ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশসহ ১২০ দেশকে নিয়ে মহাসম্মেলন করবে ভারত

জনকণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৮:৪০, ৭ জানুয়ারি ২০২৩

বাংলাদেশসহ ১২০ দেশকে নিয়ে মহাসম্মেলন করবে ভারত

ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ’ শীর্ষক সম্মেলন

নতুন বছরের শুরুতেই এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশগুলিকে নিয়ে মহাসম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে নয়াদিল্লি। আগামী ১২ এবং ১৩ জানুয়ারি ভার্চুয়াল মাধ্যমে এই সম্মেলনে অংশ গ্রহণের জন্য ১২০টিরও বেশি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রিতদের মধ্যে রাষ্ট্রপ্রধানদের পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রীও রয়েছে। বাংলাদেশের মন্ত্রী ও কর্মকর্তারাও এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন বলে কূটনীতিক সূত্রে জানা গেছে। 

অতিমারি এবং তার ক্ষত, ইউক্রেন যুদ্ধের আন্তর্জাতিক প্রভাব, খাদ্য, সার এবং জ্বালানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, ঋণের বোঝা, মুল্যবৃদ্ধির মতো বিষয়গুলি নিয়ে অধিবেশন হবে। উদ্বোধনী বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এছাড়া কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সিতারামন এবং বিদেশমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর উপস্থিত থাকবেন।

‘ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ’ শীর্ষক এই সম্মেলনের কথা ঘোষণা করে বিদেশ সচিব বিনয় কোয়াত্রা বলেন, নিজেদের উদ্দেশ্যকে চিহ্নিত করে সার্বিক ঐকমত্য গড়ে তোলাই লক্ষ্য। সমস্ত উন্নয়নশীল দেশগুলিকে এক মঞ্চে এনে বিভিন্ন বিষয়ে অগ্রাধিকার ও চলার পথ ভাগাভাগি করে নিতে চাইছি আমরা। তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ, সব কা বিশ্বাস এবং সব কা প্রয়াস’ নীতির সঙ্গে এই উদ্যোগ যুক্ত। ভারতের সনাতন নীতি, বসুধৈব কুটুম্বকম-এর দর্শনকেও মাথায় রাখছে কেন্দ্রীয় সরকার।

জি-২০-র গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে ওই গোষ্ঠীর বাইরেরদেশগুলির সংযোগ ঘটানোরও চেষ্টা করা হবে আসন্ন সম্মেলনে। কোয়াত্রার কথায়, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যে সব দেশ উন্নয়নশীল এবং পিছনে পড়ে রয়েছে, তাদের কথা সব সময় শোনা যায় না। এই সম্মেলনে একটি অধিবেশন রাখা হবে ওই গোষ্ঠীর বাইরের দেশগুলির পরামর্শ শোনার জন্য। ফলে যারা ওই গোষ্ঠীর সদস্য নয়, বিশ্ব ব্যবস্থা এবং বাণিজ্য নীতি নিয়ে তাদের মতামতও জানার সুযোগ থাকবে। তা আমরা জি-২০ মঞ্চে পৌঁছে দেব। কোন কোন দেশ এই সম্মেলনে যোগ দেবে, তা এখনও নির্দিষ্ট হয়নি।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, শীর্ষ সম্মেলনে দশটি অধিবেশনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ জানুয়ারি চারটি অধিবেশন এবং ১৩ জানুয়ারি ছয়টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি অধিবেশনে ১০-২০টি দেশের নেতা/মন্ত্রীদের অংশগ্রহণের আশা করছে ভারত।

সম্মেলনে উদ্বোধনী ও সমাপনী অধিবেশনে রাষ্ট্রপ্রধান/সরকার পর্যায়ে এবং প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত থাকবেন। উদ্বোধনী নেতাদের অধিবেশনের মূল বিষয়বস্তু হলো ভয়েস অফ গ্লোবাল সাউথ - মানব-কেন্দ্রিক উন্নয়নের জন্য এবং সমাপনী নেতাদের অধিবেশনের বিষয় হল উদ্দেশ্যের কণ্ঠস্বরের ঐক্য। আটটি মন্ত্রী পর্যায়ের অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী ১২০টি দেশের অর্থ, পরিবেশ, পররাষ্ট্র, জ্বালানি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বেছে নেওয়া হয়েছে। অধিবেশনে প্রতিটি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত আলাদা আলাদা বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হয়েছে।

সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীদের অধিবেশনে জনগণকেন্দ্রিক উন্নয়নে অর্থায়ন, পরিবেশ মন্ত্রীদের অধিবেশনে পরিবেশ বান্ধব লাইফস্টাইল (লাইফ) এর সাথে বৃদ্ধির ভারসাম্য বজায় রাখা, পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের অধিবেশনে গ্লোবাল সাউথের অগ্রাধিকার - একটি উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করা, জ্বালানি মন্ত্রীদের অধিবেশন শক্তি নিরাপত্তা ও উন্নয়ন- সমৃদ্ধির রোডম্যাপ, স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের অধিবেশন স্থিতিস্থাপক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহযোগিতা, শিক্ষামন্ত্রীদের অধিবেশন মানব সম্পদ উন্নয়ন এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি, বাণিজ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রীদের অধিবেশন, গ্লে¬াবাল সাউথ-বাণিজ্য, প্রযুক্তি, পর্যটন এবং সম্পদে উন্নয়নশীল সমন্বয় বিষয়ক আলোচনা উত্থাপন করা হয়েছে। 

আগামী ২০২৩ সালের ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২০ দেশের অর্থনৈতিক জোট জি-২০ এর বার্ষিক সম্মেলন। সেই আয়োজনে অতিথি হিসেবে অংশ নেবে বাংলাদেশসহ ৮টি দেশ। সম্মেলনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে ভারত। মূলত ভারতের আমন্ত্রণেই বাংলাদেশ সদস্য দেশ না হলেও সম্মেলনে অংশ নেবে। জি-২০ সম্মেলনের আগে ‘ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ’ নামের ভারতের এই মহাসম্মেলন উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।

কূটনীতিক সূত্রে জানা গেছে, জি-২০ দেশ বিশ্বের অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তা সংস্থা। সংস্থাটির বার্ষিক সম্মেলনের আগে ১২০টি দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে মহা সম্মেলনে অতিমারি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু সংকট ও জ্বালানি সরবরাহের ঘাটতিসহ নানা ইস্যুতে আলোচনা এবং সুপারিশগুলো জি-২০ সম্মেলনে উত্থাপন করা হবে। তাই চলতি মাসের শুরুতে ভারতের আয়োজিত মহাসম্মেলনটি উন্নয়নশীল দেশ এবং অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী জি-২০ দেশগুলোর মেলবদ্ধন রচনা করবে।
উল্লেখ্য, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির ২০টি দেশের জোট জি-২০ অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তা সংস্থা। যারা বৈশ্বিক জিডিপির ৮৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বৈশ্বিক বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশও নিয়ন্ত্রণ করে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ বাস করে এ জোটভুক্ত দেশগুলিতে। জি-২০ জোটের সদস্য দেশগুলো হচ্ছে, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

 

অপূর্ব

সম্পর্কিত বিষয়:

×