেন সবার উপরে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেই।

ঘরণি হলেন ল্যাবএইডের আইকনিক প্রশাসন কর্মকর্তা সোহেল রানার। আর রান্না করার আগ্রহ আর উদ্দীপনা তৈরি হতে থাকে স্বামীর সংসারে এসেই। স্বামী নাকি ভোজন রসিক বলতে যা বুঝায় তাই। সঙ্গতকারণে দায়বদ্ধতার তাগিদ থেকে রান্না-বান্নার যোগাড় শুরু করা জীবনের এক অভাবনীয় পালাক্রম। প্রথমে হতচকিত, জড়সড়ো হয়ে রান্না সামলানোর নতুন অভিজ্ঞতায় একেবারে চমকে ওঠার মতোই। সেখানে ভাত, ডাল, মাছ, মাংস, তরকারি রান্না করেই অনভ্যাসের হাতকে অভ্যাসের জায়গায় নিয়ে আসার স্মৃতি আজ তাকে ভাবিয়ে তোলে। পরিবারের জন্য রান্নার হাত পাকা করার আগেই প্রশংসার ডালিতে নিজেকে ধন্য মনে করেই এগিয়ে যেতে থাকেন এই রন্ধন ব্যক্তিত্ব।

প্রথমেই নজর দিলেন গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠা পুলির বৈচিত্র্যিক সম্ভারের দিকে। সঙ্গতকারণেই পিঠা পুলিকে নিয়ে তার রন্ধন উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে চলা পরবর্তীতে অন্যান্য স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু খাবার নিয়ে একপ্রকার সমৃদ্ধ করাই বলা চলে। পারিবারিক সহযোগিতা, প্রশংসা আর শুভেচ্ছার ডালি নিয়ে সামনের পথ চলা এখনো নিরন্তর। বিশেষ করে দিনাজপুরের কন্যা সোনিয়া তার অঞ্চলের দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা পিঠার বহুবিধ সম্ভারের দিকেই প্রথম নজর দিলেন। সেখানে ভাঁপা, চিতই, পাটিসাপটা, দুধ পুলি, মাংসপুলি, ঝাল পোয়া সবই যেন আবহমান বাংলার শাশ^ত পিঠা পুলির উৎসব। নবান্নের  সোঁদা গন্ধে গ্রামবাংলার বিভিন্ন অঞ্চল, যখন মেতে ওঠে সেই সুবর্ণ সময়েই পিঠা তার সার্বিক আবেদন আর আয়োজনে সংশ্লিষ্ট মানুষের যাপিত জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে যায়। কথা প্রসঙ্গে বলেই ফেললেন আসলে আমাদের দেশটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিই শুধু নয় বৈষয়িক সম্পদেও এক অনন্য উৎপাদন সক্ষমতায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে সেই পুরাকাল থেকেই। নদীমাতৃক বাংলার উর্বর পলিমাটির সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে দেশটার যে অনন্য সক্ষমতা সেটা ভিনদেশী পর্যটক কিংবা স্বদেশীয় কবি সাহিত্যিকদের সৃজন দ্যোতনার অনুষঙ্গ হতে খুব বেশি সময়ও লাগেনি। তাই পিঠা পুলি ও বাংলার মাটি আর মানুষের সঙ্গে এক অবিচ্ছিন্ন সূতায় গাঁথা অনন্য সৌধ। তবে আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশের ঐতিহ্যিক বৈভব নিজস্ব সীমানায় আর আটকেও নেই। আন্তর্জাতিক বলয়েও তার স্বাচ্ছন্দ্য গতিবিধিতে বিশ^সভাকেও নিজের কাছে নিয়ে এসেছে। আমাদের বাণিজ্যিক পণ্য যেমন বিদেশে রফতানি হয় তেমনি ভিন দেশের খাবারের আয়োজনও আমাদের নজর কাড়ে। তেমন বিবেচনায় সোনিয়া আকতার বিদেশী বৈচিত্র্যিক খাবারের আয়োজন করে তার উদ্যোক্তার পরিসরকে অনেকখানি সম্প্রসারিতও করেছেন। সোনিয়ার একটা বিশেষ খাবার আচারে চিকেন খিচুড়ি যা ভারতীয় উপাদেয় রান্নার একটি অনন্য আয়োজন। তেমন খিচুড়ি রান্না করে অসংখ্য গ্রাহক ও ভোজন রসিকের আগ্রহ জাগাতে পেরেছেন। দেশীয় খাবারের পাশাপাশি চাইনিজ, ইতালিয়ান ফুডও তিনি রান্না করে গ্রাহকদের নজর কেড়েছেন। তবে প্রযুক্তির বিশে^ তার পেইজ থাকলেও সরাসরি উপস্থিত অর্ডারই বেশি পান। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করেন গণশিল্পী ফকির আলমগীরের ছোট ভাই ফকির সিরাজের বাসায় সকাল দুপুর নিয়মিত খাবার পাঠানো হয় তাদের অর্ডারের কারণে। অনলাইন পেজটির নাম ভোজন বিলাস। তিন পুত্র সন্তানের জননী সোনিয়ার একটি কন্যা শিশুর আকাক্সক্ষা নাকি সব সময়ই ভেতরের বোধে জিইয়ে আছে। রান্না সংক্রান্ত আরও একটি বিরাট কর্মযোগের সঙ্গে তিনি জড়িত প্রাতিষ্ঠানিকভাবে। ৪৮০০ নারী উদ্যোক্তা নিয়ে ‘উড়ান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের পদে অভিষিক্ত এই বিশিষ্ট রন্ধন শিল্পী। এই সংগঠনের ২৫০ নারী উদ্যোক্তা নিয়ে তিনি রীতিমতো কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে রান্নাবান্নার আয়োজনে। অর্থাৎ অনেককে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রেরণা উদ্বুদ্ধ করাই নয় তাদেরকে এগিয়ে নিতেও সাহায্য সহযোগিতায় কার্পণ্যই করছেন না। গ্রাম বাংলার বুটিক ও কারুশিল্প নিয়েও এই পাকা রাঁধুনি উদ্যোক্তার আসনে অধিষ্ঠিত। যেখানে ঐতিহ্যিক ব্লক বুটিক ও কারুশিল্পের নান্দনিক ছোঁয়ায় গ্রাহকদের আকর্ষণ করতেও নিরবধি কাজ করে যাচ্ছেন। সেখানে বেডশিড, থ্রিপিস, ফতুয়া এমনকি টাঙ্গাইল শাড়ির বস্ত্র সম্ভারও তার হাত দিয়ে আগ্রহী গ্রাহকদের কাছে চলে যাচ্ছে। 

monarchmart
monarchmart

শীর্ষ সংবাদ: