ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অপচিকিৎসায় ছেলের মৃত্যু, বিচারের দাবিতে ঘুরছেন মা

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট 

প্রকাশিত: ২০:৫০, ৬ ডিসেম্বর ২০২২

অপচিকিৎসায় ছেলের মৃত্যু, বিচারের দাবিতে ঘুরছেন মা

বিচারের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অসহায় মা।

বাগেরহাটে কথিত কবিরাজের অপচিকিৎসায় ছেলের মৃত্যুর বিচারের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মোরশেদা বেগম মনি নামের অসহায় এক মা। সিভিল সার্জন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে বিচার না পেয়ে অবশেষে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন তিনি। আদালত সিআইডিকে মামলাটির তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদান করতে বলেছেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, মোরেলগঞ্জ উপজেলার চিংড়াখালী ইউনিয়নের কাছিকাটা এলাকার রেজাউল করিমের ছেলে মো. সাকিবকে ২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর কচুয়া উপজেলার সাইনবোর্ড বাজারের কবিরাজ শাহজাহান শেখের কাছে নিতে যায়। কবিরাজ সাকিবকে বিভিন্ন রকমের বড় রোগের কথা বলে ভয়ভীতি দেখায়। সাকিবের নাকের ভেতরে সাইকেলের স্পোক ঢুকিয়ে এসিড জাতীয় এক ধরণের তরল পদার্থ ঢেলে দেয়। পরে বোতলে ভরা তার নিজের তৈরি কিছু তরল ঔষধ ও বড়ি খেতে দেয়। 

চিকিৎসাবাবদ নগদ তিন হাজার টাকা গ্রহন করেন সাকিবের মা মোসা. মোরশেদা বেগমের কাছ থেকে। কবিরাজের চিকিৎসায় সাকিবের সুস্থ্য না হয়ে আরও বেশি অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে অনেক বেশি অসুস্থ্য হয়ে পড়লে সাকিবকে গত ৭ জানুয়ারি বাগেরহাটে ডা. আব্দুল মান্নানের কাছে নেয় তার পরিবার। পরে বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা জানান লোহার সিক দিয়ে গুতানোর ফলে সাকিবের নাকের পর্দা ফুটো হয়ে গেছে। যার ফলে সাকিবের নাক ও ব্রেনে ইনফেকশন হয়ে গেছে। পরবর্তীতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা করানোর পর চলতি বছরের ২৭ মার্চ বাড়ি থেকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সাকিব মারা যায়।

সন্তান হারা মা মোরশেদা বেগম মনি বলেন, কবিরাজের অপচিকিৎসায় আমার ছেলে গুরুত্বর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে গত ২০ ফেব্রুয়ারি কবিরাজ শাহজাহান শেখের বিরুদ্ধে বাগেরহাট সিভিল সার্জনের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। এক মাসেও কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে, আমার ছেলে মারা যাওয়ার একদিন পরে গত ২৮ মার্চ কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে তদন্ত পূর্বক সাতদিনের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন সিভিল সার্জন। 
তিনি বলেন, সিভিল সার্জনের আদেশের প্রেক্ষিতে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তদন্ত কমিটি গঠন করেন। পরে গত ১৪ আগস্ট কবিরাজ শাহজাহান শেখের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার মাধ্যমে রোগী মারা যাওয়ার ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া, অতিদ্রুত এবং চিরতরে শাহজাহান শেখের অপচিকিৎসা কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ অভিযোগকারী ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেন ওই তদন্ত কমিটি। পরবর্তীতে হত ২১ আগস্ট সিভিল সার্জন কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় কবিরাজ শাহজাহান শেখ এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। কিন্তু সিভিল সার্জনের লিখিত আদেশের প্রায় সাড়ে তিন মাস পার হয়ে গেলেও কবিরাজের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি স্বাস্থ্য বিভাগ বা পুলিশ প্রশাসন। উপরন্তু কবিরাজ শাহজাহান শেখ আমাকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছে। এমনকি অভিযোগ প্রত্যাহার না করলে আমাকে লোক দিয়ে মেরে ফেলারও হুমকী দিয়েছে। বিচারের দাবিতে আমি বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছি।

তিনি আরও বলেন, কবিরাজ শাহজাহানের অপচিকিৎসার কারণে আমার ছেলের পেছনে দুই লক্ষ টাকার অধিক ব্যয় হয়েছে। আমি যেকোন মূল্যে আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।

বাদী পক্ষের আইনজীবী এ্যাড. লিয়াকত আলী খান বলেন, আদালত মোসা. মোরশেদা বেগম মনির আবেদন আমলে নিয়ে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেষ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত কবিরাজ শাহজাহান বলেন, যেহেতু তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। বিষয়টি আইনগতভাবে জবাব দিব।

বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. মো. জালাল উদ্দিন বলেন, মোরশেদা বেগম মনির অভিযোগের ভিত্তিতে কবিরাজের দোকানটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কবিরাজের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

 

এসএইচ

সম্পর্কিত বিষয়:

×